Thank you for trying Sticky AMP!!

১০০ কোটি টাকার ফুটবল চলে ২১০০ টাকার বলে!

একে তো বর্ষা মৌসুমে ফুটবল, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নিম্নমানের বল। সংগৃহীত ছবি
>প্রিমিয়ার ফুটবলে ১৩টি ক্লাব খরচ করছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। অথচ দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এ লিগে খেলা হয় ২ হাজার ১০০ টাকা দামের কসকো বল দিয়ে

‘বল মারি এক দিক, আর যায় আরেক দিক।’

হাত ও পায়ের ইশারায় ক্ষোভ উগরে কথাটা বলছিলেন আবাহনীর ডিফেন্ডার মাসিহ সাইগানি। এএফসি কাপের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচ খেলে যে ডিফেন্ডার ৩ গোল করতে পারেন, তাঁর ফুটবল ‘টেকনিক’ নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আফগান এ ডিফেন্ডারকে এএফসি কাপে যতটা স্বচ্ছন্দ দেখায়, দেশের প্রিমিয়ার লিগে তা নয়। এর অন্যতম কারণ ঘরোয়া লিগে যে বল দিয়ে খেলা হয়, তা মানসম্মত নয়। মাঠে মাসিহর জন্য বলকে বশে আনা বেশ কঠিন।

শুধু মাসিহ নন, বলের মান নিয়ে অভিযোগ জাতীয় দলের খেলোয়াড় থেকে শুরু করে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলে আসা বসুন্ধরা কিংসের ফরোয়ার্ড দানিয়েল কলিন্দ্রেসসহ একাধিক বিদেশি ফুটবলারের। সবারই অভিযোগ, যে বল দিয়ে খেলা হচ্ছে, তা দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগের জন্য উপযুক্ত নয়। অভিযোগ ধরে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে শুরু হয় বলের মান যাচাই। এতে দেখা যায়, মাত্র ২ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে কেনা ভারতে তৈরি কসকো বল দিয়ে চলছে প্রিমিয়ার লিগ। যে বল স্বয়ং উৎপাদনকারী দেশ ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলেই দেখা যায় না। অথচ সস্তায় সে বল আমদানি করে দেদার খেলা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।

সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এবারের মৌসুমকে আলাদা করা যায় বেশ কিছু কারণে। অনেক দিন পর দেশে বিশ্বকাপ খেলে আসা ফুটবলারসহ বেশ কিছু ভালো বিদেশি খেলোয়াড়ের সমাগম ঘটেছে। প্রায় প্রতিটি দলের ডাগ আউটেই ভালো মানের কোচ। ভালো ফুটবল উপহার দিতে বেশির ভাগ ক্লাবের টাকা খরচে অনীহা নেই। প্রিমিয়ার লিগের ১৩টি ক্লাব খরচ করেছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। লিগের জন্য পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ৩ লাখ ডলার বা প্রায় আড়াই কোটি টাকা। অথচ শত কোটি টাকার লিগে বাফুফে খেলা চালায় ২ হাজার ১০০ টাকার বল দিয়ে। ভাবা যায়! বলের দাম যে ২ হাজার ১০০ টাকা, তা স্বীকার করেছেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ, ‘ভারত থেকে আনা কসকো বলের দাম ২ হাজার ১০০ বা ২ হাজার ১৫০ টাকার মতো পড়ে।’


তাই খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে, বল মারি এক দিক, যায় আরেক দিক। এতে ঘরোয়া লিগে তো বটেই মোটা দাগে ক্ষতি হয় জাতীয় দলেরও। কারণ নিম্নমানের কসকো বল দিয়ে লিগ খেলে উন্নত নাইকি বা মলটেন বলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন না খেলোয়াড়েরা। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এএফসি টুর্নামেন্টে নাইকি দিয়ে খেলা হলেও এ বছর থেকে মলটেন বলকে অফিশিয়ালি স্বীকৃতি দিয়েছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)। অর্থাৎ বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশকে খেলতে হবে জাপানি মলটেন বলে।

জামাল ভূঁইয়াদের আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলতে হয়েছে এ বল দিয়ে। ফাইল ছবি

বাফুফে দাবি অনুযায়ী ইচ্ছে করলেই তারা ভালো বলের ব্যবস্থা করতে পারবেন। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। দামি বল দিয়ে ঘরোয়া ফুটবল চালানোর সমস্যার কথা তুলে ধরলেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক, ‘একটা নাইকি বলের দাম ১৬০ ডলার বা সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। প্রিমিয়ার লিগে অনেক ক্লাবই আছে, যাদের এ দামে বল কিনে অনুশীলন করার সামর্থ্য নেই।’

কিন্তু ভালো ফুটবল উপহার দিতে প্রয়োজন ভালো বল। আর উন্নত মানের বলের জন্য বসুন্ধরা কিংস সভাপতির কাছে বেশ কয়েকবার অভিযোগ জানিয়েছেন তাদের দুই বিদেশি খেলোয়াড় কোস্টারিকান কলিন্দ্রেস ও ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার মার্কোস ভিনিসিয়ুস। তাই বাফুফেকে বল পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছিলেন ক্লাব সভাপতি ইমরুল হাসান, ‘১৩টি দল প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো খরচ করছে। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে এমন বল দিয়ে খেলা আশা করা যায় না। আমাদের কলিন্দ্রেস ও মার্কোস শুরু থেকেই বলছে এ বল খেলার জন্য উপযুক্ত নয়। এতে তাঁরা প্রত্যাশামাফিক সুইং পান না। আমরা ফেডারেশনকে বল পরিবর্তনের কথা জানিয়েছিলাম। লিগের দ্বিতীয় পর্ব থেকে বল পরিবর্তনের কথাও ছিল।’

প্রায় একই অভিযোগ আরেক করপোরেট ক্লাব সাইফ স্পোর্টিংয়েরও। এ মানের বল দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগ চালানো উচিত নয় বলে মনে করেন ক্লাবটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরীরও, ‘ভালো ফুটবলের জন্য ভালো বলের প্রয়োজন। এ কসকো বল বৃষ্টিতে ভিজলে ভারী হয়ে যায়। বলের গড়ন পাল্টে যায়। ভালো ফুটবলের জন্য আগামী মৌসুম থেকে বল পাল্টানো উচিত।’

জাতীয় দলেও রয়েছে বল নিয়ে অভিযোগ। জাতীয় দলে অনুশীলনের জন্য উন্নত মানের বল সরবরাহ করা হলেও লিগে খেলতে হয় সেই নিম্নমানের বল দিয়েই। বিশ্বকাপ প্রাক্‌–বাছাইয়ে লাওসের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে বল নিয়ে সমস্যায় পড়েছিল জাতীয় দল। সে ম্যাচের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন গোলরক্ষক আশরাফুল রানা, ‘আমরা লিগে খেলেছি এক বল দিয়ে। জাতীয় দলে অনুশীলন করেছি আরেক বল দিয়ে। আর লাওসের বিপক্ষে তাদের মাঠে খেলা হয়েছে অন্য বল দিয়ে। এটা তো একটা সমস্যাই।’

বল নিয়ে দেরিতে হলেও বাফুফের বোধোদয় ঘটেছে। ভবিষ্যতে এএফসির টুর্নামেন্টে যে বল দিয়ে খেলা হয়, সে বল দিয়েই লিগ চালানোর আশার কথা শোনালেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক, ‘আমরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু বলের কোটেশন দেখেছি। আশা করছি, সামনের মৌসুম থেকেই নাইকি বা এএফসির টুর্নামেন্ট যে বল দিয়ে খেলা হয়, সেগুলো দিয়েই চালানো হবে ঘরোয়া লিগ।’

এমনিতেই দেশের ফুটবলে দর্শকখরা। সেখানে যদি উন্নত মানের বলের অভাবে ভালো ফুটবলটাই না খেলা যায়, তাহলে ক্লাবগুলো টাকা খরচ করে কেন ভালো ফুটবলার আনবে? আর দর্শকেরাই–বা কেন গাঁটের পয়সা ও সময় খরচ করে ঘরোয়া ফুটবল দেখতে বসবে গ্যালারিতে?