Thank you for trying Sticky AMP!!

সেমিতে আলো কাড়বেন যাঁরা!

‘কখনো টাকার বস্তাকে গোল করতে দেখেছ?’

চ্যালেঞ্জটা দিয়েছিলেন ডাচ কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফ। আসলেই তো, কোটি টাকা দিয়ে দলের জন্য খেলোয়াড় কেনা যায়। কিন্তু মাঠের খেলা তো আর টাকার বস্তা খেলে দেয় না। বরং খেলাটা খেলে খেলোয়াড়েরা। তাদের মধ্যে যদি জয়ের স্পৃহা না থাকে, তবে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও সাফল্য থাকা অমাবস্যার চাঁদ হয়ে। কাগজে–কলমে সবই আছে, বাস্তবের বেলায় শূন্য!

চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল সে রকমই বড় কিছুর সামনাসামনি। টাকার বস্তা নয় বরং নিজেদের জয়ের স্পৃহা দিয়ে উঠে আসা দুই দল মুখোমুখি হচ্ছে মাদ্রিদের পথে। টটেনহাম কিংবা আয়াক্স, খরচ করার বেলায় দুই দল পারলে নিজেদের হাত জামার ভেতর গুটিয়ে রাখে। আয়াক্সের তো নিজেদের বড় একাডেমি রয়েছে, নিত্যনতুন তারকা গড়ে ওঠে সেখানে; কিন্তু টটেনহামের? ক্লাব সভাপতি ড্যানিয়েল লেভির পাল্লায় পরে দুই বছর ধরে কাউকে দলে ভেড়াতে পারেননি কোচ মাউরিসিও পচেত্তিনো। একাডেমির অধিকাংশ খেলোয়াড়ও অন্যরা নিয়ে যাচ্ছেন। তাই দুই দলের লড়াইটা আজ ট্যাকটিসের।

রক্ষণের ভরসা ডি লিটের ওপরে। ছবি: টুইটার

ম্যাথিয়াস ডি লিট:
বর্তমান আয়াক্সের সঙ্গে তুলনা দেওয়ার মতো আর কোনো দল আছে কি? এক ঝাঁক তরুণ তারকা নিয়ে এরিক টেন হাগ যে খেলা দেখাচ্ছেন তা ইউরোপে দেখা যায়নি অনেক দিন। সত্তরের সেই ভয়ডরহীন আয়াক্সকে যেন নতুন করে খুঁজে পাচ্ছে অনেকে। ইউরোপিয়ান ফুটবলে আবারও রাজত্ব করার পথে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০ না পেরোনো এক তরুণ। নাম তাঁর ম্যাথিয়াস ডি লিট।

বছর দুই আগে পিটার বচের হাত ধরে ইউরোপা লিগ ফাইনালে উঠেছিল আয়াক্স। আয়াক্স একাডেমির রত্ন ডি লিটকে নিয়ে শুরু হয়েছিল ইউরোপে ভালো করার যাত্রা। সে দল থেকে বিদায় নিয়েছেন অনেকেই। আয়াক্স তাই অধিনায়কের আর্মব্যান্ড তুলে দিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী ডি লিটের হাতেই। ইউরোপের সেরা চার দলের অধিনায়কের একজন যখন ২০ না ছোঁয়া একজন, তখন তাঁকে ব্যাখ্যা করার মতো কীই–বা আছে?

ফাইনালের এ যাত্রায় আয়াক্সকে মুখোমুখি হতে হয়েছে বায়ার্ন, রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসের মতো দলকে। ছয় ম্যাচ খেলে হেরেছে মাত্র একটিতে, একমাত্র রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। আয়াক্সের অসাধারণ রক্ষণের পেছনের তারকা এই ডি লিট। রোনালদো, বেনজেমা, লেভানডফস্কির মতো খেলোয়াড়দের যেমন আটকেছেন, তেমনি প্রয়োজনের সময় গোল করে জিতিয়েছেন দলকে। টটেনহামকে তাদের মাটিতে আটকে ম্যাচের আলো কেড়ে নেওয়ার বড় দাবিদার ডি লিট।

তাদিচ আজ নতুন কী চমক দেখাবেন? ছবি: টুইটার

ডুসান তাদিচ
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে কাসেমিরোকে ক্রুইফ টার্নে ঘোল খাওয়ানো নাকি জুভেন্টাসের বিপক্ষে তিনজনকে কাটিয়ে নেওয়া রান; ডুসান তাদিচকে একটি বেছে নিতে বলা হয় তবে কোনটি বেছে নেবেন? দুটো মুহূর্তই যে একদম চোখে লেগে থাকার মতো। আয়াক্সের বাঁচা–মরার লড়াইয়ে প্রতিবারই নিজের সেরাটা দিয়েছেন ডুসান তাদিচ। অথচ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বারবার ব্যর্থ হওয়া তাদিচকে নিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন অনেকে। সে সময়ই ত্রাতা হয়ে এল আয়াক্স।

এই মৌসুমে ‘ফলস নাইন’ খেলা তাদিচ হয়ে উঠেছেন আয়াক্সের আক্রমণের মূল ভরসা। বার্সায় মেসি যেমন নিচে নেমে এসে দলে সঙ্গে মিলে খেলা বানানোর কাজে মনোযোগ দেন, একই ভূমিকা তাদিচের। প্রথাগত স্ট্রাইকার না হয়েও স্ট্রাইকারের দায়িত্ব পালন করেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে ৯ গোল করা তাদিচ স্পারদের ঘাম ছোটাতে যথেষ্ট!

এরিকসেনে ভরসা পুরো স্পার্সবাসীর। ছবি: এএফপি

ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন
‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’—আজকের ম্যাচে আয়াক্স আটকে গেলে এই প্রবাদবাক্যই মনে মনে আওড়াবেন আয়াক্স সমর্থকেরা। এ বাদে আর করার কী আছে? এই এরিকসেনকে আজকের অবস্থানে তুলে আনায় অবদান আছে আয়াক্সের।

আজ টটেনহামের বড় ভরসা এই ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। হ্যারি কেইন নেই, নিষেধাজ্ঞার খড়্গ মাথায় নিয়ে মাঠের বাইরে হিউয়েন মিন সন। তাই টটেনহামের পুরো ভরসা ড্যানিশ তারকার ওপর। প্রায় ছয় বছর আগে নেদারল্যান্ডস ছেড়ে টটেনহামে এসেছিলেন এরিকসেন। এরপর থেকে টটেনহামের মূল তারকাদের একজন হয়ে উঠেছেন। এই মৌসুমে ৯ গোলের পাশাপাশি বানিয়ে দিয়েছেন ১৩ গোল।

কেইন, সন হারিয়ে এখন টটেনহামের সেরা খেলোয়াড় এরিকসেন। কিন্তু প্রশ্ন থাকছে একটাই, তাঁর বানিয়ে দেওয়া বলে পা ছোঁয়াবেন কে? লুকাস মৌরা বা ফার্নান্দো ইয়োরেন্তে এগিয়ে না এলে টটেনহামের হয়ে আলো ছড়ানো বেশ কঠিন হয়ে পড়বে এরিকসেনের জন্য।

আয়াক্সের জুটিই এখন আয়াক্সের সমস্যা। ছবি: টুইটার

টোবি অল্ডারভেইরেল্ড-ইয়ান ভার্তোনে জুটি
আজ আয়াক্সের ঘরের শত্রু শুধু এরিকসেন নয়, এমনকি স্পার্স রক্ষণও। স্পার্সের পুরো রক্ষণভাগের সবাই যে পুরোনো আয়াক্স তারকা। আজ স্পার্সের হয়ে নামবেন দুই সেন্টার ব্যাক টোবি অল্ডারভেইরেল্ড, ইয়ান ভার্তোনে। তাদের স্পার্সে নিয়ে এসেছিলেন কোচ ইয়ল। আয়াক্স থেকে স্পার্সে আসার সময়ে কিনে এনেছিলেন এই জুটিকে। দিনে দিনে এই জুটিই হয়ে উঠেছে টটেনহামের ভরসা। মাউরিসিও পচেত্তিনোও ভরসা রেখেছেন তাদের ওপর। আয়াক্সের আক্রমণাত্মক ফুটবল আটকাতে তাই তাদের বানানো রক্ষণকেই তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। নইলে এরিক হেন টাগ যে আয়াক্স তৈরি করেছে, আটকানো খুব কঠিন।

স্পার্সের নতুন মাঠে আলো কেড়ে নেওয়ার মতো তারকা কম নেই। টাকা নয় বরং দেখা যাবে এরিক হেন টাগ আর মাউরিসিও পচেত্তিনোর ট্যাকটিক্যাল লড়াই। শৌর্যে-বীর্যে আয়াক্সের ধারেকাছে নেই টটেনহাম। চারবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী দলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সেমিতে উঠে আসা স্পার্স। কিন্তু ইতিহাস অবশ্য ঢলে আছে স্পার্সের দিকেই। ইউরোপা লিগে সেই ১৯৮১ সালে দুবার মুখোমুখি হয়েছিল আয়াক্স-টটেনহাম। দুবারই জয় হয়েছে স্পার্সদের। আজকের ট্যাকটিক্যাল লড়াইয়ে শিরোপা কার দিকে যায়, তার জন্য অপেক্ষা আর কিছু ঘণ্টার!


আরও পড়ুন... 
অকুতোভয় আয়াক্স কি পারবে সোনালি দিন ফেরাতে?
টটেনহামের হাতে শিরোপা ওঠার সম্ভাবনা কতটুকু?