Thank you for trying Sticky AMP!!

সুইডেনের দৌড় কদ্দুর?

সুইডেন: ইব্রাহীন দলের পালেও অভিজ্ঞতার বাতাস

কে জিতবে ইউরো? প্রশ্নটা আসলেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার। ইউরোর চ্যাম্পিয়ন দল ১ কোটি ইউরো পাবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা তো প্রায় ১০০ কোটি টাকাই। সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হবে ১১ জুন, শেষ হবে আগামী ১১ জুলাই। ইউরোয় অংশ নিতে যাওয়া ২৪টি দলের খুঁটিনাটি জেনে নিলে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সহজ হতে পারে আপনার জন্য।

গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল সুইডেন। ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিলেও সুইডেন আশা জাগিয়েছিল সমর্থকদের মধ্যে। তাই দেখেই কি না তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের সঙ্গে আবারও মাঠে নামার সাধ হয় দেশটির সবচেয়ে বড় তারকা জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের। অবসর থেকে ফিরে এসেছিলেন, আশা করেছিলেন ইউরোতে আর একটিবারের জন্য মাঠে নামবেন। এসি মিলানের তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে যেভাবে নিজের অভিজ্ঞতা ঢেলে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত, একই কাজ করবেন জাতীয় দলের হয়েও।

Also Read: ফ্রান্স: বিশ্বজয়ের পরীক্ষিত সূত্রে ইউরোপ জয়ের আশা

কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। চোটের কারণে মাঠের বাইরে চলে গেছেন ইব্রা। তাঁকে ছাড়াই ইউরোর পরিকল্পনা করতে হয়েছে কোচ ইয়ানে অ্যান্ডারসনকে। অবশ্য দলে মহাতারকা না থাকলেই যে তিনি ভালো করেন, গত বিশ্বকাপেই তো তার প্রমাণ দিয়েছেন! সবার প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে ২০১৫ সালে অখ্যাত আইএফকে নরকপিংকে লিগ জেতানো এই কোচ বেশ ভালোই জানেন, তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে গড়ে তোলা এই দলের কাছ থেকে সর্বোচ্চটুকু কীভাবে আদায় করতে হয়।

ইব্রার সঙ্গে আক্রমণভাগে ইসাক খেলবেন, এমনটাই আশা ছিল

দল: সুইডেন

ফিফা র‍্যাঙ্কিং: ১৮

দলে আছেন যাঁরা

গোলরক্ষক

রবিন ওলসেন (এভারটন), ক্রিস্টোফার নর্ডফেল্ট (গেঙ্কারবিরগিলি), কার্ল-ইয়োহান জোহানসন (কোপেনহেগেন)

সেন্টারব্যাক

ভিক্টর লিন্ডেলভ (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), আন্দ্রেয়া গ্রাঙ্কভিস্ট (হেলসিংবোর্গ), ফিলিপ হেলান্দার (রেঞ্জার্স), পন্টাস ইয়ানসন (ব্রেন্টফোর্ড), মার্কাস ড্যানিয়েলসন (দালিয়ান প্রফেশনাল)

রাইটব্যাক/রাইট উইংব্যাক

মিকায়েল লাস্টিগ (এআইকে), এমিল ক্রাফথ (নিউক্যাসল ইউনাইটেড)

Also Read: ইংল্যান্ড: অননুমেয়তাই বড় শক্তি

লেফটব্যাক/লেফট উইংব্যাক

লুডভিগ অগাস্টিনসন (ভেরডার ব্রেমেন), পিয়েরে বেংটসন (ভেলিয়ে বিকে)

সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার/ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার

আলবিন একদাল (সাম্পদোরিয়া), সেবাস্তিয়ান লারসন (এআইকে), গুস্তাভ সভেনসন (গুয়াংঝু সিটি), ক্রিস্টোফার ওলসন (ক্রাসনোদার), মাতিয়াস সভানবার্গ (বোলোনিয়া), ইয়েন্স কাইয়ুস্তে (মিতিউলান)

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার

রবিন কোয়াইসন (মাইঞ্জ)

উইঙ্গার/ওয়াইড মিডফিল্ডার

দেয়ান কুলুসেভস্কি (জুভেন্টাস), এমিল ফর্সবার্গ (আরবি লাইপজিগ), ভিক্টর ক্লায়েসন (ক্রাসনোদার), কেন সেমা (ওয়াটফোর্ড)

স্ট্রাইকার

মার্কাস বার্গ (ক্রাসনোদার), আলেক্সান্দার ইসাক (রিয়াল সোসিয়েদাদ), জর্ডান লারসন (স্পার্তাক মস্কো)

ইয়ানে অ্যান্ডারসন

কোচ

ইয়ানে অ্যান্ডারসন

অধিনায়ক

আন্দ্রেয়া গ্রাঙ্কভিস্ট

Also Read: ইউক্রেন: শেভচেঙ্কো আসছেন শিষ্যদের নিয়ে

ইউরোয় সেরা সাফল্য

সেমিফাইনাল (১৯৯২)

গ্রুপে প্রতিপক্ষ

স্পেন (১৪ জুন)

স্লোভাকিয়া (১৮ জুন)

পোল্যান্ড (২৩ জুন)

প্রথম ম্যাচে খেলবেন না কুলুসেভস্কি

শক্তি

ইব্রা না থাকলেও দলের সবচেয়ে বড় শক্তি অভিজ্ঞতায়। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা একাদশের সঙ্গে এই একাদশের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ফলে সবাই মোটামুটি আগে থেকেই জানেন, কার দায়িত্ব কী। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ইসাক, কুলুসেভস্কি, জর্ডান লারসনদের তারুণ্যও শক্তি হতে পারে সুইডেনের জন্য।

দুর্বলতা

গতবার দলের সবচেয়ে শক্তির জায়গা রক্ষণ হলেও এবার গ্রাঙ্কভিস্টের সম্ভাব্য অনুপস্থিতির কারণে দলটির রক্ষণে ফাটল দেখা যেতে পারে। অভিজ্ঞতায় ভরসা রাখতে গিয়ে একাদশে বয়স্ক খেলোয়াড় খেলাতে গিয়ে আবার হিতে বিপরীত হয়ে যায় কি না, সেদিকেও নজর রাখতে হবে অ্যান্ডারসনকে।

Also Read: তুরস্ক: ২০০২ বিশ্বকাপ ‘রূপকথা’র পুনরাবৃত্তি হবে?

সুইডেনের সম্ভাব্য একাদশ

সম্ভাব্য একাদশ ও খেলার কৌশল (৪-৪-২)

২০১৬ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সুইডেন মূলত ৪-৪-২ ছকেই খেলছে। ভালোভাবে রক্ষণ সামলে স্ট্রাইকার আর উইঙ্গার/ওয়াইড মিডফিল্ডারদের গতিকে কাজে লাগিয়ে প্রতি–আক্রমণে ওঠার কৌশলে খেলে থাকে সুইডেন। এই কৌশলে জমাট রক্ষণের ভূমিকা অনেক। গোলকিপার হিসেবে মূল একাদশে জায়গা পাওয়ার জন্য এভারটনের রবিন ওলসেন ও সোয়ানসি সিটির সাবেক গোলকিপার ক্রিস্টোফার নর্ডফেল্টের মধ্যে লড়াই হবে। রক্ষণে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ভিক্টর লিন্ডেলভের জায়গা নিশ্চিত।

রক্ষণে লিন্ডেলভের সঙ্গী কে হবেন, সেটাই ইয়ানে অ্যান্ডারসনকে চিন্তায় ফেলতে পারে। ২০১৮ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা আন্দ্রেয়া গ্রাঙ্কভিস্ট দলের অধিনায়ক হলেও, চোট ও বয়সের কারণে মূল একাদশে জায়গা নিশ্চিত নয়। তিনি খেলতে পারলে লিন্ডেলভের সঙ্গী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন রেঞ্জার্সের হয়ে সদ্যই লিগ জেতা ফিলিপ হেলান্দার। রক্ষণকাজের পাশাপাশি হুটহাট করে ওপরে উঠে গোল করে আসার জন্য মার্কাস ড্যানিয়েলসনও সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন।

Also Read: রাশিয়া: বিশ্বকাপের চমক দেখা যাবে আবার?

লেফটব্যাক হিসেবে ভেরডার ব্রেমেনের লুডভিগ অগাস্টিনসনের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু অ্যান্ডারসেন যদি অপেক্ষাকৃত রক্ষণাত্মক মানসিকতার লেফটব্যাক চান, তাহলে অগাস্টিনসনকে না নামিয়ে খেলাতে পারেন পিয়েরে বেংটসনকে।

রক্ষণভাগে লিন্ডেলভের সঙ্গে ড্যানিয়েলসনের খেলা নিশ্চিত নয়।

রাইটব্যাক হিসেবে বয়স্ক লাস্টিগকে না খেলিয়ে নিউক্যাসলের এমিল ক্রাফথের ওপর ভরসা রাখতে পারেন কোচ। গ্রাঙ্কভিস্টের সম্ভাব্য অনুপস্থিতি দলের রক্ষণকে দুর্বল করে দেয় কি না, সেটাই দেখার বিষয়।

মাঝমাঠে দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে সাম্পদোরিয়ার অভিজ্ঞ আলবিন একদাল ও ক্রাসনোদারের ক্রিস্টোফার ওলসনের মধ্যে বোঝাপড়া দুর্দান্ত। দুই ওয়াইড মিডফিল্ডার হিসেবে ডানে জুভেন্টাসের দেয়ান কুলুসেভস্কি ও বাঁয়ে লাইপজিগের এমিল ফর্সবার্গের জায়গা পাকা। তবে বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করে করোনা বাঁধানো কুলুসেভস্কি হয়তো স্পেনের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচটা খেলতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে দুই অভিজ্ঞ তারকা সেবাস্তিয়েন লারসন ও ভিক্টর ক্লায়েসনের মধ্যে একজনকে নির্বাচন করতে পারেন অ্যান্ডারসন।

ইব্রাহিমোভিচ দলে থাকলে রিয়াল সোসিয়েদাদের তরুণ স্ট্রাইকার ইসাকের সঙ্গে ইব্রাই মূল একাদশে সুযোগ পেতেন। ইব্রা যেহেতু নেই, ইসাকের পাশে জায়গা পাওয়ার জন্য লড়বেন অভিজ্ঞ মার্কাস বার্গ, মাইঞ্জের রবিন কোয়াইসন ও কিংবদন্তি হেনরিক লারসনের ছেলে জর্ডান, এমনকি কুলুসেভস্কি নিজেও।

Also Read: পোল্যান্ড: লেভানডফস্কির কাঁধে সওয়ার আবারও

জুভেন্টাসে গত মৌসুমে রোনালদোর সঙ্গে স্ট্রাইকার হিসেবে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছেন এই তরুণ উইঙ্গার। সে অভিজ্ঞতাকেও চাইলে কাজে লাগাতে পারেন অ্যান্ডারসন।

বল দখলে থাকলে সুইডেন দুরপাল্লার পাসের কৌশল কাজে লাগিয়ে দ্রুত আক্রমণে উঠতে পছন্দ করে। তবে প্রতিমুহূর্তে দলের রক্ষণাত্মক গঠন বজায় রাখার ক্ষেত্রেই মনোযোগ বেশি থাকে অ্যান্ডারসনের। গোলের জন্য ক্লায়েসন, লারসন, ফর্সবার্গ, এমনকি কুলুসেভস্কির সেটপিসের দিকেও তাকিয়ে থাকবে সুইডেন।

‘ইউরোয় সহজ গ্রুপ বলে কিছু নেই। আমরা যেটা করতে পারি, নিজেদের প্রস্তুতি যথাসম্ভব ভালো করার চেষ্টা করা। স্পেন ও পোল্যান্ড দুটোই দুর্দান্ত দল’
ইয়ানে অ্যান্ডারসন, সুইডেন কোচ

প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

গত বিশ্বকাপে যেহেতু কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল, সুইডেনের আশা থাকবে একই দল নিয়ে এবার ইউরোয় আরেকটু ওপরে ওঠা। স্বাভাবিকভাবেই এই তিন বছরে দলের খেলোয়াড়দের বোঝাপড়া বেড়েছে আরও। কিন্তু প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার মিল না-ও থাকতে পারে।