'আরও কিছু অর্জন থাকলে ভালো হতো'
২০০৫ সালের ২৬ মে, দুরুদুরু বুকে নেমেছিলেন লর্ডসে। আর এটা ২০১৫। টেস্ট ক্রিকেটে তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই মুশফিকুর রহিমের ১০ বছর পূর্ণ হয়ে গেল গত পরশু। তা কেমন কেটেছে এই এক দশক? পেছনে ফেলে আসা সাফল্য-ব্যর্থতা হাতড়ে নিজের কোন প্রতিচ্ছবিটা দেখতে পাচ্ছেন আয়নায়? প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেসব নিয়েই কথা বলেছেন বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক—
. টেস্ট ক্রিকেটে ১০ বছর কাটিয়ে ফেললেন। কেমন গেল সময়টা?
মুশফিকুর রহিম: সত্যি বলতে কি, মনেই হচ্ছে না ১০ বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলে ফেলেছি! হয়তো যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে সবকিছু অর্জন করতে পারিনি। ব্যক্তিগতভাবে আরও কিছু অর্জন থাকতে পারত। চেষ্টা করেছি, দুর্ভাগ্য যে হয়নি। আরও কিছু ব্যক্তিগত অর্জন থাকলে ভালো হতো। রানের গড়টা আরেকটু ভালো হলে ভালো লাগত।
. টেস্ট ক্রিকেটের শুরুতে নিশ্চয়ই ক্যারিয়ার নিয়ে একটা লক্ষ্য ছিল। ১০ বছরে সেদিকে কতটা এগোতে পারলেন?
মুশফিক: আমি সব সময় চেষ্টা করি টেস্ট ক্রিকেটে যেন নিজেকে ভালোভাবে মেলে ধরতে পারি। কারণ, তিন ফরম্যাটের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটই আমার সবচেয়ে পছন্দের। সেদিক দিয়ে আরও কিছু প্রাপ্তি থাকলেই খুশি হতাম। তবে হতাশ নই, আবার খুব বেশি খুশিও নই। গড়টা যদি চল্লিশের ঘরে নিয়ে যেতে পারতাম, তাহলে আরেকটু ভালো লাগত। তবে এখনো সুযোগ আছে। সামনে যে সুযোগগুলো পাব, সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে আশা করি ক্যারিয়ার শেষে রানের গড় চল্লিশের ঘরে থাকবে।
. ১০ বছরে আপনার সেরা প্রাপ্তি কোনটি?
মুশফিক: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যে ৩-০তে টেস্ট সিরিজ জিতলাম, সেটা। ওই বছর আমরা যে রকম সংগ্রাম করছিলাম, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরপর তিন টেস্ট জেতা আমার মনে হয় না খুব সহজ ছিল। দল হিসেবে এবং ব্যক্তিগতভাবেও এটা আমার জন্য বিশাল অর্জন। এ ছাড়া টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির কথাও বলতে পারেন।
. সবচেয়ে খারাপ লেগেছে কোন জিনিসটা?
মুশফিক: দল থেকে বাদ পড়া। ১০ বছরে একবারই দল থেকে বাদ পড়ি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কয়েকটা ওয়ানডে মিস করেছিলাম। খুবই খারাপ লেগেছিল। একজন খেলোয়াড় যখন দল থেকে বেরিয়ে যায়, সেই ব্যথাটা ওই খেলোয়াড় ছাড়া আর কেউ বোঝে না। ভালো খেলার সব রকম চেষ্টা করছিলাম। তবে অনেক সময় যতই চেষ্টা করেন, খারাপ সময় যাবেই।
. টেস্টে সাম্প্রতিক সময়টা খুব ভালো না গেলেও ওয়ানডেতে এখন দারুণ ধারাবাহিক আপনার ব্যাটিং। অনেক বেশি পরিণতও। এটা কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ অভিজ্ঞতারই ফসল?
মুশফিক: এক-দুজন ব্যতিক্রম বাদ দিলে বেশির ভাগ ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে এটাই ঘটে। যে যত বেশি ম্যাচ খেলে, তার পারফরম্যান্স তত বেশি ভালো হয়। এই পর্যায়ের ক্রিকেট আপনি যত বেশি খেলবেন; এখানকার পরিবেশ, কখন কোন আক্রমণের বিপক্ষে কীভাবে খেলবেন সেসব আরও বেশি বুঝবেন। আমি চার-পাঁচ বছর খেলার পর বুঝেছি সর্বোচ্চ পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে রান করতে হলে কী করতে হয়। কোন চ্যালেঞ্জটা কীভাবে নিতে হয় বা কোন কন্ডিশনে কীভাবে খেলতে হয়। হয়তো নিয়মিত রান করেছি, কিন্তু পরিণত হতে অন্য অনেক ক্রিকেটারের তুলনায় আমার একটু বেশিই সময় লেগেছে।
. ১০ বছর ধরে প্রায় একই রকম ফর্ম নিয়ে জাতীয় দলে খেলছেন। রহস্যটা বলবেন?
মুশফিক: মাঠে ভালো করার জন্য কষ্ট করি। তবে মাঠের বাইরেও কিছু কাজ আমি সব সময়ই করি। সেসবেরও ভূমিকা আছে। যেমন ডায়েট কন্ট্রোল করা, কোনো কোনো সময় হয়তো ফিটনেসের জন্য বিশেষ কিছু করা। এসব এখন আরও বাড়িয়ে দিয়েছি। বয়সটা তো আর আগের মতো নেই (হাসি)! চেষ্টা করি প্রতিটা দিনই যেন নিজেকে একটু করে এগিয়ে নিতে পারি। যেন নিজের সঙ্গে যুদ্ধে জিততে পারি। গতকালের চেয়ে যেন আজকে আরও ভালো করতে পারি।
. ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিয়মিত অনুশীলনের বাইরেও বাড়তি অনেক পরিশ্রম করেন। এটার প্রেরণা পান কোত্থেকে?
মুশফিক: আমার মধ্যে সব সময়ই একটা উপলব্ধি কাজ করে। আল্লাহ আমাকে যে প্রতিভা বা দায়িত্ব একটু হলেও দিয়েছেন, সেটা পালন করার জন্যই আমি এখানে। ক্যারিয়ারের কোনো সময়ই মনে হয়নি আমি খুব এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু করে ফেলেছি, যেটা অন্য কেউ করতে পারেনি বা পারবে না। সব সময় মনে হয় যতই করি, এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে। প্রেরণা বললে এটাকেই বলতে পারেন।
. ১০ বছরে আপনার যতটুকু অর্জন, তাতে প্রতিভার ভূমিকা কতটুকু আর পরিশ্রমের ভূমিকাই বা কতটুকু?
মুশফিক: দুটোরই সমান ভূমিকা। আল্লাহপ্রদত্ত প্রতিভা যদি একটুও না থাকে, তাহলে শুধু কঠোর পরিশ্রম করে টিকে থাকা কঠিন। আবার যতই প্রতিভা থাকুক, পরিশ্রম না করলে সাফল্য পাবেন না। ছোটবেলা থেকেই আমার শক্তির জায়গা হলো আমি কোনো কাজ লম্বা সময় ধরে ধৈর্য নিয়ে করতে পারি। ভালো কিছু পেতে বারবার চেষ্টা করি। বিকেএসপিতে থাকায় এটা আরও বেড়েছে। ওখানে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে বড় হয়েছি আমরা। ওখান থেকেই শিখেছি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা জিনিসটা কত কঠিন। টিকে থাকতে হলে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে হবে। একটা সফর বা একটা ম্যাচে ভালো করে বসে থাকলে হবে না। আমার তো সব সময়ই মনে হয়, এই ম্যাচটাই আমার শেষ। আমাকে আরও ভালো খেলতে হবে।
. ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটে কী পরিবর্তন দেখেছেন?
মুশফিক: গত তিন বছরে আমাদের ক্রিকেট অনেক এগিয়েছে। তবে টেস্ট ক্রিকেট এমন একটা খেলা, এটা আপনি যত বেশি খেলবেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতার মানসিকতা ততই বাড়বে। আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যদি আরেকটু কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকত, টেস্টেও খেলোয়াড়দের মধ্যে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মানসিকতা তৈরি হতো।
. ১০ বছরের ক্যারিয়ারে অধিনায়কত্বের অংশটুকু কে কীভাবে দেখেন?
মুশফিক: ব্যক্তিগতভাবে বা অধিনায়ক হিসেবে, গত তিন বছর ধরেই আমি আমার সেরা সময় কাটাচ্ছি। খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক হিসেবে পরিণত হয়েছি। আমার অধিনায়কত্ব নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে আমার মনে হয় আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো করছি।
. ধরুন আরও আট-দশ বছর টেস্ট ক্রিকেট খেললেন। ক্যারিয়ার শেষে কোথায় দেখতে চাইবেন নিজেকে?
মুশফিক: এত দিন খেলতে পারব কি না কে জানে! যখন শুরু করেছিলাম, তখন তো ভাবিনি ১০ বছরও খেলব। আমি শুধু একটা জিনিসই চাই, এখন যেভাবে খেলছি, আল্লাহ যে মান-সম্মানটুকু দিয়েছেন, সেটা যেন ধরে রাখতে পারি।
আরও পড়ুন
-
স্কুল, মাদ্রাসায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের
-
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, সব প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ মে পর্যন্ত বন্ধ
-
আগামীকালও ঢাকাসহ ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়
-
সামান্য রদবদলে নতুন টেলিযোগাযোগ আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন
-
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় পালা বন্ধ হচ্ছে, শাখা ক্যাম্পাস হবে আলাদা প্রতিষ্ঠান