Thank you for trying Sticky AMP!!

সাহসিকতার কথা জানাতে আসছে ফারাজ স্মৃতি ফুটবল

ফারাজ আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ড্রয়ের কুপন তুলছেন সোনালী অতীত ক্লাবের সভাপতি ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার হাসানুজ্জামান বাবলু। ছবি: সোনালী অতীত ক্লাব
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন ফারাজ আইয়াজ হোসেন। হত্যাকারীদের নির্মমতার মুখে বন্ধুত্ব আর মানবিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন ফারাজ। মৃত্যুঞ্জয়ী এ তরুণের আত্মত্যাগকে স্মরণ ও তাঁর আদর্শকে তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সোনালী অতীত ক্লাব আবারও আয়োজন করতে যাচ্ছে ফারাজ স্মৃতি আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতা।


গল্পটা আত্মত্যাগের। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজানে মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিলেন ফারাজ আইয়াজ হোসেন। জঙ্গিরা প্রথমে ছেড়ে দিয়েছিল তরুণ ফারাজকে। কিন্তু বন্ধুকে মৃত্যুর মুখে রেখে ফিরে আসার চিন্তা মাথায় টানেননি ফারাজ। নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন, শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বই হওয়া উচিত তারুণ্যের আদর্শ। সেই আদর্শকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফুটবল উন্মাদনা সৃষ্টির লক্ষ্যে টানা তৃতীয়বারের মতো ফারাজ আন্তবিশ্ববিদ্যালয় গোল্ডকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে সাবেক ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাব।

শেষবার ১৪টি দল থাকলেও এবার টুর্নামেন্টের পরিসর বাড়ছে। ২৪ তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাওয়া এ টুর্নামেন্টে মোট ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করবে। খেলা অবশ্য শুরু হবে ২১ সেপ্টেম্বর। মূল ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম হলেও কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম ও মোহাম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা কলেজেও হবে কিছু ম্যাচ।

৮টি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলা হবে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। গ্রুপ পর্বের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলগুলো নিয়ে হবে নকআউট পর্ব। উদ্বোধনী ম্যাচ, দুটি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল সরাসরি সম্প্রচার করবে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর। চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৩ লাখ টাকা, রানার্সআপ ২ লাখ। ফারাজকে কেন্দ্র করে টুর্নামেন্টের থিম সং তৈরি করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সেরা থিম সং তৈরি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য থাকবে বিশেষ পুরস্কার। টুর্নামেন্টে সহযোগী পৃষ্ঠপোষক হিসেবে থাকছে হামীম গ্রুপ ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক।

সুস্থ–সুন্দর সমাজ গঠনে তরুণদের মাঠে নিয়ে আসার বিকল্প নেই। অন্তরে এই স্লোগান ধারণ করে গত দুই বছর ঢাকায় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে সফল হয়েছে সোনালী অতীত ক্লাব। ২০ দলের প্রথম টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল গ্রিন ইউনিভার্সিটি। দ্বিতীয়বার ১৪ দলের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ফারইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়।

এবার প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। টুর্নামেন্টে ভালো ফলাফলের আশায় দুই সপ্তাহ যাবৎ তাদের অনুশীলন শুরু হয়েছে বলে জানান ২০১৭ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা ডিফেন্ডার মাহমুদুল হাসান, ‘বাংলাদেশের আন্তবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টের মধ্যে এটাই সেরা। এবার আমরা প্রথমবারের মতো খেলতে যাচ্ছি। টুর্নামেন্টে ভালো ফলাফলের আশায় কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। প্রথমবার অংশগ্রহণ করেই শিরোপা জিততে চাই আমরা। ফারাজ ভাইয়ের নামের এই টুর্নামেন্ট নিজেদের মেলে ধরার ভালো একটা মঞ্চ।’

ফারাজ আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ড্রয়ের কুপন তুলছেন টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্যসচিব সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম। ছবি: সোনালী অতীত ক্লাব

শিরোপা যার হাতেই উঠুক, টুর্নামেন্ট নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ফুটবলের মাধ্যমে এক ছাতার নিচে আসার জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকে তারা। তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে স্টেডিয়াম। গ্যালারি থেকে ভেসে আসে ভুভুজেলা, ঢোল আর বাঁশির বিরামহীন শব্দ। সর্বত্র একটা উৎসবমুখর পরিবেশ।

এবারের টুর্নামেন্ট আরও বর্ণিল হবে বলে মনে করেন টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্যসচিব সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ‘ফারাজ আমাদের সামনে একটি উদাহরণ রেখে গেছে। ফারাজ ত্যাগ, সাহসিকতা ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর নামে একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট করতে পেরে আমরা গর্বিত। ইতিমধ্যে সফলভাবে দুটি টুর্নামেন্ট শেষ করেছি। এবার দল বেড়ে যাওয়ায় টুর্নামেন্ট আরও বর্ণিল হবে।’

সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদ থেকে তরুণসমাজকে দূরে রেখে সুস্থ সমাজ গঠন করায় অবদান রাখতেই এই টুর্নামেন্টের আয়োজন। আজ সংবাদ সম্মেলনে ফুটবলারদের মুখে ঘুরে বেড়াল এ টুর্নামেন্টকে ঘিরে সৃষ্ট হওয়া উন্মাদনার কথা। আজ অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সোনালী অতীত ক্লাবের সভাপতি হাসানুজ্জামান খান, সাবেক ফুটবলার রকিবুল ইসলাম, টুর্নামেন্টের প্রধান সমন্বয়কারী নাসিম এহসান আরিফ, ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের সহকারী ম্যানেজার তাহমিদ ইবনে মাজহার।