নিশ্চয়ই এখন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন জোসে মরিনিও। মাথায় হাত দিয়ে কেবল বসেই নেই, ক্রমাগত মাথা চুলকে যাচ্ছেন। আর কী করলে কী হবে—টটেনহামের পর্তুগিজ কোচের ভাবনা এখন এমনটাই। কিছুতেই যে কিছু হচ্ছে না!
কাল ৫–৪ গোলে এভারটনের কাছে হেরে এফএ কাপ থেকে বিদায় নিয়েছে টটেনহাম। ৯ গোলের দুর্দান্ত এই থ্রিলার মরিনিওকে দলের সমস্যাগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। চলতি মৌসুমে টটেনহামের শুরুটা ছিল দুর্দান্তই। প্রতি–আক্রমণে প্রতিপক্ষকে দিশেহারা করে চমৎকার কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল মরিনিওর দল। শুরুতে প্রচুর গোলও পেয়েছে। গোল পাওয়ার ব্যাপারটি অবশ্য অব্যাহতই। কালই তো এভারটনের বিপক্ষে চারটি গোল আছে টটেনহামের। কিন্তু তাতে কী! হার তো এড়ানো যায়নি। টটেনহামের খেলাটা এখন ভক্তরা ধরে ফেলেছে। তারা তাদের যেমন অপার আনন্দে পুলকিত করতে পারে, তেমনি ভয়াবহ পারফরম্যান্স দিয়ে তাদের বড় বড় আঘাতও দিতে পারে। মরিনিওর সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় এটিই।
মৌসুমের শুরুর দিকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৬–১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল টটেনহাম। সাউদাম্পটন তাদের কাছে হেরেছিল ৫–২ গোলে। এর পরপরই ওয়েস্ট হামের কাছে ৩–০ গোলে এগিয়ে গিয়েও ৩–৩ গোলে ড্র করে তারা। ম্যানচেস্টার সিটিকে ২–০ গোলে হারিয়ে অবশ্য কিছুদিনের জন্য প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠেছিল তারা। কিন্তু এরপরই পতনের শুরু। কোনো কিছুই যেন পক্ষে যাচ্ছে না মরিনিও ও টটেনহামের।
বিশেষ করে চেলসির বিপক্ষে গত সপ্তাহে ১–০ গোলে হারের পর তীব্র সমালোচনার মধ্যে পড়েছে টটেনহামের খেলা। ভক্তদের অভিযোগ, প্রিয় দলের খেলা নাকি চোখে দেখা যায় না! ফেসবুক, টুইটারেও এ নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। খুব সম্ভবত টটেনহামের কোচ হিসেবে ১৫ মাসের সময়কালে সবচেয়ে বাজে সময়টা দেখা শুরু করেছেন তিনি।
এভারটনের বিপক্ষে ম্যাচটি ১৯৬১ সালের পর এফএ কাপের সবচেয়ে হাই স্কোরিং ম্যাচ। হ্যারি কেইনকে ছাড়াই মাঠে নেমে অবশ্য টটেনহাম আক্রমণাত্মক খেলাই শুরু করেছিল। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই সানচেজের গোলে ১–০–তে এগিয়ে যায় টটেনহাম। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষের দিকে মাত্র ৭ মিনিটের মাথায় ৩ গোল হজম করে মরিনিওর রক্ষণ। ৩৬ মিনিটে ডমিনিক কালভার্ট–লুইন গোল করে সমতায় ফেরান এভারটনকে। এরপর ৩৮ মিনিটে রিচার্লিসন আর ৪৩ মিনিটে সিগার্ডসন এভারটনকে এগিয়ে নেন ৩–১ গোল।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে এরিক লামেলা এভারটনের জালে বল ফেলে ব্যবধানটা কমান (৩–২)। সানচেজ ৫৭ মিনিটে সমতায় ফেরান টটেনহামকে। কিন্তু রিচার্লিসন ৬৮ মিনিটে ৪–৩ গোলে এগিয়ে নেন এভারটনকে। হ্যারি কেইন আবার সমতায় ফেরান ৮৩ মিনিটে। কিন্তু যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে বের্নার্ড কপাল পোড়ান টটেনহামের। কালকের ম্যাচ নিশ্চিত করেই জানিয়ে দিয়েছে, লিগে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচের আগে নিজের রক্ষণকে নিয়ে যথেষ্ট কাজ করতে হবে মরিনিওকে। হয়তো কিছু কিছু কৌশল বদলাতেও হতে পারে তাঁকে।
ম্যাচ শেষে টটেনহাম কোচের কণ্ঠেও রক্ষণ দুর্বলতা নিয়ে দুশ্চিন্তাই প্রকাশ পেয়েছে, ‘একটা ম্যাচে যখন কেউ ৪ গোল করতে পারে, তাহলে সে জিততেও পারে। আমরা যেভাবে খেলেছি, তাতে আমাদেরই জেতা উচিত ছিল। আমরা আক্রমণাত্মক খেলা খেলেছি। এ ধরনের খেলার পর একটা দল তখনই হারবে, যখন আপনি রক্ষণে ভয়াবহ সব ভুল করবেন।’
এ ভুল শোধরানোর উপায়ই দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে মরিনিওকে। নয়তো তাঁর কপালের ভাঁজটা ক্রমেই বাড়তে থাকবে।