Thank you for trying Sticky AMP!!

পিএসজিতে গিয়ে ঠিকই করেছে নেইমার

পেলের কাছে ফুটবল ছিল নিখাদ ভালোবাসা। কিন্তু সময় পাল্টে গেছে। এখন ভালোবাসার চেয়ে অর্থই বড় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ট্রান্সফার ফির রেকর্ড গড়ে বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে নাম লিখিয়েছেন নেইমার। সম্প্রতি স্প্যানিশ দৈনিক মার্কাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উত্তরসূরির এই সিদ্ধান্তকে অবশ্য স্বাগতই জানিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি

প্রশ্ন: বিদায়ী ম্যাচের দিন কথা বলতে গিয়ে দর্শকদের উদ্দেশে তিনবার ‘ভালোবাসা’ শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন। ফুটবল খেলাটাকে ভালোবাসতেন আপনি। এই সময়ের খেলোয়াড়দের কাছে ভালোবাসার চেয়ে অর্থই বড়। এটা নিশ্চয়ই আপনাকে দুঃখ দেয়?

পেলে: বার্তাটি শিশুদের জন্য অর্থবহ ছিল। ম্যাচ শুরুর আগে সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম। তাদের কাছ থেকে যা পেয়েছি সেটাই বলতে চেয়েছি। ‘ভালোবাসা, ভালোবাসা আর ভালোবাসা—শিশুদের জন্য এটাই থাকা উচিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন আর এ নিয়ে কেউ ভাবে না। এখনকার খেলোয়াড়েরা ভালোবেসে কোনো ক্লাবে যায় না। পৃথিবী এখন দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে, বিশ্বজুড়ে ছোট ছোট যুদ্ধ চলছে। আমি এখনো একই কথা বলব...‘একে অপরকে ভালোবাসো, ভালোবাসো, ভালোবাসো।’

প্রশ্ন: আগামী বছর ভিনিসিয়াস জুনিয়র রিয়াল মাদ্রিদে যাচ্ছে, গ্যাব্রিয়েল জেসুস এরই মধ্যে ইউরোপে। নেইমার পিএসজিতে গেছেন। ব্যাপারটি কি এ রকম যে বিশ্বমানের হতে হলে ব্রাজিলের তরুণ ফুটবলারদের ইউরোপে যেতে হবে?

পেলে: আমি আগেও বলেছি আমাদের অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে। ওদের ইউরোপে পাড়ি জমানো স্বাভাবিক ব্যাপারই। ওরা আরও ভালো জীবনযাপন করতে চায়।

প্রশ্ন: নেইমারের বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে যাওয়া নিয়ে কী বলবেন?

পেলে: নেইমার এখন ব্রাজিলের সেরা খেলোয়াড়। আমি মনে করি, এই দলবদলটা নেইমারের জন্য খুবই ভালো হয়েছে। বার্সেলোনায় ওকে মেসির সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হতো। নেইমারের পিএসজিতে যাওয়া ঠিকই আছে। ও কী করতে পারে সেটা দেখানোর জন্য ভালো একটা সুযোগ এটা। তবে বড় দায়িত্ব কাঁধে চাপাটা খুব বিপজ্জনকও।

প্রশ্ন: রিয়াল মাদ্রিদ আপনাকে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আপনার পছন্দ ছিল বার্সেলোনার খেলার ধরন। সেই সময়ে ইউরোপে যাননি, ব্যালন ডি’অর জয়ের সম্ভাবনার পথ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য কি এখন আক্ষেপ হয়?

পেলে: না, না, না। সান্তোসে খুব, খু-উ-ব আনন্দে ছিলাম বলে ব্রাজিলের বাইরে খেলিনি আমি। জীবনের সেরা ১৫-২০টি বছর সেখানে কাটিয়েছি। শুধু রিয়াল থেকেই নয়, আমার আরও কিছু প্রস্তাব ছিল। কিন্তু সান্তোসে ভালোই ছিলাম। প্রস্তাব দিয়েছিল জুভেন্টাস, দিয়েছিল নাপোলি। বেকেনবাওয়ারের সঙ্গে বায়ার্ন মিউনিখে খেলারও প্রস্তাব পেয়েছিলাম। এগুলো আমাকে কিছুটা নাড়া দিয়েছিল। কিন্তু সান্তোসে আমি সেরা সময় কাটাচ্ছিলাম।

প্রশ্ন: চারজন ব্রাজিলিয়ান ব্যালন ডি’অর জিতেছেন—রিভালদো, রোনালদো, রোনালদিনহো ও কাকা। ব্যালন ডি’অর জিততে হলে নেইমারকে কী করতে হবে? পিএসজিতে থেকেই কি নেইমার জিততে পারবেন?

পেলে: অবশ্যই পারবে। কোথায় খেলল সেটা বিষয় নয়, ওর পায়ে ফুটবল থাকলেই হবে। কুতিনহোর দিকেও চোখ রাখতে হবে আমাদের। দলের জন্য অসাধারণ এক খেলোয়াড় ও। তবে কোনো সন্দেহ নেই, এই মুহূর্তে নেইমারই এক নম্বর।

প্রশ্ন: তাহলে কি কুতিনহোকে স্পেনে পাড়ি জমাতে হবে?

পেলে: (হেসে) না। নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে সব সময় দল বদলানোর প্রয়োজন নেই। সুযোগ কাজে লাগানোটাই বড় বিষয়।

প্রশ্ন: পাওলিনহো বার্সেলোনায় গেছেন। কিন্তু ক্লাবের সমর্থকেরা তাঁকে নেওয়ায় খুশি হতে পারেনি। তিনি আসলে কী করতে পারবেন?

পেলে: বার্সেলোনা একটি পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে আমি মনে করি পাওলিনহো তার সামর্থ্য আর দৃঢ়তা দিয়ে অনেককেই অবাক করবে। বার্সেলোনায় যাওয়ার আগে চীনে গিয়েছিল ও। তবে ওর আরও অনেক প্রস্তাব ছিল... জার্মানি... ইতালিতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলতে হয়, ও এই কারণেই চীনে গিয়েছিল যে এখন ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নেয় তাদের খেলোয়াড়েরা কোথায় যাবে। কারণ
তারাই খেলোয়াড় বিক্রি করে। কখনো কখনো আপনি বলবেন, ‘আহ, আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি সে কেন স্পেন, আর্জেন্টিনায় না খেলে চীনে খেলছে...। আমার জন্য বিষয়টি ভিন্ন ছিল। ব্রাজিল ছাড়ব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি। আমি শুধু চেয়েছিলাম ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করতে।

প্রশ্ন: পেছন ফিরে নিজের পেশাদার জীবনটার দিকে তাকালে কোন বিষয়টি আপনাকে সবচেয়ে গর্বিত করে?

পেলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে গর্ব করার মতো অনেক বিষয়ই আছে আমার। সবকিছুর আগে বলব একজন ব্যক্তি ও খেলোয়াড় হিসেবে বেড়ে ওঠা এবং বিশ্বজোড়া পরিচিতি পাওয়া। বিশ্বের নানা জায়গায় ঘুরতে পেরেছি। জীবন নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দর্শন আর নানা ধরনের সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনেছি। এসব আমাকে ফুটবলই দিয়েছে।