Thank you for trying Sticky AMP!!

শিরোপা ছাড়া ব্রাজিলীয়দের সন্তুষ্ট করা যাবে না

তিতে
>বাজতে শুরু করেছে বিশ্বকাপের বাঁশি। শুরু হয়ে গেছে ক্ষণগণনা। প্রথম আলোতেও শুরু হয়েছে বিশেষ আয়োজন। বিশ্বকাপ নিয়ে বিশ্বসেরা ৩০ জন ফুটবলার ও কোচের বিশেষ সাক্ষাৎকার ধারাবাহিকভাবে ছাপা হচ্ছে বাংলাদেশে শুধুই প্রথম আলোয়।


এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। আদেনর লিওনার্দো বাচ্চি, সংক্ষেপে ‘তিতে’ যখন ব্রাজিলের কোচ হলেন, নেইমার-কুতিনহোরা বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে তখন রীতিমতো ধুঁকছিলেন। তিতের অধীনে সর্বশেষ দুই বছরে ১৯ ম্যাচে মাত্র একটিতে হেরেছে ব্রাজিল। ৪২ গোলের বিপরীতে নিজেদের জালে গোল মাত্র ৫টি। ব্রাজিলের ছন্দময় ফুটবলের সোনালি অতীতটাও যেন ফিরিয়ে আনছেন ৫৫ বছর বয়সী কোচ—

প্রশ্ন: প্রথম দল হিসেবে রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছিল ব্রাজিল। ১৯৫৮ সালের পর আবার ইউরোপে হওয়া বিশ্বকাপে ইউরোপের বাইরের দেশ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়েও এগিয়ে রাখা হচ্ছে আপনার দলকে। চাপ অনুভব করছেন?

তিতে: সেলেসাওদের কোচিং করাতে হলে আপনাকে সব সময়ই চাপ সামলাতে হবে। পাঁচবার বিশ্বকাপ জেতা দলটার সমর্থকদের শিরোপা ছাড়া কখনোই সন্তুষ্ট করা যাবে না। এটা মেনে নিয়েই আমরা বড় হয়েছি। প্রত্যাশার চাপটা তাই সব সময়ই থাকবে। চাপটাপের ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়েই আপনাকে প্রতিনিয়ত সেরা খেলাটা খেলতে হবে। বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলে থাকতে হলে একজন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে ঠিক এটাই প্রত্যাশা করা হয়।

প্রশ্ন: ২০১৪ বিশ্বকাপের কথা বলতে গেলে ঘুরেফিরে ব্রাজিলের ওই ৭-১ গোলের লজ্জাজনক হারটাই সামনে আসে। আপনার অধীনে অবশ্য দল ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ১৯ ম্যাচে ১৫টি জয়, ৪২ গোল দিয়ে খেয়েছে মাত্র ৫টি...

তিতে: আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ছেলেরা দারুণভাবে সাড়া দিয়েছে। বিশ্বের কাছে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের একটা তাগিদ ছিল। সেটা তারা করেও দেখিয়েছে। ড্রেসিংরুমে এখন একটা ফুরফুরে মেজাজ আছে। মাঠে এবং মাঠের বাইরে ফুটবলাররা স্বাধীনভাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারছে।

প্রশ্ন: এই বদলে আপনার ভূমিকাটা কী ছিল?

তিতে: ফলাফলের চেয়ে আমি পারফরম্যান্সে বেশি বিশ্বাসী। ফলাফলটা কারও হাতে থাকে না। যেটা হাতে থাকে, সেটা হলো পারফরম্যান্স। আমি বরাবরই এই ব্যাপারটাতে গুরুত্ব দিয়েছি। খেলোয়াড়দের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে আপনাকে খেলার ধরন নির্বাচন করতে হবে। আমি চেষ্টা করেছি তাদের (ব্রাজিল দল) সঙ্গে মানায় এমন একটা ধরন তৈরি করতে।

প্রশ্ন: গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের বিপক্ষে দলগুলো রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে চাইবে। আপনার পরিকল্পনা...

তিতে: সুইজারল্যান্ড অনেক নিচ থেকে খেলে। প্রতি-আক্রমণে ও সেট পিসে তারা চমকে দিতে পারে। সার্বিয়া ধ্রুপদি ঘরানার যুগোস্লাভিয়ান ফুটবল খেলে। তারা প্রতিপক্ষকে খেলার জায়গা দেয় এবং নিজেরা ছোট ছোট পাসে খেলে। কোস্টারিকা গত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছিল, তা-ও আবার একটা ম্যাচও না হেরে। শেষমেশ হল্যান্ডের কাছে তারা টাইব্রেকারে হেরেছে। বিশ্বকাপে যেকোনো দলেরই সুইস ও কোস্টারিকান রক্ষণ ভেদ করা মুশকিল হবে। অন্যদিকে সার্বিয়ার আক্রমণভাগ আপনাকে চিন্তায় ফেলবে। গ্রুপ পর্বেই তাই কয়েক ধরনের লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের।

প্রশ্ন: আপনার পরিকল্পনার বড় অংশজুড়ে ছিলেন দানি আলভেজ। তিনি চোট নিয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ায় আপনাকে প্ল্যান ‘বি’ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে...

তিতে: চোট খেলারই অংশ। হ্যাঁ, দানি আমাদের পরিকল্পনায় ছিল এবং নিশ্চিতভাবেই সে প্রথম একাদশে থাকত। কিন্তু এখন তো আমাদের বিকল্প খুঁজতেই হবে। তবে দানির মতো খেলোয়াড়ের বিকল্প খোঁজা সহজ কাজ নয়। অবশ্য কারও পরিবর্তে ঠিক খেলোয়াড়টিকে খুঁজে বের করাই তো কোচের কাজ।

প্রশ্ন: দানি আলভেজ না থাকায় ব্রাজিল কি ৩-৪-১-২ ছকে খেলবে?

তিতে: আমাদের কাছে বিকল্পের ঘাটতি নেই। পরিস্থিতির সঙ্গে পরিকল্পনায় বদল আনার ব্যাপারে তৈরি থাকতে হবে। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, দলকে নতুন কোনো ছকে খেলাব না। বিশ্বকাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাটা বিপজ্জনক হতে পারে।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা বিপজ্জনক কেন?‌

তিতে: এটা দলে খারাপ প্রভাব ফেলে। খেলোয়াড়দের মধ্যে সংশয়-সন্দেহ তৈরি হয়। সাবেক অনেক ফুটবলার আমাকে এই কথাটা বলেছেন। আমি জানি, তাঁরা এই কথা দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন। যা করে এসেছি, সেটা করলেই ফল মিলবে। হঠাৎ করে সেটা পুরোপুরি পরিবর্তন করা উচিত নয়। অবশ্য ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন তো হবেই।

প্রশ্ন: কিছুদিন আগে জার্মানির সঙ্গে ব্রাজিল প্রীতি ম্যাচ খেলল। কিন্তু গণমাধ্যম ঘুরেফিরে শুধু সেই ৭-১ হারের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছিল। ম্যাচের আগে আপনার অনুভূতি কী রকম ছিল?

তিতে: ম্যাচের আগের কথা বলছেন? আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কারণ মার্চের ওই ম্যাচের আগে আমরা ভালো খেলছিলাম। ৭-১ একটা বিপর্যয় ছিল। আর বিপর্যয় প্রতিদিন হয় না। ওই দিনের ভুল নিয়ে আমরা কথা বলেছি। তাই আমাদের লক্ষ্য ছিল ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি না করা। তবে জার্মানির সঙ্গে সর্বশেষ ম্যাচটা কেবলই একটা প্রীতি ম্যাচ ছিল। সবাই জানে বিশ্বকাপের ওই ম্যাচ নিয়ে সারা জীবন আলোচনা হবে। তবে সেটা পেরিয়ে আমাদের সামনে তাকাতে হবে।

প্রশ্ন: ব্রাজিল কি পারবে রাশিয়ায় বিশ্বকাপ জিততে?

তিতে: এখনই সেটা কে বলতে পারে! বিশ্বকাপ সাত ম্যাচের একটা টুর্নামেন্ট এবং আপনাকে অন্তত ছয়টা ম্যাচ জিততেই হবে। এটা সহজ কাজ নয়। গ্রুপ পর্বে একটা হার হয়তো সামাল দেওয়া যায়। কিন্তু শেষ চারটি ম্যাচ আপনাকে তো জিততেই হবে। তাই গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ থেকে আমাদের অন্তত সাত পয়েন্ট নিশ্চিত করতে হবে। আর নকআউট পর্বে যেকোনো কিছুই হতে পারে। চ্যাম্পিয়ন হতে হলে বড় দলগুলোর বিপক্ষে ধারাবাহিক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

একনজরে

পুরো নাম: আদেনর লিওনার্দো বাচ্চি

জন্ম: ২৫ মে, ১৯৬১

জন্মস্থান: কাশিয়াস দো সুল, ব্রাজিল

যখন খেলতেন: ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার

কোচ হিসেবে শুরু: ১৯৯০

ব্রাজিলের কোচ: ২০১৬

ম্যাচ: ১৯

জয়: ১৫

ড্র: ৩

হার: ১