Thank you for trying Sticky AMP!!

ইউএস ওপেনের নারী একক জিতেছেন ১৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ খেলোয়াড় এমা রাদুকানু

এমা রাদুকানুকে অবসর নিতে বলেছিলেন দাদি

গত সপ্তাহে সবাইকে চমকে দিয়ে ইউএস ওপেনের নারী এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এমা রাদুকানু। বয়স মাত্র ১৮ বছর। একটা গ্র্যান্ড স্লাম জিতেই এরই মধ্যে অনেক রেকর্ডের মালিক বনে গেছেন এমা রাদুকানু। বাছাইপর্ব পেরিয়ে গ্র্যান্ড স্লাম খেলতে এসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রথম খেলোয়াড় তিনি। প্রথম ব্রিটিশ নারী খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৭৭ সালের পর জিতেছেন গ্র্যান্ড স্লাম। টেনিসের রেকর্ড বইয়ের পাতায় আরও কত কী লেখার বাকি আছে এমা রাদুকানুর। অথচ তাঁকেই কিনা অবসর নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁর দাদি নিকুলিনা রাদুকানু!

এমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। এ জন্য এ বছর উইম্বলডনের চতুর্থ রাউন্ডে হারের পর এমার দাদি নিকুলিনা রাদুকানু তাঁকে টেনিস থেকে অবসর নিতে বলেছিলেন।

তবে ভাগ্য ভালোই বলতে হবে এমা রাদুকানুর। তাঁর রোমানিয়ান বাবা ইওয়ান রাদুকানু কিংবা চীনা মা রেনে কেউই দাদির এমন পরামর্শ গায়ে মাখেননি। তাঁরা এমাকে খেলতে পাঠিয়েছিলেন ইউএস ওপেনে। এরপর তো ইতিহাস।

রাদুকানুর দাদি নিকুলিনা

কেন নাতনিকে খেলতে বারণ করেছিলেন, সেটির ব্যাখ্যা সংবাদমাধ্যমে দিয়েছেন নিকুলিনা। নাতনির তারকাখ্যাতি, যশের চেয়ে স্বাস্থ্য নিয়েই বেশি ভাবনা ৮৮ বছর বয়সী নিকুলিনার, ‘ধনসম্পদ বা খ্যাতির চেয়ে স্বাস্থ্যটাই বেশি জরুরি।’

আদর করে রোমানিয়ান ভাষায় এমাকে মামিয়া বলে ডাকেন নিকুলিনা। বছরে দুবার এমা মা–বাবার সঙ্গে রোমানিয়ায় দাদির বাড়ি বেড়াতে যান। সেখানে গেলে নাতনিকে কাছে বসিয়ে রোমানিয়ার গল্পগুলো শোনান নিকুলিনা।

এমাকে নিয়ে যেন ভাবনার শেষ নেই দাদির। উইম্বলডনের শেষ ষোলোর ম্যাচে দ্বিতীয় সেটের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এমা। যে কারণে অস্ট্রেলিয়ান আইলা তমলিয়ানোভিচের বিপক্ষে ওয়াকওভার দিতে বাধ্য হয়েছিলেন এমা। এরপরই এমার মা–বাবার সঙ্গে অবসর নিয়ে আলোচনার সাহস পেয়েছিলেন নিকুলিনা। ‘ওর আর এভাবে খেলে কাজ নেই’—এমনটাই বলেছিলেন তিনি। বুখারেস্টের বাড়িতে বসে নিকুলিনা সেই দিনের ঘটনা বলছিলেন, ‘ওর মা–বাবাকে বলেছিলাম, ও যেন টেনিস খেলা ছেড়ে দেয়। যদি খেলাটা ছেড়েই দেয়, তাহলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে এমার? সম্পদ বা খ্যাতির চেয়ে ওর সুস্থ থাকাটাই বেশি জরুরি।’

যে রাতে ও ইউএস ওপেন জিতল, আমি খেলাই দেখিনি। কারণ, আমি ওই চাপটা নিতে পারতাম না।
নিকুলিনা রাদুকানু

একে তো বৃষ্টির মধ্যে খেলা হচ্ছিল, এর ওপর শ্বাসকষ্ট উঠেছিল এমার। উদ্বিগ্ন দাদি সেদিনের কথা মনে করে বলছিলেন, ‘ওই দিন বৃষ্টি হচ্ছিল বলে ছাদ ঢাকা কোর্টে খেলতে হয়েছে ওকে। ও ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছিল না।’

এমার খেলা থাকলে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় থাকেন দাদি। চাপ নিতে পারেন না বলে এবার ইউএস ওপেনের ফাইনালটাও দেখেননি নিকুলিনা, ‘যে রাতে ও ইউএস ওপেন জিতল, আমি খেলাই দেখিনি। কারণ, আমি ওই চাপটা নিতে পারতাম না। আমি নিজেকেই বলেছিলাম এই ম্যাচটা ওর জন্য অন্যতম কঠিন একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে।’

পরদিনের পত্রিকা পড়ে নাতনির জয়ের সংবাদটা জেনেছিলেন নিকুলিনা, ‘আমি পরের দিন পত্রিকায় খবরটা পড়েছি। এই ভেবে খুশি হয়েছিলাম ও খুব শক্ত ছিল ম্যাচে। ওর স্বাস্থ্যের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। বিশেষ করে শেষবার উইম্বলডনের ঘটনার পর ও মানসিকভাবে শক্ত হয়ে গেছে।’

ইউএস ওপেনের ট্রফি হাতে রাদুকানু

নাতনির এমন কীর্তি গড়ার পর তাঁকে নিয়ে তো গর্ব করাই যায়, ‘আমার ছেলের সঙ্গে যখন কথা বলি, কী যে খুশি হই ছেলের জন্য। যদি ও হেরে যেত তাহলে ছেলেটা আমার খুব হতাশ হয়ে পড়ত। কারণ, এই মেয়ের পেছনে অনেক বিনিয়োগ করেছে সে। অবশ্যই এমার জন্য খুব গর্ব হয় আমার।’

একটা গ্র্যান্ড স্লাম জিতেই রাতারাতি বড় তারকা হয়ে গেছেন এমা রাদুকানু। অথচ এমার পরিচয়ে মোটেও পরিচিত হতে চান না​ দাদি, ‘আমি কাউকে বলি না যে আমি একজন গ্র্যান্ড স্লাম চ্যাম্পিয়নের দাদি। আমি খুবই সাদাসিধে একজন নারী। লোকে যেন এটা ভাবে না যে এমাকে নিয়ে আমি বড়াই করছি। এমা যখন মন থেকে এটা চেয়েছে, সে তো সেটা পাবেই। ও সব সময় লড়াকু একজন মেয়ে।’