Thank you for trying Sticky AMP!!

রোবটের সঙ্গে টেবিল টেনিস

অনুশীলনের জন্য সঙ্গী রোবটটিকে প্রস্তুত করে নিচ্ছেন সোনাম সুলতানা। ছবি: শামসুল হক

টেবিলের ও পাশ থেকে সাঁই সাঁই করে ছুটে আসছে বল। কখনো ফোরহ্যান্ড ড্রাইভ, কখনো ভলি, কখনো স্ম্যাশ করছেন সোনাম সুলতানা। টেবিল টেনিস খেলোয়াড় সোনামের প্রতিপক্ষ মানুষ নয়, খেলছেন রোবটের সঙ্গে!

রোবটটা দেখতে অনেকটা ক্রিকেটের বোলিং মেশিনের মতো। তবে আকারে ছোট। টেবিল টেনিসে অনুশীলনের জন্য ব্যবহৃত এমন বোলিং মেশিনকে বলা হয় রোবট মেশিন। টেবিল টেনিসের এ রকম যান্ত্রিক প্রতিপক্ষ বাংলাদেশে খুব একটা দেখা যায় না।

কোরিয়ান প্রযুক্তিতে তৈরি মাথাওয়ালা এই রোবট মিনিটে ১৩০টি বল ছুড়তে পারে। এর সাহায্যে ১২ রকমের শট অনুশীলন করতে পারেন সোনাম। চপ, কাট, স্ম্যাশ, ফোরহ্যান্ড ড্রাইভ, ব্যাকহ্যান্ড ড্রাইভ, ফোরহ্যান্ড পুশ, ব্যাকহ্যান্ড পুশ, ভলি, হাফভলি, ওভারহেড, ড্রপ শট, লব—এতগুলো শট কোনো কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলেও সম্ভব হতো কি না, সন্দেহ। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাওয়ার আগে টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কামরুল হুদা সোনামকে রোবটটি উপহার দেন। ধানমন্ডিতে নিজের বাসায় জিমনেসিয়ামের এক পাশে সোনাম এই রোবট বসিয়েছেন।

প্রায় সাত বছর রোবটটির সঙ্গে খেলছেন তিনি। খেলতে খেলতে মাঝেমধ্যে বিগড়েও যায় রোবটিট। সোনাম সম্প্রতি বলছিলেন, ‘মাঝেমধ্যে ও একটু ওলট-পালট করে ফেলে। যেভাবে দরকার, সেভাবে বল দিতে পারে না। তখন বুঝতে পারি, কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। আমার স্বামী সার্ভিসিং করে দিলে ও (রোবট) আবার আগের মতো কাজ করতে থাকে।’

সংসারের ব্যস্ততায় সব সময় পল্টনের শহীদ তাজউদ্দীন ইনডোর স্টেডিয়ামে গিয়ে অনুশীলন করা সম্ভব হয় না সোনামের পক্ষে। রোবটই তাই হয়ে উঠেছে তাঁর অনুশীলনসঙ্গী, ‘বাসায় রোবটটা থাকায় খুবই সুবিধা হয় অনুশীলন করতে। দিনেও অনুশীলন করি, অনেক সময় রাত ১১-১২টার সময়ও খেলি।’ শুধু সোনাম নন, তাঁর ছেলে আবু সুফিয়ানও রোবটের সঙ্গে খেলে সাফল্য পাচ্ছে। রোবটে অনুশীলন করেই আন্তস্কুল টেবিল টেনিসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে একবার।

টেবিল টেনিস কোচ মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে ২০০৪ সালে বিয়ে হয় টিটির উর্বর ভূমি নড়াইলের মেয়ে সোনামের। স্বামীর অনুপ্রেরণা আর সমর্থন না থাকলে তাঁর ক্যারিয়ার হয়তো অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত, ‘সংসার সামলে এত দিন যে খেলে যাচ্ছি, তা শুধুই আমার স্বামীর জন্য।’ পাশাপাশি রোবটের সঙ্গে অনুশীলনের বাড়তি সুবিধা তো আছেই।

২৫ বছরের ক্যারিয়ারে সোনাম জিতেছেন ৮১টি ট্রফি। এর অনেকগুলোই রোবটের সঙ্গে অনুশীলন করে। তবে তাঁর সাফল্য পাওয়ার শুরুটা ছোটবেলা থেকে। ১৯৯৭ সাল থেকে টানা চারবার জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতায় জেতেন সোনার পদক। জাতীয় জুনিয়রে সোনা জিতেছেন পাঁচবার। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের এককে চারবার হন চ্যাম্পিয়ন। একবার সোনা জিতেছেন বাংলাদেশ গেমসেও। ২০০৩ সালে বিকেএসপিতে হওয়া দক্ষিণ এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে রুপা জেতা এই টেবিল টেনিসকন্যা ছিলেন ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের ব্রোঞ্জজয়ী দলেও। ২০১৯ সালে কাঠমান্ডুতে মেয়েদের দ্বৈতে ব্রোঞ্জজয়ী দলেও খেলেছেন তিনি। প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীকে সাতবার শিরোপা এনে দেওয়ায় বড় অবদান সোনামের। ফেডারেশন কাপে হয়েছেন আটবার চ্যাম্পিয়ন। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ত্রিমুকুট জিতেছেন ২০০৩ সালে।

চাচার হাত ধরে টিটিতে হাতেখড়ি। আর ছিল মায়ের উৎসাহ। সোনাম বলছিলেন, ‘আমার এত দূর আসার পেছনে মায়ের ভূমিকা অনেক। বাবার সমর্থন তেমন ছিল না। মেয়ে হয়ে ছেলেদের পোশাক পরি, সেটা কখনোই চাইতেন না বাবা। মনে পড়ে না বাবা কখনো পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে আমার খেলা দেখেছেন। তবে একটা সময় পরে বাবাও গর্ব করতেন আমাকে নিয়ে।’