Thank you for trying Sticky AMP!!

মুশতাক ওয়াইজের তোলা সেলফি, বোর্ডিং পাসের জন্য এভাবেই যুদ্ধ করতে হয়েছে শুটিং দলকে

দুবাই বিমানবন্দরে ২৫ ঘণ্টার অন্য রকম অভিজ্ঞতা শুটিং দলের

চারদিক পানিতে থইথই করছে। হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছেন বিমানে ওঠার জন্য। বোর্ডিং পাস নেওয়ার লাইন যেন শেষই হচ্ছে না। দুবাই বিমানবন্দরে এমন অভিজ্ঞতা হবে, এটা কোনো দিন ভাবেনই-নি শুটার রবিউল ইসলাম।

রিও ডি জেনিরোতে অলিম্পিক শুটিংয়ে কোটা পাওয়ার লড়াই শেষে বাংলাদেশ শুটিং দলের ৬ সদস্য ফিরছিলেন ঢাকায়। রিও থেকে দুবাই মোটামুটি দীর্ঘ এক বিমানযাত্রা শেষে দুবাইয়ে ট্রানজিটে থেমেই এমন অভিজ্ঞতা। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এই শহরটি ততক্ষণে স্মরণকালের ভয়াবহ বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। বিশ্বখ্যাত বিমানবন্দরটির রানওয়ে গেছে তলিয়ে, শত শত ফ্লাইট হয়েছে বাতিল। রীতিমতো নৈরাজ্যকর অবস্থা। রবিউল বলেন, ‘দুবাই বিমানবন্দরে নেমে এমন দৃশ্য দেখব, কখনো ভাবিনি।’

Also Read: ১৭ বছর বয়সেই দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে ভারতের গুকেশ

বিমানবন্দরে বন্দিদশাতেই ছিলেন বাংলাদেশ শুটিং দলের সদস্যরা। রবিউলের সঙ্গে ছিলেন শুটার শায়রা আরেফিন, জারিফা খানম চৌধুরী ও জিদান হোসেন। আরও ছিলেন ইরানি কোচ জায়ের রেজাই ও শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মুশতাক ওয়াইজ। স্বাভাবিক অবস্থা থাকলে রিও থেকে ফেরার পথে দুবাইয়ে ট্রানজিট ছিল ৪ ঘণ্টা। কিন্তু সেটি গিয়ে ঠেকে ২৫ ঘণ্টার ওপর। অনেক যুদ্ধ করে, ভোগান্তি পেরিয়ে শুটিং দল দেশে ফিরেছে গত পরশু ২০ এপ্রিল। ১৮ এপ্রিল থেকে দুবাই বিমানবন্দরে ভোগান্তির মধ্যে ছিলেন তাঁরা। তাঁদের ঢাকায় ফেরার কথা ছিল সেদিনই। ইরানি কোচ অবশ্য দুবাই থেকে ফিরে গেছেন নিজের দেশে।

স্মরণকালের ভয়াবহ বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় দুবাইয়ের রাস্তা–ঘাট

শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মুশতাক ওয়াইজ বললেন, দুবাই বিমানবন্দরে তাঁদের অন্য রকম অভিজ্ঞতার কথা, ‘বৃষ্টি, বন্যায় দুবাইয়ের পুরো সিস্টেমই বসে গিয়েছিল। বিমানবন্দরের রানওয়ে ডুবে গিয়েছিল। আমরা এমন একটা সময়ই দুবাইয়ে নেমেছিলাম। কষ্ট হয়েছে, হবে, এটাই স্বাভাবিক। বিমানবন্দরে লোকজন গিজগিজ করছে, কোথাও দাঁড়ানোর অবস্থাই নেই। আমাদের বোর্ডিং পাস নিতেই ১৮ ঘণ্টা লেগে গেছে। দুজন নারী শুটার ছিল। ওদের নিয়েই চিন্তা বেশি ছিল। তবে ওদের বিমানবন্দরের মসজিদে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। ওখানেই ওরা বিশ্রাম নিয়েছে। তবে খাবারের কষ্ট হয়নি, আমাদের ফান্ড যথেষ্ট ছিল।’

Also Read: কোহলির আউট নিয়ে কেন এত বিতর্ক—কে ঠিক, কেই–বা বেঠিক

দুবাই বিমানবন্দরের এই অবস্থা দেখে রবিউলের মনে পড়ছিল ঈদের সময় দেশে ট্রেনের টিকিট কাটার অভিজ্ঞতার কথা, ‘বিশ্বের আধুনিকতম বিমানবন্দর দুবাই। কিন্তু সেখানেই সিস্টেম ভেঙে পড়লে কী হয়, দেখলাম। বোর্ডিং পাস নিতেই টানা ১৮ ঘণ্টা লাইন দিতে হয়েছে, এই সময় রোটেশন করে আমরা বিশ্রামে গিয়েছি। বাংলাদেশে ঈদের সময় কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের টিকিট কাটার লাইনের কথা মনে পড়ছিল। অন্য এক অভিজ্ঞতা নিয়েই ফিরেছি আমরা। রিও ডি জেনিরো থেকে ধরলে ঢাকা ফিরতে আমাদের সময় লেগেছে ৬০ ঘণ্টার মতো।’

১৫ এপ্রিল গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় মরু শহর দুবাই। ১৫ এপ্রিল রাতে বৃষ্টি শুরু হয়ে সেটি ঝরেছে ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যা পর্যন্ত। এই সময় বৃষ্টির পরিমাণ ১৪২ মিলিমিটার।

দুবাই বিমানবন্দরে বোর্ডিং পাস পেতে যাত্রীদের ভিড়

রিও ডি জেনিরোতে প্যারিস অলিম্পিকের কোটার লড়াইয়ে ফল পক্ষে আসেনি দেখে মন কিছুটা খারাপ রবিউলের। তিনি অবশ্য ভালোই আশা জাগিয়েছিলেন। ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে ৬৩০ স্কোর করলেই ফাইনালে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু তিনি করেছেন ৬২৭.৬ স্কোর। ২.৪ পয়েন্টের জন্য প্যারিস অলিম্পিকের কোটা পাননি তিনি। ৯৬ জন প্রতিযোগীর মধ্যে তিনি হয়েছেন ২৮তম। গত জানুয়ারিতেও জাকার্তায় এশীয় অলিম্পিক বাছাইপর্বে ৬২৮ পয়েন্ট স্কোর করেছিলেন তিনি। ০.৩ পয়েন্টের জন্য তিন মাস আগে কোটা পাননি রবিউল।

Also Read: জমে ওঠা পার্পল ক্যাপের লড়াইয়ে আছেন মোস্তাফিজও

মেয়েদের ইভেন্টে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে শায়রা আরেফিন ৬২৪.৪ পয়েন্ট স্কোর করেন। তিনি ১০২ জনের মধ্যে হন ৫৭তম। আরেক নারী শুটার জারিফা চৌধুরী ১০ মিটার এয়ার রাইফেলেই স্কোর করেন ৬২৩.১। তিনি হন ৬৭তম।

মুশতাক অবশ্য খুব হতাশ নন, ‘রবিউলের দুর্ভাগ্য। আমাদের শুটাররা উন্নতি করেছে আগের চেয়ে অনেক। কিন্তু প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে। ওরা সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছে। আশা করি এর ফল ওরা পাবে। তবে শায়রা সাধারণত যে স্কোর করে, সেটা রিওতে করতে পারেনি।’