Thank you for trying Sticky AMP!!

আজ ত্বকীর ১৮

ত্বকীর তৃতীয় জন্মদিনে

ত্বকী আমার হাতের মোরগ-পোলাও ও খুব পছন্দ করত। তবে কখনোই বায়না ধরত না। কিন্তু আমি জানতাম জন্মদিনে ও কী খাবে। তাই ওর জন্য মোরগ-পোলাও, বাকি সবার জন্য সাদা পোলাও রাঁধতাম। একটা সময় ওর জন্মদিনের কেক আসত হোটেল পূর্বাণী থেকে। পরের কবছর রূপসী বাংলা থেকে। গত বছরের কেকটা এসেছিল নারায়ণগঞ্জ ক্লাব থেকে। আমি আর ওর বাবা মিলে আগের দিন অর্ডার দিয়ে এসেছিলাম কেকটা। আর পরের দিন ওরাই গিয়ে নিয়ে এসেছে। ত্বকীর জন্মদিনে আমাদের বাসায় সব সময় দুটি কেক কাটা হতো।
কারণ, ৫ অক্টোবর ত্বকীর জন্মদিন। আর তার ঠিক পরদিনই সাকীর (ত্বকীর ছোট ভাই)। তাই এক দিনই দুটি কেকের অর্ডার দিতাম আমরা। একসঙ্গে এনে দুটো কেকই ফ্রিজে রাখা হতো। কিন্তু ত্বকীর কেকটা কাটার পর সাকীও কেক কাটার বায়না ধরত। বাধ্য হয়ে দুই ভাইয়ের জন্মদিন একই সঙ্গে পালন করতাম আমরা। শুধু জন্মদিন কেন, কখনো কোনো কিছুর জন্য বায়না ধরত না ও। জন্মদিন, ঈদসহ যেকোনো উৎসবে আমরাই ওকে জোর করে সব কিনে দিতাম। শুধু তা-ই না, স্কুলে যাওয়ার রিকশাভাড়া ফুরিয়ে গেলেও কখনো মুখ ফুটে বলত না। ওর বাবা হিসাব করে সময়মতো কদিনের রিকশাভাড়া একবারে দিয়ে রাখত।
ওর জন্মদিনে তো খুব বেশি মানুষ দাওয়াত করতাম না। এই প্রতিবেশী কজন আর আত্মীয়স্বজন। সেদিন সন্ধ্যায় কেক কাটা হতো। তারপর খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ত্বকী জাদু দেখাত, গান গাইত। বাচ্চারা ওর জাদু যে কী পছন্দ করত। এখন ওর জাদু দেখানোর সরঞ্জাম সব পড়ে আছে। আমার ছেলেটা নেই।
বেঁচে থাকলে ত্বকীর এবার বয়স হতো ১৮। এত বছরে ছেলেকে নিয়ে কম গল্প তো জমা হয়নি আমার। বলা যায়, ত্বকীই ছিল আমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী আর ওর বাবা ছিল ওর কাছে আদর্শ। ও খুব বেশি কথা বলত না, কিন্তু আমাকে সব কাজে সহযোগিতা করত। ঘর গোছানো থেকে শুরু করে রান্নার কাজ পর্যন্ত। আর মা দিবসের দিন বাধ্যতামূলক ছুটি পালন করতে হতো আমার। এই ছুটির ঘোষণা ও দিত আগের দিনই। আমাকে আগের দিনই বলত—‘মা, কাল তুমি কোনো কাজ করবে না, কাল তোমার সব কাজ আমি করে দেব। আমার পক্ষ থেকে মা দিবসের এটাই হলো তোমার উপহার।’
মা দিবসে ঘুম ভাঙতেই চমকে যেতাম। সাতসকালেই আমার ঘরের সব কাজ শেষ। একদম পরিপাটি করে সব সাজানো।
‘আমার শৈশব’ নামে ত্বকীর একটা খেরোখাতা আছে। সেখানে ওর জন্ম থেকে শুরু করে বড় হয়ে ওঠার নানা মুহূর্তের ঘটনা ও ছবি রাখা আছে যত্নে। আমি প্রায়ই ওই খাতাটা মেলে ধরি। ওর ঘরের বুকসেলফজুড়ে পদকের ছড়াছড়ি, ওর খেলনা, লেখা কবিতার খাতা, এগুলোর মাঝেই আমি ত্বকীকে খুঁজি। ত্বকী নেই। আজ ত্বকীর জন্মদিন। আজ পূর্বাণী কিংবা রূপসী বাংলা হোটেলের কেক আসবে না আমাদের বাড়িতে। জমবে না কোনো জাদুর আসর। জন্মদিনের কেক কাটার বদলে আমরা আজ ব্যস্ত থাকব ত্বকীকে ঘিরে কিছু অনুষ্ঠানে। বিচার চাইব ত্বকীর ঘাতকদের। মানুষের মধ্যে বিলাব ত্বকীর লেখা প্রতিবাদী কবিতা। যেখানে ত্বকী লিখেছে ‘আরও একবার আমি মানুষ হয়ে মরব/ উত্থিত হতে নিষ্কলঙ্ক ফেরেশতাদের পাশে।’
অনুলিখিত

আজ ত্বকীর জন্মদিন
ত্বকীর লেখা কয়েকটি কবিতা