Thank you for trying Sticky AMP!!

হাঙরের কামড় আর দুঃস্বপ্নের ব্রিজ

>করোনার এ দিনে এত আক্রান্ত আর মৃত্যুর খবরে মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর চেয়ে কিছু অনুপ্রেরণার গল্প শুনলে কেমন হয়? আঘাত, চোট, বদভ্যাস থেকে ফিরে আসার গল্প তো অনেকই আছে খেলার জগতে। তার প্রথম পর্বে আজ কিংবদন্তি গলফার বেন হগান ও সার্ফার বেথানি হ্যামিল্টনের গল্প -
১৯৫৩ সালেই গলফের তিনটি পিজিএ ট্যুর জিতেছিলেন বেন হগান

অথচ তাঁর হাঁটতে পারারই কথা নয়
মর্মস্পর্শী দুর্ঘটনার সঙ্গে বেন হগানের পরিচয় সেই শৈশব থেকে। ১৯২২ সাল, তাঁর বয়স যখন ৯, চোখের সামনে দেখলেন বাবা চেস্টার হগান গুলিতে নিজেই নিজের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছেন। অভাবের সংসারে সাহায্য করতে তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট বেন শুরু করেন স্কুলের পর রেলস্টেশনে পত্রিকা বিক্রি।

ইতিহাসের অন্যতম সেরা মার্কিন গলফারের গলফের পথে চলার শুরু তার দুবছর পর। এক বন্ধুর পরামর্শে সাত মাইল দূরের গ্লেন গার্ডেন কভেন্ট্রি ক্লাবে ক্যাডির ভূমিকায়। পেশাদার গলফার হওয়া বয়স ১৮ হওয়ার ছয় মাস আগে, ১৯৩০ সালের জানুয়ারিতে।

শুরুর পথচলা কঠিনই ছিল। ১৯৪০ সালের মার্চের আগে একক কোনো শিরোপাই জেতেননি হগান। কিন্তু এর পরের পথচলার উত্থান-পতনের সঙ্গে এর তুলনাই চলে না।

১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা বছরগুলো মিলিয়ে ৬৩টি পেশাদার গলফ টুর্নামেন্ট জিতেছেন হগান। অথচ এই সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ গেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীতে দুবছর সেবা দিয়েছেন হগান। এরপর এল সেই ভয়াল দিন।

১৯৪৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। ঘন কুয়াশা ছিল সেদিন। গাড়িটা আস্তেই চালাচ্ছিলেন হগান। পাশে স্ত্রী ভ্যালেরি। কিন্তু ছোট্ট সরু একটা ব্রিজে উঠতেই বিপদ। ওপাশ থেকে একটা বাস অন্য গাড়িকে ওভারটেক করছিল, দুর্ঘটনা না ঘটে উপায় ছিল না। নিজেকে বাঁচাতে বা স্ত্রীকে - স্টিয়ারিং ছেড়ে পাশের সিটের দিকে লাফ দেন হগান। সেটিই হয়তো প্রাণে বাঁচিয়েছে। তবে হগানের ভাঙা হাড়ের 'লিস্টি' লম্বাই হলো - পেলভিক অঞ্চলে জোড়া হাঁড়, কলার বোন, বাঁয়ের অ্যাঙ্কেল আর পাঁজরের হাঁড়। ডাক্তাররা বলেছিলেন, গলফ খেলা তো পরের ব্যাপার, হয়তো আর হাঁটতেও পারবেন না হগান!

কিন্তু হলো কী? ৫৯ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া হগান ৯ মাস পর আবার ফেরেন গলফে! ১৯৫০ মৌসুমে পিজিএ ট্যুরে ফেরা। আর ১৯৫৩ সালে এক বছরেই তিনটি মূল পিজিএ শিরোপা জেতেন হোগান, আরেক মার্কিন কিংবদন্তি গলফার টাইগার উডসের আগে যে কীর্তি আর কারও ছিল না।

সার্ফার বেথানি হ্যামিল্টন হাত হারিয়েছিলেন হাঙরের কামড়ে। এর পরেও চ্যাম্পিয়ন সার্ফার তিনি। ছবি: এএফপি

তবে এক হাতই সই
আট বছর বয়স থেকেই সার্ফিং বোর্ড আর সাগরের সঙ্গে বন্ধুত্ব বেথানি হ্যামিল্টনের। কতটা ভালো ছিলেন সার্ফিংয়ে, তার প্রমাণ সম্ভবত এটি যে, ৯ বছর বয়সেই স্পনসর পেয়ে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সার্ফার এই মেয়ে। কিন্তু স্বপ্নের দুয়ারে ঝড়ের আঘাত হয়ে এল ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবরের সকাল।

বেথানির বয়স তখন মাত্র ১৩। প্রিয় বান্ধবী আলানা ব্লানচার্ড ও আলানার বাবা আর ভাইয়ের সঙ্গে কাউয়াইয়ের টানেলস বিচে সার্ফিংয়ে গিয়েছিল বেথানি। কিন্তু কে আঁচ করতে পেরেছিল, দুঃস্বপ্ন হয়ে ধেয়ে আসছে ১৪ ফুট লম্বা হাঙর! দৈত্যাকার সে প্রাণীর এক কামড়ে বেথানির বাঁ হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কাঁধের নিচ থেকেই!

ব্লানচার্ডরা মিলে তড়িঘড়ি বেথানিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। যতক্ষণে হাসপাতালে পৌঁছেছেন, বেথানির শরীরের ৬০ ভাগ রক্ত বেরিয়ে গেছে। সেদিন একই হাসপাতালেই আবার বেথানির বাবার হাঁটুর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সকালে বাবা নয়, মেয়েকেই নেওয়া হলো অপারেশন থিয়েটারে।

হাত হারানোর ধাক্কা, দুঃস্বপ্নের ট্রমা...সব পেরোতে কত সময় লাগতে পারে? দুঃসাহসী বেথানি কিন্তু ২৬ দিন পরই একটা টুর্নামেন্টে সার্ফিং করেছেন!

সাধারণের চেয়ে একটু লম্বা, চওড়া বোর্ড বানানো হয় তাঁর জন্য। ডান বাহুর জন্য একটা হ্যান্ডেল আছে। বাঁহাতের অভাব পোষাতে পায়ের ব্যবহার কীভাবে করতে হয়, সেটিও আরও ভালোভাবে শিখেছেন। তাঁর প্রথম জাতীয় শিরোপা আসে হাঙরের আক্রমণের ধকল কাটিয়ে ফেরার পর!

ওই দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে ফেরা তাঁকে নায়কোচিত সম্মানও এনে দেয়। এর মধ্যেই 'সৌল সার্ফার' নামে নিজের আত্মজীবনী লিখেছেন। ২০১১ সালের এপ্রিলে সেই আত্মজীবনীর নামেই একটি ফিচার চলচ্চিত্র হয়েছে বেথানিকে নিয়ে! ওহ, তাঁর অর্জনের খাতায় আছে দুটি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপসহ আটটি শিরোপাও।