Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রবীণ ক্রীড়া সাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের ‘মাঠ–গ্যালারি–স্টেডিয়াম’র প্রকাশনা অনুষ্ঠান

মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের ‘মাঠ–গ্যালারি–স্টেডিয়াম’

জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার আবদুস সালাম হলরুমটা মুহূর্তেই হয়ে গেল স্টেডিয়ামপাড়া! একে একে হলরুমে ঢুকতে লাগলেন সব্যসাচী খেলোয়াড় বশীর আহমেদ, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু, সাবেক ফুটবলার ও হকি খেলোয়াড় প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, ফুটবলার কর্নেল (অব.) ওবাইদুল্লাহ খান, ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় কামরুন্নাহার ডানা।

এসেছিলেন সাবেক ক্রিকেটার ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচক লুৎফর রহমান (মাখন), বিসিবির পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম, ইংরেজি দৈনিক অবজারভারের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মৃণাল কান্তি রায়, ক্রীড়ালেখক ইকরামউজ্জমান, ক্রীড়াজগত সম্পাদক দুলাল মাহমুদ, প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।

আজ বিকেলে সবার একত্র হওয়ার উপলক্ষ ছিল প্রবীণ ক্রীড়া সাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের বই ‘মাঠ-গ্যালারি-স্টেডিয়াম’–এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ক্রীড়া সম্পাদক দিলু খন্দকারের উপস্থাপনায় যা হয়ে উঠল ক্রীড়াঙ্গনের পুরোনো দিনের মিলনমেলা।

মাঠ–গ্যালারি–স্টেডিয়াম বই নিয়ে বলছেন লেখক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান

বয়স ৮২ পেরিয়ে গেছে গত সেপ্টেম্বরে। এই বয়সে মঞ্চে বসে বেশ আগ্রহভরেই একের পর এক নিজের বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। চোখেমুখে আনন্দটাও ফুটে উঠছিল পরিষ্কার। এই বই যে তাঁর সারা জীবনের একটা অপূর্ণতা ঘুচিয়ে দিয়েছে।

ফুটবলের সোনালি দিনের ফুটবলারদের নিয়ে লেখা বইয়ের পাণ্ডুলিপি নিয়ে প্রকাশকদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন। কিন্তু প্রকাশকেরা বই প্রকাশের জন্য টাকা চাওয়ায় আর তা প্রকাশ করা হয়নি। অবশেষে জীবনের গোধূলিবেলায় এসে নিজের স্বপ্নটা পূরণ করতে পেরেছেন কামরুজ্জামান।

যাতে জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আবদুস সালামের বড় অবদান। তিনিই এই বইয়ের প্রকাশক। যেটি আসলে নিজের খেলোয়াড়ি ও সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ক্রীড়াজগত–এ লেখা মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের ‘মাঠ-গ্যালারি-স্টেডিয়াম’ নামক কলাম থেকে নির্বাচিত ১১২টি কলামের সংকলন। যাতে ফুটে উঠেছে এ দেশের খেলাধুলার ইতিহাস। অনেক অজানা তথ্য, নিজের খেলোয়াড়ি জীবন ও অন্য খেলোয়াড়দের কথা। স্মরণীয় সব ম্যাচ ও পারফরম্যান্সের বর্ণনার সঙ্গে ঘটেছে তাঁর নিজের উপলব্ধির প্রকাশও।

প্রকাশনা অনুষ্ঠান শেষে আড্ডা

এই বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে বক্তাদের আলোচনা শুধু বইটিতেই কেন্দ্রীভূত ছিল না, খেলোয়াড় ও সাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের সঙ্গে ব্যক্তি কামরুজ্জামানও উঠে আসেন তাতে। বয়সের ভারে গুছিয়ে কথা বলতে পারছিলেন না মৃণাল কান্তি রায়। কামরুজ্জামানের প্রথম প্রতিবেদন তিনিই ছেপেছিলেন। কামরুজ্জামানের সাংবাদিক হয়ে ওঠার গল্পগুলো শোনালেন ৮৮ বছর বয়সী এই সাংবাদিক, ‘ছায়াপথ পত্রিকায় আমি কামরুজ্জামানের একটি লেখা নির্দ্বিধায় ছেপে দিলাম। ওটাই ছিল তার প্রথম কোনো লেখা।’

সাংবাদিকতায় আসার আগে দারুণ খেলোয়াড়ি এক জীবনও কেটেছে কামরুজ্জামানের। ঢাকার শীর্ষ ফুটবল ও হকি লিগে হ্যাটট্রিক করেছেন। ঢাকার শীর্ষ ক্রিকেট লিগে সেঞ্চুরিও। নিজের পাড়ার দল ন্যাশনাল স্পোর্টিংয়ের হয়ে ক্রিকেট লিগে করেছেন দুটি সেঞ্চুরি। ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও এই খেলা অন্তঃপ্রাণ মানুষটি।

Also Read: ‘কিং’ সাকিবে অবাক নন মাশরাফি

বশীর আহমেদ বেশির ভাগ সময় খেলতেন কামরুজ্জামানের প্রতিপক্ষ হিসেবে। সাংবাদিক কামরুজ্জামানের অন্য একটি গুণের কথা বললেন এই অনুষ্ঠানে, ‘আমি একসময় বিওএর (বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন) সেক্রেটারি ছিলাম। সাংবাদিক হিসেবে বিদেশে তাকে অনেকবার নিয়ে যেতে চেয়েছি। সে রাজি হয়নি। তার আত্মমর্যাদা প্রখর।’

কামরুজ্জামানের সঙ্গে ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টুর বন্ধুত্ব অনেক বছরের পুরোনো। সেই স্মৃতিচারণা করে তিনি বললেন, ‘১৯৬৩ সালে রাজশাহীতে কামরুজ্জামানের সঙ্গে ফুটবল খেলতে যাই। আমার বিয়ের দিন ছিল সেটা। বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। যদিও আমরা হেরে যাই ২ গোলে। ওর অনুরোধেই গিয়েছিলাম সেদিন। আসলে ও আমাকে খেলার বাইরেও অনেক কিছু শিখিয়েছে।’

Also Read: ব্যাট হাতে সেরা সময় সাকিবের

অনুষ্ঠানের সভাপতি লুৎফর রহমান (মাখন) কামরুজ্জামানকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করার পর প্রশ্ন তোলেন, ‘বইটা এত দেরিতে কেন প্রকাশ করা হলো?’

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ছিলেন এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। নিজে একসময় ক্রিকেট খেলতেন। এরও আগে খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের পেছনে ঘুরেই তাঁর কৈশোর কেটেছে। সেই স্মৃতিচারণা করার পর বললেন, ‘মাঠ-গ্যালারি-স্টেডিয়াম’ বইটা তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে সেই দিনগুলোতে, ‘এই বইয়ে অসংখ্য খেলোয়াড়ের নাম আছে। আমার জন্য এই নামগুলো স্মৃতিকাতর করে তোলার মতো। ঢাকার বাইরের কোন খেলোয়াড় কোন জেলা থেকে উঠে এসেছে, সেটাও লেখা আছে বইয়ে। ঐতিহ্য, ইতিহাসের নানা দিক, অনেক ধরনের তথ্য আমরা এই বইয়ে পাব। এই বই বের করাটা ভালো কাজ হয়েছে। এই ধরনের বই যারা আগামীতে ক্রীড়া সাংবাদিকতার চর্চা করবে, তাদের জন্য আকরগ্রন্থ হিসেবে কাজ করবে। এই দিক থেকে জামান ভাইয়ের চেষ্টা–উদ্যোগ খুবই ভালো।’

কামরুজ্জামানের ‘মাঠ–গ্যালারি–স্টেডিয়াম’ বইটি এবারের বইমেলায় ৫৫০ ও ৬০০ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ক্রীড়াজগতেও পাওয়া যাবে বইটি।