Thank you for trying Sticky AMP!!

১৮ বছর বয়সী স্ট্রাইকার আকলিমা খাতুন

‘বাবা রেগে খাবার কেড়ে নিয়েছিলেন’

মেয়েদের ফুটবল লিগের চ্যাম্পিয়ন দল বসুন্ধরা কিংস যেন স্ট্রাইকারদের মেলা। সর্বশেষ মেয়েদের সাফে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া সাবিনা খাতুন তো ছিলেনই, ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে জোড়া গোলদাতা কৃষ্ণা রানী সরকার, ভারতের বিপক্ষে জোড়া গোল করা সিরাত জাহানও খেলেছেন বসুন্ধরা কিংসে। তাঁদের সবাইকে পেছনে ফেলে গত ৩০ ডিসেম্বর শেষ হওয়া মেয়েদের লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেছেন আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাবের ১৮ বছর বয়সী স্ট্রাইকার আকলিমা খাতুন। ৯ ম্যাচে ২৫ গোল করা বিকেএসপির এই ফুটবলার নিজের অর্জন ও স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে—

প্রশ্ন

প্রশ্ন: নারী ফুটবল লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতে কেমন লাগছে?

আকলিমা খাতুন: ভাবতেই পারিনি যে এবারের লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হব আমি। এবারের লিগে বিভিন্ন দলে অনেক সিনিয়র আপু খেলেছেন। আমার চেয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা বেশি। আগের দুই মৌসুমে খুব বেশি গোল পাইনি। তাই এবার শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল যত বেশি পারা যায় গোল করার। চেষ্টা করেছি মাঠে নিজের সেরাটা দিতে। তবে এত গোল হয়ে যাবে ভাবিনি।

প্রশ্ন

আগের চার আসরে তো লিগে দুই লেগের খেলা হতো, ম্যাচ বেশি ছিল। তখন সাবিনা দুবার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন ২৫ ও ৩৫ গোল করে। অম্রা চিং মারমা একবার করেছিলেন ২৯ গোল, গতবার কৃষ্ণা রানী সরকার করেছিলেন ২৫ গোল। এবার সিঙ্গেল লিগের খেলা, ম্যাচ প্রায় অর্ধেক। তা–ও এত গোল আপনার! 

আকলিমা: এবার ১১টি করে ম্যাচ খেলেছে প্রতিটি ক্লাব। হাঁটুতে ব্যথা পেয়ে এর মধ্যে দুটি ম্যাচে মাঠে নামতে পারিনি আমি। নইলে গোল আরও বাড়ত হয়তো। আসলে আমার গোলে দলের সবার অবদান আছে। সতীর্থরা অনেক গোল বানিয়ে দিয়েছে, আমার ফিনিশিংটাও আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। তা ছাড়া আমার স্যার (কোচ গোলাম রায়হান) প্রতি ম্যাচের আগে আমাকে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করতেন।

বল দখলের লড়াইয়ে আকলিমা (ডানে)
প্রশ্ন

সেটা কেমন? 

আকলিমা: লিগ শুরুর দিকে কুমিল্লা ইউনাইটেডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক (৪ গোল) করি। এরপর জামালপুর কাচারিপাড়া একাদশের বিপক্ষেও হ্যাটট্রিক (৬ গোল)। তারপর থেকে প্রতি ম্যাচের আগে স্যার বলতেন, তুমি যদি আরেকটু ভালো খেলো তাহলে কৃষ্ণা, সাবিনাদের টপকাতে পারবে। সর্বোচ্চ গোলদাতা হলে সবাই তোমাকে চিনবে, আলাদা একটা পরিচয় হবে। এই কথাগুলো কাজে দিয়েছে আমার জন্য। এরপর নাসরিন স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে ১৪ গোলের জয়ে আমি একাই ৮ গোল করলাম।

সতীর্থদের সঙ্গে আকলিমা (ডানে)
প্রশ্ন

আপনার এমন পারফরম্যান্সের পরও তো রানার্সআপ হয়েছে আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাব?

আকলিমা: আসলে আমরা চেষ্টা করেছিলাম। চ্যাম্পিয়ন হতে পারলেই বেশি ভালো লাগত। আসলে এখানে তো সিনিয়রদের সঙ্গে খেলেছি। এই অভিজ্ঞতা আমার কাজে লাগবে। 

প্রশ্ন

এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর আপনার লক্ষ্য কী?

আকলিমা: এবারের লিগ খেলার পর আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনূর্ধ্ব-২০ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হবে। ওই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিততে চাই। বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে চাই। সাবিনা আপুদের মতো জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখি আমিও। 

প্রতিপক্ষের জাল ছিড়ে এগিয়ে যাচ্ছেন আকলিমা
প্রশ্ন

আপনার ফুটবলে আসার গল্পটা বলবেন?

আকলিমা: বাগেরহাটের মোংলা থানার মিঠেখালি গ্রামে আমার বাড়ি। ছোটবেলায় বাড়ির সামনের মাঠে চাচাতো ভাইদের সঙ্গে ফুটবল খেলতাম। এ জন্য বাড়িতে এসে বাবার কাছে অনেকবার বকা খেয়েছি। ছেলেদের সঙ্গে খেলতাম বলে বাবা একবার রেগে গিয়ে আমার খাবার কেড়ে নিয়েছিলেন। এরপর থেকে বাবা বাড়িতে এলে ভয়ে লুকিয়ে থাকতাম। বাবা আসলে তখন চাইতেন না যে আমি ফুটবলার হই। কিন্তু  এলাকার এক বড় ভাই ফুটবলের প্রতি আমার আগ্রহ দেখে বিকেএসপিতে ট্রায়ালের ব্যবস্থা করেন। এরপর ২০১৭ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হই। ২০২০ সালে নাসরিন একাডেমির হয়ে লিগে খেলার সুযোগ পাই, পরের বছর আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাবে। 

প্রশ্ন

প্রশ্ন: এখন বাবা আপনার খেলা দেখে কী বলেন?

আকলিমা: এখন বাবা পুরোপুরি বদলে গেছেন। বাড়িতে গেলে যদি কখনো কম খাই, তাহলে বাবা রাগ করেন। ছুটির মধ্যেও যেন অনুশীলন করি, সেদিকে খেয়াল রাখেন।