Thank you for trying Sticky AMP!!

সেকেন্ডেরও কম সময়ে হাজার মাইল পিছিয়ে বাংলাদেশ

সর্বশেষ জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে দুই দিন আগে বাংলাদেশের দ্রুততম মানব হয়েছেন হাসান মিয়া।
>আসন্ন এসএ গেমসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে (পুরুষ ও নারী) পদক জয়ের সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের?

০.৭৬ সেকেন্ড সময়। ‘মাত্র’ বলে এক ঝটকায় উড়িয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে এ ব্যবধানটা হাজার হাজার মাইলের। কল্পনাতেও যা কোনো দিন ছুঁয়ে দেখার সাহস পাওয়া যায় না। বাকি বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্যও যেন এতটাই দূরত্বের।

সর্বশেষ জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে দুই দিন আগে বাংলাদেশের দ্রুততম মানব হয়েছেন হাসান মিয়া। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিততে সময় নিয়েছেন ১০.৬১ সেকেন্ড। একটু বিশ্ব মানদণ্ডে দৃষ্টি বোলানো যাক। সর্বশেষ ডায়মন্ড লিগের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে প্রথম হয়েছেন ক্রিশ্চিয়ান কোলম্যান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড তারকা সময় নিয়েছেন ৯.৮৫ সেকেন্ড। হাসান ও কোলম্যানের পার্থক্য মাত্র ০.৭৬ সেকেন্ড, ১ সেকেন্ডেরও কম। বাস্তবতা হলো পার্থক্যটা হাজার হাজার মাইলের, হাজার হাজার দিনেরও।

এবার তাকানো যাক আরও একটু কাছে, এশিয়ান মঞ্চে। ২০১৮ এশিয়ান গেমসে এশিয়ার দ্রুততম মানব হয়েছেন সু বিংতিয়ান। চীনের এই স্প্রিন্টার সময় নিয়েছেন ৯.৯২ সেকেন্ড। এশিয়ায় জন্ম নেওয়া প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে ১০ সেকেন্ডের নিচে দৌড়ানো বিংতিয়ানের সেরা সময় অবশ্য ৯.৯১ সেকেন্ড। বিশ্ব মঞ্চ থেকে বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। আর স্প্রিন্টে ১ সেকেন্ডের ১০০ ভাগের ১ ভাগও কত গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বাংলাদেশ ১৯৯৯ সাফেও বুঝেছে একবার। বিশ্ব অ্যাথলেটিকস তো প্রতিদিনই দেখাচ্ছে সেটা।

১৮৯১ সালে ১০.৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের লুথার ক্যারি। এই সময় থেকে ১ সেকেন্ড কমিয়ে ৯.৮-এ আনতে সময় লেগেছে ৯৬ বছর। ১৯৮৭ সালে করা বেন জনসনের সেই রেকর্ডটা অবশ্য পরে বাতিল করা হয়। ফলে, আনুষ্ঠানিকভাবে এখন ১৯৯১ সালে কাল লুইসের করা ৯.৮ সেকেন্ডের সময়টাই ধরা হয়। অর্থাৎ ক্যারির ঠিক ১০০ বছর পর!

তিন দিন আগে বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী হয়েছেন শিরিন আক্তার।

দুই দিন আগে হাসান যে সময় নিয়ে হাসান দ্রুততম মানব হয়েছেন, সেটি বিশ শতকের শুরুর দিকে রেকর্ড হতো। ১৯০৬ সালে লুথারের রেকর্ড ভেঙে নিজের টাইমিংটাকে ১০.৬ করেন সুইডেনের নট লিন্ডবার্গ। গোথেনবার্গের ট্র্যাকে লিন্ডবার্গের এই রেকর্ডটা অবশ্য বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯১১ সালে জার্মানির এমিল ক্যাটারার ১০.৫০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০০ মিটার দৌড় জিতেছিলেন।

১০০ মিটার দৌড়ের টাইমিং প্রথমবারের মতো ১০-এর নিচে নামে ১৯৬৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের স্যাক্রামেন্টোতে ৯.৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে দুনিয়ায় হইচই ফেলে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জিম হাইনস। মানুষ ১০ সেকেন্ডের নিচে ১০০ মিটার শেষ করতে পারবে কি না, এই মানসিক বাধা ভেঙে দিয়েছিলেন তিনি। তবে আধুনিক প্রশিক্ষণ ও গবেষণার ফলের ১০ সেকেন্ডের ওপরে দৌড়ে বিশ্ব রেকর্ড করা বা প্রথম হওয়া জাদুঘরে চলে গিয়েছে। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের রাজা উসাইন বোল্ট তো ৯.৫৮ সেকেন্ডে দৌড়ে বিশ্ব রেকর্ডটা নিজের করে রেখেছেন ২০০৯ সাল থেকে।

বিশ্ব ও এশিয়ান মঞ্চের সঙ্গে বাংলাদেশের অ্যাথলেটদের তুলনা চলে না। আমাদের হাসানরা বছরের পর বছর তাকিয়ে থাকেন দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের দিকে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে হওয়ার কথা আছে গেমসটির। সেখানে সর্বশেষ জাতীয় অ্যাথলেটিকসে স্প্রিন্টের সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন, অতীতের সঙ্গে তা বিচার করে দেখা যেতে পারে।

প্রায় ৩ বছর আগে ১০.২৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে সোনা জিতেছিলেন শ্রীলঙ্কার হিমাশা ঈশান। ১০.৪১ সেকেন্ড সময় নিয়ে রুপা জিতেছিলেন মালদ্বীপের সাঈদ হাসান ও ১০.৬৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন শ্রীলঙ্কান মোহাম্মদ আশরাফুল। সে বিচারে হাসানের বর্তমান ১০.৬১ সেকেন্ড সময় পদকের আশা দেখাতেই পারে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে প্রতিপক্ষরাও তো বসে নেই। বরং ধরে নেওয়া যায়, এগিয়ে গিয়েছে তারা।

মেয়েদের ১০০ মিটারে এখন ১১–এর নিচে নামিয়ে এনেছেন এলিয়েন থম্পসন। শেষ ডায়মন্ড লিগে ১০.৯৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথম হয়েছে জ্যামাইকান এই স্প্রিন্টার। আর তিন দিন আগে ১২.২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী হয়েছেন শিরিন আক্তার। সব মিলিয়ে টানা নয়বারের দ্রুততম মানবী শিরিনের সঙ্গে এলিয়েনের সময়ের পার্থক্য ১.২২ সেকেন্ড।

১২.২০ শিরিনের দ্বিতীয় সেরা টাইমিং। ২০১৬ সালে গুয়াহাটি এসএ গেমসে ১১.৯৯ সেকেন্ডে দৌড়ে করেছিলেন নিজের সেরা টাইমিং। প্রায় ৩ বছর পরে এসে নিজের সেরা টাইমিংটা করতে পারলেও এসএ গেমসের ১০০ মিটারে পদক পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, সর্বশেষ ১১.৮৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন ভারতের দ্যুতি চাঁদ। সোনাজয়ী শ্রীলঙ্কার রুমেশিকা রত্নায়েক সময় নিয়েছিলেন ১১.৬০ সেকেন্ড ও ১১.৭১ সেকেন্ড সময় নিয়ে রুপা জিতেছিলেন শ্রাবণী নন্দ।

ভারতের যে দ্যুতি ১১.৮৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে এসএ গেমসে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন, সে মেয়েই গত বছর জাকার্তা এশিয়াডে ১১.৩২ সেকেন্ড সময় নিয়ে রুপা জিতেছেন। উন্নতি করে দক্ষিণ এশিয়ার মঞ্চ থেকে একেবারে এশিয়াডে। উন্নতি না করে পেছনের দিকে হাঁটার অভ্যাস মনে হয় শুধু বাংলাদেশের। ধীরে ধীরে সময়টা এতই খারাপ অবস্থা যে এখন বাংলাদেশের স্প্রিন্টারদের পাশে ভারতের স্প্রিন্টারদের মনে হয় জাপানি বুলেট ট্রেন। গতির সে বিশ্বরোডে বাংলাদেশে এখনো চলছে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি।