Thank you for trying Sticky AMP!!

আর কত দিন অংশগ্রহণই বড় কথা?

মার্চ পাস্টেই সার বাংলাদেশের এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ। বর্ণাঢ্য সমাপনী অনুষ্ঠানে শেষ হলো এবারের আয়োজন। ছবি: এএফপি
১৯৮৬ সালের পর প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমস থেকে একেবারেই খালি হাতে ফিরছে বাংলাদেশ। যেখানে কিনা যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ও আফগানিস্তানের মতো দেশও পদক জিতেছে। ম্যাকাওয়ের মতো ছোট্ট দেশ তুলে নিয়েছে ১টি সোনাসহ ৫টি পদক।


‘মিট দ্য মোস্ট পিপুল কান্ট্রি ইন দ্য ওয়ার্ল্ড হু নেভার উইন এন অলিম্পিক মেডেল’ (অলিম্পিকে পদকবিহীন একটি অধিক জনসংখ্যার দেশের সঙ্গে পরিচিত হই) শিরোনামে বাংলাদেশকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন হয়েছিল আমেরিকার জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইউএসএ টুডেতে। স্বাভাবিকভাবে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু বাংলাদেশের ব্যর্থ অলিম্পিক ইতিহাস। ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ বা জনসংখ্যার দিক থেকে অষ্টম স্থানে থাকা সত্ত্বেও যে দেশের কিনা বিশ্ব ক্রীড়া মহাযজ্ঞে কোনো পদক নেই। অদূর ভবিষ্যতেও নেই কোনো আশার আলো।

অলিম্পিক তো অনেক দূরের বাতি; এশিয়ান গেমসেই অলিম্পিকের সেই মর্মবাণী, ‘পদক নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা’ মেনে বরাবর দল ভারী অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ। আরও কত দিন অংশগ্রহণই হয়ে থাকবে বড় কথা, কে জানে?

ইন্দোনেশিয়ায় কাল সমাপ্ত এশিয়াডে বাংলাদেশ থেকে ১৪টি খেলায় ১১৮ জন অ্যাথলেট, কর্মকর্তাসহ মোট ১৬৪ জনের বিশাল বহর যোগ দিয়েছিল। কিন্তু দলে দলে তাঁরা ফিরে এসেছে খালি হাতে। এত দিন দেশে ফেরার আগে তবু পদক তালিকায় বাংলাদেশের নামটা দেখতে পাওয়া যেত। এবার সেই সৌভাগ্যও হলো না। তাই ১৯৮৬ সালের পর এই প্রথম এশিয়াডে পদকশূন্য বাংলাদেশ। একটি পদকের আশা ছিল যে মহিলা কাবাডিতে, তারা পেরোতে পারেনি গ্রুপ পর্বই।

এশিয়াডে অংশ নেওয়া ৪৩ দেশের ৩৭টিই নাম তুলেছে পদক তালিকায়। নাম আছে প্রতিবেশী ছোট দেশ নেপালও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ও সিরিয়ার মতো দেশগুলোরও। নেপাল জিতেছে একটি রুপা। আফগানিস্তান ২টি ব্রোঞ্জ। সিরিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুরুষ হাইজাম্পে ব্রোঞ্জ জিতেছে। ম্যাকাওয়ের মতো ছোট্ট দেশ তুলে নিয়েছে ১টি সোনাসহ ৫টি পদক। এই দেশগুলো কোন ‘জাদুবলে’ পদক জেতে যে বাংলাদেশ পারে না। অথচ কত স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বলে ফেলি, ‘আমরা হলাম খেলাপাগল জাতি।’

এশিয়াকে এবার সবচেয়ে বেশি চমকে দিয়েছে প্রতিবেশী ভারত। ১৫ সোনার সঙ্গে ২৪ রুপা ও ৩০টি ব্রোঞ্জ জিতেছে তারা। ১৫ সোনার সাতটিই এসেছে অ্যাথলেটিকস থেকে। এর মধ্যে হেপ্টাথলনে সোনা এনে দেওয়া দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা জলপাইগুঁড়ির মেয়ে স্বপ্না বর্মণকে দেখেই বাংলাদেশি হিসেবে কষ্টটা একটু বেড়েই যায়। আমাদের নিকট প্রতিবেশী হওয়ায় শারীরিক গঠন, খাদ্যাভ্যাসসহ সবই প্রায় এক। কিন্তু স্বপ্না পারেন আমরা পারি না। স্বপ্না যেখানে দেশকে সোনা এনে দিয়েছেন, ৮০০ মিটারে অংশগ্রহণ করে ২.২৬.৫৯ সময় নিয়ে বাংলাদেশি অ্যাথলেট সুমি আক্তার ২০ জনের মধ্যে হয়েছেন ১৮তম।

শুধু জলপাইগুড়ির মেয়েই নন, ১০০ ও ২০০ মিটারে রুপাজয়ী ভারতের দ্যুতি চাঁদ ওডিশার মেয়ে। স্বপ্না-দ্যুতি চাঁদরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, আবহাওয়া বা জলবায়ুর খারাপ প্রভাবের ফলে বাংলাদেশ থেকে অ্যাথলেট তৈরি হওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার বলে আমরা যে গলা ফাটাই। তা ঠিক নয়। পদক জয়ের জন্য কঠোর পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে সঠিক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। যা ভারত দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে বলে জানিয়েছেন ভারত অ্যাথলেটিকস দলের ম্যানেজার রবীন্দ্র চৌধুরী, ‘আমাদের এই সাফল্যের বড় কারণ দীর্ঘ মেয়াদে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ। ১৪ বছর বয়সে অ্যাথলেটদের আমরা বাছাই করে টানা প্রশিক্ষণে রেখেছি। সিনিয়র ও জুনিয়র দুটি দলকে সার্বক্ষণিক দুটি কোচ দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে আমরা ওদের বিদেশে পাঠাই।’

কিন্তু বাংলাদেশের গল্পটা পুরোপুরিই উল্টো। বছরে নামকাওয়াস্তে জাতীয় পর্যায়ে অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা হয় হাতে গোনা দু-একবার। সেখানে খেলোয়াড়ের জন্য ৪০০ টাকা খাওয়ার বরাদ্দে ২০০ টাকাই ‘হাপিস’ হয় বলে অভিযোগ আসে প্রায়ই! দুর্দশার যে চিত্রগুলো জানা ক্রীড়া কর্তাদেরও।

এশিয়ান গেমসে এবার বাংলাদেশের সেরা অর্জন বলতে রিকার্ভে রোমান সানা কোয়ালিফাইংয়ে তৃতীয় স্থান ও রিকার্ভ মিশ্র দলীয় ইভেন্টে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা। অলিম্পিক পদকের আশায় সম্প্রতি বাংলাদেশের যে দুটি ফেডারেশন বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে, শুটিং বাদে অন্যটি এই আর্চারি। সিটি গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় আর্চারি ফেডারেশনের দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা আছে। দুই পক্ষে পাঁচ বছরের চুক্তির দ্বিতীয় বছর চলছে। যার ফল কিছুটা হলেও দৃশ্যমান এই জাকার্তা এশিয়াডে।

কিন্তু ভালো করতে পারেনি শুটিং। শেষ কমনওয়েলথে রুপাজয়ী বাকি ও শাকিল যথাক্রমে এশিয়াডে ১০ মিটারে ১৯তম ও ১০ মিটার পিস্তলে ২২তম হয়েছেন। ব্যর্থতার কারণটা বাংলাদেশ দলের ড্যানিশ কোচ ক্রিস্টিয়ানসেন ক্লাউসের মুখ থেকেই শুনুন, ‘বেশি খেলার সুযোগ না হলে এখানে এসে মাথা তুলে দাঁড়ানো যাবে না। দেখুন, কমনওয়েলথে রুপাজয়ী বাকি এখানে ১০ মিটারে ১৯তম, ১০ মিটার পিস্তলে শাকিল ২২তম। বুঝতেই পারছেন, এখনো কতটা পিছিয়ে আমাদের অ্যাথলেটরা।’ ক্রিস্টিয়ানসেনের বক্তব্যের সার কথা এই এশিয়ান গেমসে আসা বাংলাদেশের প্রতিটি সদস্যেরই নিশ্চিত উপলব্ধি।

এত দিন এশিয়াডে এসে খাবি খাওয়া বাংলাদেশের ফুটবল দল এবার অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো করেছে। এই প্রথম উঠেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে। আগে সব সময় ফিরতে হয়েছে গ্রুপ থেকেই। সেই ইতিহাস এবার ফুটবল দল পাল্টে দিয়েছে। হকিতে সাম্প্রতিক সময়ে ওমানের বিপক্ষ জিততে পারাটাই আসল। তা পারলেও সর্বশেষে ষষ্ঠ হতে পারার আনন্দ।

১৯৮৬ সালের পর এই প্রথম এশিয়ান গেমস থেকে কোনো পদক ছাড়াই ফিরছে বাংলাদেশে। কেন এই ব্যর্থতা? কারণগুলো আসলে সবারই জানা। নতুন করে কর্মকর্তারা আর কী বলবেন! বাংলাদেশের শেফ ডি মিশন আবুল হোসেন পুরোনো কথাটায় নতুন করে বললেন, ‘সবকিছুর মূলেই কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশ। ভালো কোচ দরকার। সেই কোচ কি আমরা দিতে পেরেছি? দীর্ঘ মেয়াদে ট্রেনিং দরকার। আমরা কি সেটা ভালোভাবে দিতে পেরেছি? খেলোয়াড়দের যে আশা-ভরসা, ভালো জীবনযাপন, সেটা কি আমরা দিতে পেরেছি? খেলোয়াড় আসে আর অন্য পেশায় চলে যায়। আমাদের কি ভালো পৃষ্ঠপোষক আছে, যে আমাদের দশজন খেলোয়াড়কে ভালোভাবে গড়ে তুলবে?’ সরল স্বীকারোক্তিই।

কিন্তু এই জাকার্তা এশিয়াডে ভরাডুবির দায় কার? বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন কি ব্যর্থতা স্বীকার করে নেবে? শেফ ডি মিশনের জবাব, ‘আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে তা দিয়েছি কি না, সেটা দেখুন। আমি মনে করি না অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ব্যর্থতা আছে। সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা করেছি।’

দায়টা আসলে ফেডারেশন, বিওএ, সরকার, খেলোয়াড়, সংগঠক—সবারই। ব্যর্থতার কারণ খুঁজে প্রতিবারই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয় গেমস শেষে। কিন্তু দেশে ফিরে সব ভুলে যান কর্তারা। তবে এই গেমস জানিয়ে গেল, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আমূল পরিবর্তন দরকার। তীব্র ঝাঁকুনি চাই। সব দেখে কি ঘুম ভাঙবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের শীর্ষ মহলের!

এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ

 

সোনা

রুপা

ব্রোঞ্জ

১৯৭৮

-

-

-

১৯৮২

-

-

-

১৯৮৬

-

-

১৯৯০

-

-

১৯৯৪

-

-

১৯৯৮

-

-

২০০২

-

-

২০০৬

-

-

২০১০

২০১৪

-

২০১৮

-

-

-