'যত দিন টুর্নামেন্টে আছি, আমরাই ফেবারিট'
>
ইংল্যান্ড দেশটা তাঁর খুব প্রিয়। ছুটি কাটানোর জন্য প্রিয় শহর লন্ডন। প্রিয় দেশের প্রিয় শহরে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরুর দুই দিন আগে লন্ডনের টিম হোটেলে বাংলাদেশের বাঁহাতি ওপেনারের সাক্ষাৎকার নিলেন উৎপল শুভ্র
*বাংলাদেশ এখন র্যাঙ্কিংয়ে ছয় নম্বর দল। একসময় যে বাংলাদেশকে সবাই হেলাফেলা করত, এখন সেই বাংলাদেশকেই সবাই অন্য চোখে দেখে। আপনারা নিশ্চয়ই এটা আরও ভালো বুঝতে পারেন, তাই না?
তামিম: এটাই সবচেয়ে আনন্দের। আগে যখন আইসিসির কোনো অনুষ্ঠানে যেতাম, নিজেকে খুব ছোট মনে হতো। অন্য দলগুলো পাত্তাই দিত না। লজ্জা লাগত। বড়লোকের পার্টিতে স্যান্ডেল পরে চলে গেলে যেমন লাগে আর কী! এখন যখন আমরা ম্যাচ খেলি, আম্পায়াররা বলে, তোমরা অনেক দূর এসেছ। যে প্লেয়াররা বলত, আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলারই যোগ্য না, তারা বলে, বাংলাদেশ খুব বিপজ্জনক দল। এসব খুব ভালো লাগে।
*চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে আগে ছয় নম্বরে উঠে যাওয়াটা তো এই টুর্নামেন্টে ভালো করার বাড়তি একটা প্রেরণাও...
তামিম: অবশ্যই। টুর্নামেন্টটাকে স্মরণীয় রাখতে নিজেদের ঢেলে দেব আমরা। আমাদের প্রস্তুতি খুব ভালো হয়েছে। যদিও আমাদের যারা প্রতিপক্ষ, তাতে কাজটা সহজ হবে না। আবার ওদের জন্যও আমরা সহজ হব না।
*গ্রুপের তিন প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে যদি আলাদাভাবে বলতে বলি...
তামিম: আমি তো বলব, সেরা তিনটি দলই আমাদের গ্রুপে পড়েছে। ইংল্যান্ড নিজেদের হোম কন্ডিশনে খুব ভালো দল। অস্ট্রেলিয়া দলে দারুণ কিছু প্লেয়ার আছে। আর নিউজিল্যান্ড বড় টুর্নামেন্টে খুব ভালো খেলে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখবেন, ওরা আইসিসি টুর্নামেন্টে প্রায় নিয়মিত সেমিফাইনাল খেলে।
*আপনার নিজের ফর্ম তো খুব ভালো। ত্রিদেশীয় সিরিজে ভালো খেললেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি। প্রস্তুতিটা তো এর চেয়ে ভালো হতে পারত না...
তামিম: আমি প্রস্তুতিতে সন্তুষ্ট। যদিও ত্রিদেশীয় সিরিজটাকে আমি শুধু প্রস্তুতির টুর্নামেন্ট বলতে চাই না। আমি আগেও বলেছি, সবাই শুধু চ্যাম্পিয়নস ট্রফির কথা বলছে, কিন্তু ত্রিদেশীয় সিরিজটাও আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেটিতে বিশ্বকাপে সরাসরি কোয়ালিফাই করার একটা ব্যাপার ছিল। এটিতে যেভাবে ব্যাটিং করেছি, তাতে আমি খুশি।
*একটু যদি খেলার বাইরে যাই, ইংল্যান্ড আপনার কেমন লাগে?
তামিম: খুব ভালো। ছুটি কাটানোর জন্য আমার সবচেয়ে প্রিয় শহর এই লন্ডন। ২০০৭ বিশ্বকাপের পরপরই ‘এ’ দলের হয়ে খেলার সময় প্রথম লন্ডনে এসেছিলাম। তখন থেকেই এই শহরটা, এই দেশটা আমার খুব প্রিয়।
*লন্ডনে দর্শনীয় অনেক কিছু আছে, বিখ্যাত অনেক মিউজিয়াম আছে...
তামিম: (থামিয়ে দিয়ে) না, না, মিউজিয়াম-টিউজিয়ামের জন্য নয়। আমি মিউজিয়ামে যাই না। আমার কাছে লন্ডন মানে অক্সফোর্ড স্ট্রিট, বন্ড স্ট্রিট, রিজেন্ট স্ট্রিট। সব শপিংয়ের জায়গা।
*২০১০ সালে বিখ্যাত ওই সেঞ্চুরির পর আর লর্ডসে গিয়েছেন?
তামিম: কেন, ২০১৪ সালে বিশ্ব একাদশ বনাম এমসিসি একাদশের ম্যাচে লর্ডসে খেললাম না!
*ড্রেসিংরুমে অনার্স বোর্ডটা নিশ্চয়ই ফিরে ফিরে দেখেছেন, ওটিতে নাম লেখানো তো আপনার জন্য স্বপ্ন পূরণের মতো ব্যাপার ছিল...
তামিম: (হাসি) এটি না দেখে কি পারি!
*২০১০ সালের ওই তামিম আর ২০১৭ সালের এই তামিমের মধ্যে পার্থক্য কী?
তামিম: অনেক পার্থক্য। ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি এখন অনেক পরিণত। আগেও একটা সাক্ষাৎকারে আপনাকে বলেছি, তখন আমার হাতে খুব বেশি শট ছিল না। এখন অনেক বেশি শট।
*দুটি আলাদা খেলা। ২০১০ সালে ছিল টেস্ট ম্যাচ, এবার ওয়ানডে। তারপরও ২০১০ সালের ওই ইংলিশ গ্রীষ্ম কি বাড়তি একটা প্রেরণা জোগায়?
তামিম: বরং বলব, ইংল্যান্ডে আমি ভয় পাই। কোনো দলের সঙ্গে বা কোনো দেশে ভালো খেললে সেটি নিয়ে আমরা খুব বেশি হাইপ তৈরি করে দিই। অতীতে কী করেছি, এ নিয়ে আমি ভাবি না। একবার সফল হয়েছি বলেই যে আবার হব, এমন কোনো কথা নেই। এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরও দিতে চাই না। আমার তো মনে হয়, অতীতে আমি কী করেছি, সেটি আমার বর্তমানকে অনেক সময় আড়াল করে দেয়।
*লর্ডস নিয়ে তো আপনার মনে আগে থেকেই একটা বাড়তি আবেগ ছিল। আপনার বাবা টেলিভিশনে লর্ডসের সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বলে। এবার ওভালে খেলা। লর্ডসের মতো না হলেও ওভালও কিন্তু কম বিখ্যাত নয়। ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টেস্ট ম্যাচ এই মাঠেই, এখানেই স্যার ডন ব্র্যাডম্যান তাঁর শেষ টেস্ট খেলেছেন। ওভালে খেলা নিয়ে কি রোমাঞ্চিত?
তামিম: ব্র্যাডম্যান যে ওভালে শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন, এটা আমি এই প্রথম শুনলাম। আমি আসলে শুধু লর্ডস আর মিরপুর মাঠের ইতিহাসই জানি। আর কোনো মাঠের ইতিহাস জানি না। তবে শুনেছি, ওভাল খুব চমৎকার মাঠ।
*ইংল্যান্ডে ব্যাটিং-স্বর্গ বলতে যদি কিছু থাকে, সেটির মর্যাদা পায় এই ওভালের উইকেট। বাংলাদেশের প্রথম দুটি ম্যাচই এই মাঠে হওয়াটা কি ভালোই হলো?
তামিম: ওভালে ব্যাটিং উইকেট,এটা আমিও শুনেছি। তবে এর মানে এই না যে, আমরা নামব আর তিন শ করে ফেলব। ওভালে আমাদের দলের কেউ আগে খেলেনি। সবার জন্যই নতুন মাঠ। ওভালে খেলাটাই ভালো হচ্ছে কি না? আমাকে যদি বলেন, খেলাটা মিরপুরে হলে সবচেয়ে ভালো হতো।
*বিশ্বকাপের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মূল পার্থক্য কী মনে হয়? একটা পার্থক্য তো সবার আগে চোখে পড়ছে, এটা অনেক সংক্ষিপ্ত টুর্নামেন্ট...
তামিম: দুটি দুই রকম। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। আবার এখানে সেরা আটটি দল খেলছে। সব দলই শক্তিশালী। আর আমি তো শুধু বিশ্বকাপই খেলেছি। এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার পর দুটির তুলনা করতে পারব।
*র্যাঙ্কিংয়ে ছয় নম্বর বাংলাদেশ দল নিয়ে কথা শুরু হয়েছিল। আবার সেই প্রসঙ্গ। বাংলাদেশের এই দলটিকে যদি অভিজ্ঞতা, স্কিল ও আত্মবিশ্বাস—এই তিনটি বিভাগে দশের মধ্যে নম্বর দিতে বলি...
তামিম: অভিজ্ঞতায় ৬ থেকে ৭। দলে আমরা পাঁচজন অনেক ম্যাচ খেলেছি। এমন ৬-৭ জন থাকলে ৮ দিতাম। স্কিলে সাড়ে ৭-৮। আর আত্মবিশ্বাসের কথা যদি বলেন, সাড়ে ৬-৭।
*শেষ প্রশ্ন, এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ফেবারিট কোন দল?
তামিম: যত দিন আমরা টুর্নামেন্টে আছি, আমরাই। আমরা কোয়ালিফাই করতে না পারলে তখন অন্য দলের কথা বলব।