Thank you for trying Sticky AMP!!

সর্বজয়ী লিভারপুল, মিলানের 'ত্রিফলা' আর ক্রুইফের স্বপ্নের বার্সেলোনা

বার্সায় স্বপ্নের মতো এক দল গড়েছিলেন ক্রুইফ। ছবি: বার্সেলোনা
>কোনো দলের রাজত্ব ছিল দেশের ফুটবলে, কোনো দল আবার দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছে মহাদেশীয় পর্যায়ের পরাশক্তি, জায়গা করে নিয়েছে ফুটবল ইতিহাসেও। ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে তেমন কিছু দলের গল্প।

তিরিশ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়েছে লিভারপুল, কয়েক সপ্তাহ আগে। গত বছর চ্যাম্পিয়নস লিগ, চলতি মৌসুমের শুরুতে উয়েফা সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ জেতা দলটা সাফল্যের ষোলোকলা পূর্ণ করেছে ইংলিশ লিগ জেতার মাধ্যমে, যে শিরোপা অধরা ছিল তিন দশক ধরে। ইয়ুর্গেন ক্লপের দলটাকে দশকের সময়ের অন্যতম সেরা বলছেন অনেকেই। কারও কারও মতে, ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে এই লিভারপুল হতে পারে ইতিহাসের অন্যতম সেরাও। পারবে কি না, সেটা সময়ই বলবে।
ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে বিভিন্ন সময় ঘরোয়া কিংবা মহাদেশীয় পর্যায়ে রাজত্ব করা এমন কিছু দলের গল্প নিয়ে এই ধারাবাহিক। দ্বিতীয় পর্বে থাকছে আরও সাত ক্লাবের কীর্তির কথা-
ইন্দিপেন্দিয়েন্তে ১৯৭১-১৯৭৫
উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়: রিকার্দো বোচিনি, অগুস্তিন বালবুয়েনা, দানিয়েল বার্তোনি, ফ্রানসিস্কো সা, রিকার্দো পাভোনি
উল্লেখযোগ্য শিরোপা: কোপা লিবের্তাদোরেস (৪), আর্জেন্টাইন লিগ (১), ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ (২)
ডিয়েগো ম্যারাডোনার আদর্শ হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। যুগ যুগ ধরে ম্যারাডোনার আদর্শ হিসেবে শোনা গেছে ব্রাজিল কিংবদন্তি রিভেলিনো ও আর্জেন্টিনার আড়ালে থাকা শিল্পী টমাস কার্লোভিচের নাম। কিন্তু ইন্দিপেন্দিয়েন্তের রিকার্দো বোচিনির প্রতিও ম্যারাডোনার অনুরাগ ছিল অন্য মাত্রার। এতটাই যে, বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন ইন্দিপেন্দিয়েন্তেতে, বোচিনির খেলা দেখতে। পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চির এই খুদে জাদুকরের হাত ধরেই সত্তরের দশকে ইন্দিপেন্দিয়েন্তে একরকম অসাধ্যসাধন করেছিল। টানা চারবার জিতে নিয়েছিল কোপা লিবের্তাদোরেস। যে রেকর্ড আদৌ কোনো দল ভাঙতে পারবে কি না, কে জানে! এমনকি জুভেন্টাস ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মতো ইউরোপীয় পরাশক্তিও বশ মেনেছিল তাদের কাছে, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে।

শিরোপা হাতে লিভারপুলের উল্লাস, আশির দশকের নিয়মিত দৃশ্য। ছবি: টুইটার

লিভারপুল ১৯৭৫-১৯৮৪
উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়: কেনি ডালগ্লিশ, ইয়ান রাশ, গ্রায়েম সুনেস, রে ক্লেমেন্স, এমেলিন হিউজ
উল্লেখযোগ্য শিরোপা: ইংলিশ লিগ (৭), ইউরোপিয়ান কাপ (৪), লিগ কাপ (৪)
ইংলিশ ফুটবলে একচ্ছত্র আধিপত্য কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী-সবকিছু দেখিয়ে দিয়েছিল লিভারপুলের এই দল। নয় বছরে সাতবার জিতেছিল লিগ, চারবার ইউরোপিয়ান কাপ। কিংবদন্তি ম্যানেজার বিল শ্যাঙ্কলি চলে যাওয়ার পর প্রথম মৌসুমে লিগে দ্বিতীয় হয়েছিল লিভারপুল। ব্যাপারটা ভালো লাগেনি নতুন ম্যানেজার বব পেইসলির, 'আমরা এখানে দ্বিতীয় হওয়া উদ্‌যাপন করি না।' পরবর্তীতে তাঁকে করতেও হয়নি তেমন। শ্যাঙ্কলির দেখিয়ে দেওয়া পথে চলেছিলেন পেইসলি, আর তাতেই সাফল্য ধরা দিয়েছে একের পর এক।

হামবুর্গ ১৯৭৭-১৯৮৩
উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়: ফেলিক্স মাগাথ, কেভিন কিগান, উলি স্টেইন, উইলফগ্যাং রোলফ, হোর্স্ট রুবেশচ
উল্লেখযোগ্য শিরোপা: জার্মান লিগ (৩), জার্মান কাপ (১), সুপার কাপ (২), ইউরোপিয়ান কাপ (১), কাপ উইনার্স কাপ (১)
এদিকে ইংল্যান্ডে লিভারপুল সাম্রাজ্য গড়ার সময়, ওদিকে জার্মানিতে একই কাজ করছিল হামবুর্গ। ক্রোয়েশিয়ান কোচ ব্রাঙ্কো জেবেচ ও মূল তারকা কেভিন কিগানের মন্ত্র ছিল একটাই-পরিশ্রম, আর পরিশ্রম। জেবেচের দল একটুর জন্য ১৯৭৯-৮০ মৌসুমের ইউরোপিয়ান কাপ জিততে না পারলেও, তাঁর দেখানো পথ ধরে হামবুর্গকে পরম আরাধ্য শিরোপা পাইয়ে দেন অস্ট্রিয়ান কিংবদন্তি আর্নস্ত হ্যাপেল।

নটিংহ্যাম ফরেস্ট ১৯৭৭-৮০
উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়: জন ম্যাকগোভার্ন, পিটার শিলটন, ভিভ অ্যান্ডারসন, জন রবার্টসন, ট্রেভর ফ্র্যানসিস
উল্লেখযোগ্য শিরোপা: ইংলিশ লিগ (১), লিগ কাপ (২), কমিউনিটি শিল্ড (১), ইউরোপিয়ান কাপ (২), উয়েফা সুপার কাপ (১)
নটিংহ্যামের গল্পটা রূপকথাকেও হার মানায়। দ্বিতীয় বিভাগ থেকে উত্তরণের পরপরই প্রথম বিভাগের শিরোপা ঘরে তোলা দলটা জয়রথ বজায় রাখে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায়ও। ব্রায়ান ক্লফ ও পিটার টেলরের মস্তিষ্কপ্রসূত দলটা সম্মান অর্জন করে নেয় বায়ার্ন কিংবদন্তি গুনার নেটজার, বিশ্বকাপজয়ী ইতালি কোচ এনজো বিয়ারজোতের মতো মানুষের কাছ থেকে।

এসি মিলান ১৯৮৭-৯১
উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়: রুড খুলিত, মার্কো ফন বাস্তেন, পাওলো মালদিনি, ফ্রাঙ্কো বারেসি, ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড
উল্লেখযোগ্য শিরোপা: ইতালিয়ান লিগ (১), ইউরোপিয়ান কাপ (২), উয়েফা সুপার কাপ (২), ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ (২)
ইতালির প্রথাগত জমাটবাঁধা রক্ষণভাগের সঙ্গে ডাচদের টোটাল ফুটবল ও জার্মানদের 'প্রেসিং' মেলালে কী হয়, দেখিয়ে দিয়ে গেছেন কিংবদন্তি ম্যানেজার আরিগো সাচ্চি। একদিকে মালদিনি-বারেসি-কোস্তাকুর্তাদের রক্ষণ, আরেকদিকে খুলি-ফন বাস্তেন-রাইকার্ডকে নিয়ে গড়া ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষুরধার ত্রিফলা। ইতালির ফুটবল নবজাগরণ দেখে এই মিলানের মধ্যেই। সাদামাটা ৪-৪-২ ছকের মধ্যে থেকেও যে এত অসাধারণ হওয়া যায়, কে জানত!

এসি মিলান তো বটেই, গোটা ইতালির ফুটবলের নকশা বদলে দিয়েছিলেন আরিগো সাচ্চি। সংগৃহীত ছবি

বার্সেলোনা ১৯৮৮-১৯৯৪
উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়: রোমারিও, পেপ গার্দিওলা, রিস্টো স্টইচকভ, রোনাল্ড কোম্যান, মাইকেল লাউড্রপ
উল্লেখযোগ্য শিরোপা: স্প্যানিশ লিগ (৪), কোপা দেল রে (২), সুপারকোপা, (৩), ইউরোপিয়ান কাপ (১), কাপ উইনার্স কাপ (১), উয়েফা সুপার কাপ (১)
মাঠ ও মাঠের বাইরে, বার্সার অবস্থা তখন তথৈবচ। এর মধ্যেই আয়াক্স থেকে টোটাল ফুটবলের নির্যাস নিয়ে আসলেন ইয়োহান ক্রুইফ। আর তাতে সুরভিত হল ক্যাম্প ন্যু। বার্সার নবজাগরণের এই কান্ডারির মূল লক্ষ্য ছিল দর্শকদের আনন্দ দেওয়া। সেটা তো সফলভাবে করেছেনই, সুন্দর ফুটবল খেলার জন্য উদ্বুদ্ধ করে গেছেন জাভি, ইনিয়েস্তা, বুসকেটস, মেসি ও পুয়োলদের মতো উত্তরসূরিদের। ক্রুইফের ওই বার্সেলোনা খ্যাতি পেয়েছিল 'ড্রিম টিম' হিসেবে।
আয়াক্স আমস্টারডাম ১৯৯২-১৯৯৬
উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়: ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড, এডগার ডাভিডস, ক্লারেন্স সিডর্ফ, এডউইন ফন ডার সার, প্যাট্রিক ক্লুইভার্ট
উল্লেখযোগ্য শিরোপা: ডাচ লিগ (৩), ডাচ কাপ (১), ডাচ সুপার কাপ (৩), চ্যাম্পিয়নস লিগ (১), উয়েফা কাপ (১), ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ (১)
ক্রুইফের আয়াক্সের মতো অতটা জনপ্রিয় না হলেও, লুই ফন গালের আয়াক্সও কিন্তু কম কার্যকরী ছিল না। রাইকার্ডের মতো অভিজ্ঞ সেনানীর সঙ্গে ক্লুইভার্ট, সিডর্ফ, ডাভিডসের মতো 'বাচ্চা'দের নিয়ে ঘরোয়া লিগে তোলপাড় করে দিয়েছিলেন, ইউরোপে বশ মানিয়েছিলেন এসি মিলানের মত পরাক্রমশালী দলকে। ক্যারিয়ারের শুরুতে এই সাফল্য পেয়ে পরবর্তীতে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন দলের প্রায় প্রত্যেকটা সদস্য। ফন গাল নিজেও কয়েক বছর পর পাড়ি জমান বার্সেলোনায়।
(চলবে)