Thank you for trying Sticky AMP!!

সুদিনের আশায় মোহামেডানে নির্বাচন

নির্বাচনকে ঘিরে সাবেকদের আড্ডা প্রাণ ফিরিয়েছে মোহামেডান ক্লাব প্রাঙ্গণে। ছবি: প্রথম আলো

মতিঝিলের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ভবনে আলোকসজ্জার কাজ চলছিল কাল দুপুরে। নির্বাচনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হতে যাচ্ছে ক্লাবটিতে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্যাসিনো–কাণ্ডের কলঙ্ক মুছে মোহামেডান আলোকিত দিনের পথে পা বাড়াবে—ক্লাব ভবনের আলোকসজ্জা যেন সেই বার্তাই দিচ্ছে।

দীর্ঘ আট বছর পর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন হচ্ছে মোহামেডানে। একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘ওপর মহলের’ আশীর্বাদে পরিচালক পদে ১৬ জনকে বেছে নেন সংস্কারে আগ্রহীরা। এর মধ্যে অখ্যাত মুখও আছে গোটা দু-তিন। কিন্তু পরিচালক পদে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ২০টি। অতিরিক্ত চারজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় স্থানীয় একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠেয় আগামীকালের ভোটাভুটিতেই ঠিক হবে, কারা হবেন মোহামডানের পরিচালক।

তবে ভোটাভুটি এড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল। সেটি সফল হয়নি প্রার্থীদের অনমনীয়তায়। পরিচালক পদে অন্যতম প্রার্থী সাজেদ আদেল বলছেন, ‌‘‌আমাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার জন্য একটি পক্ষ অনুরোধ করে। আমার চেয়ে বেশি যোগ্য মানুষ থাকলে প্রত্যাহার করতাম। কিন্তু আমি নিজেকে যোগ্য প্রার্থী মনে করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করিনি।’

সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আবদুল মুবীন। তাঁর নেতৃত্বে মোহামেডান ঐতিহ্য ফিরে পাবে, এমন আশা ক্লাবটির সাবেক ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপুর। মোহামেডানে কখনো ভোটাভুটি হতে না দেখা টিপু এবার ভোটাভুটির খবরে একটু চমকেই গেছেন। তবে ক্লাবে স্বচ্ছ নেতৃত্বের আশা তাঁর, ‘ষাটের দশক থেকে মোহামেডানকে দেখছি। মইনুল ইসলাম সাহেব যত দিন ছিলেন, সভাপতি ছিলেন। ব্যালটের দরকার হতো না। এখন সরাসরি ভোট হচ্ছে। এমন নেতৃত্ব চাই, মাঠে দল খারাপ করলে যাদের গায়ে লাগবে। ক্লাবটাকে যেন তারা ভালোবাসে।’

নতুন নেতৃত্বে যাঁরাই আসুক, তাঁদের ওপর আস্থা রাখতে চান মোহামেডানের সাবেক ফুটবল তারকা সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির, ‘মোহামেডানের যা খারাপ হওয়ার হয়ে গেছে। এর চেয়ে খারাপ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নতুন নেতৃত্বের সাফল্য কামনা করি।’ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনো–কাণ্ডের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির অধীন চলছে মোহামেডান। এই সময়ে ফুটবল মাঠে মোহামেডান ভালো অবস্থায় আছে। সে প্রসঙ্গ টেনে সাব্বির যোগ করেন, ‘ভালো ব্যবস্থাপনার অধীন ১০ নম্বর দল মোহামেডান এখন লিগ টেবিলের পাঁচে। এটি টিমওয়ার্কের ফল। কোচ আমাদের ওপর খুবই খুশি। কারণ, আমরা কোথাও হস্তক্ষেপ করি না।’ সাব্বিরের আশা, নতুন বোর্ড ক্যাসিনো–কাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করবে। তাঁর পাশে বসে আরেক সাবেক ইমতিয়াজ সুলতান জনির কথা, ‘আমার বিশ্বাস, নির্বাচনের মাধ্যমে মোহামডানের সুদিন ফিরবে।’

লিমিডেট কোম্পানি হওয়ার পর মোহামেডানে প্রথম নির্বাচন হয় ২০১১ সালে। দুই বছর পর ২০১৩ সালে হয় দ্বিতীয় নির্বাচন। এরপর নির্বাচন চলে যায় হিমাগারে। আদালতে একটি পক্ষের করা মামলা নির্বাচনের পথে বাধা তৈরি করে। ২০১৯ সালে ক্লাবটির নির্বাচন পরিচালনার জন্য আদালত দায়িত্ব দেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ আমিন উদ্দিনকে (বর্তমানে অ্যাটর্নি জেনারেল)। অনেক চেষ্টা করে অবশেষে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মোহামেডান ২০০২ সালের পর আর ফুটবল লিগ জিততে পারেনি। ক্লাবের অব্যবস্থাপনার দায়ই তাতে বেশি। এত বছরেও ক্লাবটির নিজস্ব মাঠ নেই। দীর্ঘদিন ক্লাব পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। ক্যাসিনো–কাণ্ডে তিনি গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে জামিনে থাকলেও নির্বাচনে প্রার্থী হননি লোকমান। তাঁর অনুসারীদের অনেকেই নেই নির্বাচনে। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মোহামেডানে লোকমান-যুগাবসান হতে চলেছে। তবে ৩৩৭ ভোটারের বেশির ভাগই লোকমান ভূঁইয়ার সমর্থক। পরিচালনা পর্ষদে সশরীর না থাকলেও তাই হয়তো অদৃশ্যভাবে থেকে যাবেন লোকমান।