Thank you for trying Sticky AMP!!

হিটলার কোন দলের সমর্থক ছিলেন?

ফুটবল মাঠে হিটলারের এ ছবিটাই বিখ্যাত হয়ে আছে। ফাইল ছবি
>এডলফ হিটলার কী ফুটবল দেখতেন? তিনি কোন ক্লাবের সমর্থক ছিলেন? কেউ বলে শালকে, কেউ বা বায়ার্ন মিউনিখ। ন্যুরেমবার্গ কিংবা বার্লিনের নামও আসে। আরেকটি প্রশ্নও ওঠে—আদৌ কি ফুটবল পছন্দ করতেন তিনি!

বছরের এ সময়টা এলেই আলোচনাটা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার টাইমলাইনে ভেসে আসে ২০০৮ সালে শালকের জনসংযোগ কর্মকর্তা গার্ড ভসের সেই বিখ্যাত টুইট। যে টুইট দিয়ে টাইমস পত্রিকার সম্মান প্রায় ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিলেন ভস। কারণ, জার্মান ক্লাবটির সঙ্গে অ্যাডলফ হিটলাফের নাম জড়ানোর ভুল করেছিল পত্রিকাটি।

২০০৮ সালে টাইমসের একটি বিশেষ প্রতিবেদন বের হয়েছিল, “ফুটবলের সবচেয়ে কুখ্যাত ৫০ সমর্থক।” সে তালিকায় ওসামা বিন লাদেনদের ভিড়ে হিটলারের নামটাও এসেছিল। আর হিটলারের মতো বিতর্কিত এক ব্যাক্তির সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল শালকে ০৪ ক্লাবের। 'মাইনারস' নামে খ্যাত ক্লাবটির যা মোটেও ভালো ঠেকেনি।

তাই এক বিশাল চিঠির মাধ্যমে এর প্রতিবাদ পাঠিয়েছিলেন ভস। সে চিঠির ভাষা বর্তমান ফুটবল সমর্থকদের ভালোই জানার কথা। জার্মান ক্লাবগুলোর 'সেন্স অব হিউমার' যে একদিনে গড়ে ওঠেনি সেটি স্পষ্ট বোঝা যায় ২০০৮ সালের সে চিঠিতে। রসিকতার ছন্দ ধরে রেখে একের পর এক শেল নিক্ষেপ করে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন হিটলার শালকের ভক্ত কোনোকালেই ছিলেন না। হিটলারের সময়টায় জার্মানির সফলতম দল শালকে এই যুক্তিতে হিটলারকে শালকের ভক্ত বানানো মানে যে মার্গারেট থ্যাচারকে লিভারপুলের সমর্থক বানিয়ে দেওয়া— এই খোঁচাটা দিয়েই শেষ হয়েছিল সে চিঠি।

আচ্ছা, হিটলার না হয় শালকের ভক্ত ছিলেন না, সেটা প্রমাণিত হলো। কিন্তু কোন ক্লাব হিটলারের 'স্নেহধন্য' হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিল?

এ প্রশ্নের উত্তরে অনেক নামই ভেসে আসে। বায়ার্ন মিউনিখ, কারণ জার্মানির সফলতম ক্লাব তারা। অনেকে দাবি করে রাজধানীতে বলে বার্লিনই সেই ক্লাব। অনেকের ধারণা সেটা ন্যুরেমবার্গ। অনেকে হিটলারের জন্মস্থান অস্ট্রিয়ার এলএএসকে লিনৎজের নামও বলে।

এর মাঝে ন্যুরেমবার্গের পক্ষে যুক্তি বেশ শক্তিশালী। হিটলার ক্ষমতায় আসার আগে জার্মানির সবচেয়ে সফল দল তারাই ছিল। এ ক্লাবের স্টেডিয়ামও তাঁর বেশ পছন্দ ছিল। কিন্তু সেটা এই স্টেডিয়ামে তাঁর সৈন্যদের মার্চ করানো আর বক্তৃতা দেওয়ার জন্যই। এ কারণেই নুরেনবার্গ স্টেডিয়ামকে একসময় হিটলার ইউগেন্দ স্টেডিয়াম নামেও ডাকা হতো। এখানেই শেষ, এই ক্লাবের ফুটবল নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিটেফোঁটাও ছিল না।

বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গেও হিটলারের সম্পর্কটা ভালোবাসার ছিল না। বরং হিটলারের ক্ষমতায় আসার আগে প্রথম সাফল্যের দেখা পাওয়া ক্লাবটি এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ভুগেছে। বায়ার্নের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশই ছিলেন ইহুদি ধর্মালম্বী। ফলে এই ক্লাবকে সহ্য করতে পারত না নাৎসিরা। বার্লিন ভিত্তিক দলগুলো শক্তিশালী না হওয়াতে সেগুলোর দিকেও মন ছিল না নাৎসিদের।

ফুটবলের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও ভালোবাসা দেখে নাৎসিরা একে ঠিকই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। ১৯৩৬ সালের ৭ আগস্ট তাই প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের খেলা দেখতে হাজির হয়েছিলেন হিটলার। ১৯৩৬ অলিম্পিককে নিজের প্রপাগান্ডার অস্ত্র বানিয়েছিলেন হিটলার। তো অলিম্পিকের এক নকআউট ম্যাচে হাজির হয়েছিলেন 'ফুয়েরার'। এর আগে টানা আট ম্যাচ নরওয়ের বিপক্ষে অপরাজিত জার্মানি। গ্যালারিতে হিটলার, এ ম্যাচে জার্মানিকে ছোঁবে কে?

শুরু থেকেই দাপুটে ফুটবল দেখাচ্ছিল দলটি। কিন্তু টানা দুটি নিশ্চিত সুযোগ থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় জার্মানি। ওদিকে প্রথমবারের মতো পাল্টা আক্রমোণে উঠেই প্রথম শটেই গোল করে বসে নরওয়ে। ক্ষেপে ওঠে চারপাশে বাক্যবাণ ছুড়তে থাকেন হিটলার। তাঁর সামনে 'পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি' গোল খায় কীভাবে?

জার্মান ফুটবলাররা গোল দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে উঠলেন। ডিফেন্ডাররাও আক্রমণে যোগ দিলেন। কিন্তু ওই যে প্রতি আক্রমণ। এমন আরেক আক্রমোনে উঠে আরেক গোল দিয়ে বসল নরওয়ে। রগচটা হিটলারের আর সহ্য হলো না। সঙ্গে সঙ্গে মাঠ ছাড়লেন। জীবনে আর কখনো তাঁকে ফুটবল মাঠে দেখা যায়নি। হিটলার তাই কোন ক্লাবের সমর্থক ছিলেন, এ প্রশ্নের উত্তর হবে, “হিটলার ফুটবলই দেখতেন না!”