Thank you for trying Sticky AMP!!

'বলতে না পারা' সমস্যায় জর্জরিত মোহামেডান

দল বদলের আনুষ্ঠানিকতা সারছে মোহামেডান স্পোর্টিং লিমিটেড। ফাইল ছবি
>প্রিমিয়ার লিগে আবার টানা হ্যাটট্রিক পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং লিমিটেড। চলতি লিগে চার ম্যাচ খেলে এক জয় ও তিন পরাজয়ে মাত্র ৩ পয়েন্ট নিয়ে তেরো দলের মধ্যে মোহামেডানের অবস্থান এগারো তম।

কুইজের প্রশ্ন হতে পারে। ঘরোয়া ফুটবলের কোন পর্যায়ে খেলে থাকে নোফেল স্পোর্টিং ক্লাব? নিশ্চিতভাবে বেশির ভাগ মানুষেরই জানা নেই উত্তরটা। নোফেল নামে যে একটি ক্লাব আছে, তাই বা কজন জানেন! অথচ প্রিমিয়ার লিগের নবাগত দলটির কাছেও স্বাধীনতা কাপে হেরেছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। তা-ও আবার ২-০ গোলে। এই হারটিই দর্শকপ্রিয় এ ক্লাবটির দুর্দশার উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন।

মোহামেডানের সমর্থকেরা এখন প্রিয় ক্লাব নিয়ে বোধ হয় চিন্তা-ভাবনা করাও ছেড়ে দিয়েছেন। সেটি না করে উপায় আছে? এক সময় যে ব্যাপারগুলো তাদের দূরতম ভাবনাতেও আসত না, ইদানীং যে সেগুলিই ঘটছে। মোহামেডান হারছে নোফেল স্পোর্টিংয়ের মতো নবাগত ক্লাবের কাছে। লিগে করেছে হারের হ্যাটট্রিক । অবস্থান করছে তলানিতে।

সমর্থকদের পক্ষে এই ফল মেনে নেওয়া ভয়ংকর কষ্টের। মেনে নিতে পারছেন না নিখাদ ফুটবলপ্রেমীরাও। মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাব যদি দিনের পর দিন ব্যর্থতার ঘেরাটোপে বন্দী থাকে, সেটি তো ফুটবলের জন্যও খুব সুখবর নয়। সবার মনেই শঙ্কা তবে কী, ভিক্টোরিয়া, ওয়ান্ডারার্স, আজাদ স্পোর্টিংয়ের পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছে এই ক্লাব! দেশের ফুটবলের পরিচয় যে ক্লাব গুলিকে দিয়ে, তাদের অন্যতম মোহামেডান যদি ভিক্টোরিয়া, ওয়ান্ডারার্স আর আজাদের পরিণতি বরণ করে, সেটি কী খুব ভালো ব্যাপার? আবাহনীর পাঁড় সমর্থকেরাও তো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের জন্য ব্যথিত!

ফুটবলপ্রেমীরা যতই শঙ্কিত হন, যারা মোহামেডানের মতো একটি ক্লাবের নেতৃস্থানীয় পদে বসে আছেন, তাদের তো কোনো হেলদোল নেই। যেনতেন প্রকারে নিজেদের চেয়ারটা ধরে রাখাই তাদের মূলমন্ত্র। মোহামেডান চুলায় যাক, তাদের কি! ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’—এটিই মোহামেডান কর্মকর্তাদের মূলমন্ত্র।

মোহামেডানের কর্তারা খুব বড় মুখ নিয়ে একটা কথা বলেন—‘আমরা তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দলই গড়ি নি।’ এ কথা বলেই তারা খুশি, দায়িত্ব এড়ান। ফুটবলপ্রেমীরাও বলতে পারেন, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দল কেউ না-ও গড়তে পারে, কিন্তু তাই বলে এমন হাল! আবাহনী তো গত ২০ বছরে অনেক বারই ‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল’ গড়তে পারেনি, কিন্তু আবাহনীর অবস্থান কী কখনো লিগের শীর্ষ চারের নিচে গেছে?

ফেডারেশন কাপে বসুন্ধরার কাছে ৫-২ গোলে হেরে চলতি মৌসুম শুরু করেছিল তারা। পরে টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়। এর পরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় হয়েছে স্বাধীনতা কাপেও। স্বাধীনতার কাপের তিন ম্যাচে সাদা-কালোরা তো গোলই করতে পারেনি। বিজেএমসিকে ২-১ গোলে হারিয়ে লিগ শুরু করলেও এর পরে হ্যাটট্রিক পরাজয়। এর মধ্যে আরামবাগের বিপক্ষে হজম করেছে ৪ গোল। লিগের চার ম্যাচে তিন গোলের বিপরীতে হজম করেছে ৯ গোল। পরিসংখ্যানই বলছে, সলিলসমাধি হতে এই ক্লাবের খুব বেশি বাকি নেই।

মোহামেডানের এই হাল কেন? দলের অভিজ্ঞ ফুটবলার জাহিদ হোসেন এমিলি ভাগ্যকে দুষছেন, ‘আমরা শেষ যে তিনটি ম্যাচ হেরেছি, প্রতিটি ম্যাচেই আমরা ভালো খেলেছি। আমাদের গোল মিস হয়েছে অনেক। এ ছাড়া রেফারিং মান নিয়েও আপত্তি আছে আমাদের।’

খেলার মাঠের মতোই বিশৃঙ্খল অবস্থা ডাগআউটে। প্রথমে ইংল্যান্ড থেকে কোচ হিসেবে উড়িয়ে আনা হয়েছিল ক্রিস্টোফার ইভানসকে। কিন্তু শুরু থেকেই দলের সঙ্গে অনিয়মিত ইংলিশ কোচ। এর পরে নানা নাটকীয়তায় চুকে যায় ক্রিস্টোফার-মোহামেডান অধ্যায়। এখন মোহামেডানের ডাগআউট সামলাচ্ছেন বেশ কয়েক বছর ফুটবল কোচিংয়ে অনিয়মিত থাকা আলী আসগর নাসির। দলের সমস্যার প্রশ্নে তাঁর সোজা জবাব, ‘আমাদের সমস্যা আছে অনেক। কিন্তু তা বলা যাবে না। মাঠের সমস্যাগুলো আমি কাজ করতে শুরু করেছি। আমাদের স্ট্রাইকাররা গোল মিস করছে , রক্ষণভাগ প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের পায়ে বল তুলে দিচ্ছে। এসবের জন্য সার্বিকভাবে আমরা ভালো খেলেও হেরেছি। সমস্যাগুলো শোধরাতে পারলেই খারাপ সময় থেকে বের হয়ে আসতে পারবে দল।’

মাঠের খেলোয়াড়দের ভুলগুলো না হয় কমিয়ে আনবেন কোচ। কিন্তু না বলতে পারা সমস্যাগুলো পেছনে ফেলে দুরবস্থা কাটাতে পারবে তো মোহামেডান?