আলো জ্বলা ক্রিকেট স্টাম্প
ধরুন তুমুল নাটকীয়তার ঠাসা এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল জিতে গেল বাংলাদেশ। খ্যাপাটে দৌড় দিলেন মুশফিক-সাকিব-তামিমরা। মুশফিক সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গায় থাকেন বলে সবার আগে স্মারক স্টাম্প সংগ্রহ করে নিতে পারলেন তিনিই। বাকিদের রীতিমতো প্রতিযোগিতা করতে হলো। খেলোয়াড় এগারো জন, স্কোয়াড পনেরো জনের। কিন্তু এতগুলো স্যুভেনির তো আর নেই!
জয়ের তৃপ্তি নিয়ে, স্মারক স্টাম্পটা বগলদাবা করে মুশফিকরা যেই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন, অমনি এক অস্ট্রেলীয় ভদ্রলোক বেরসিকের মতো মন্তব্য করে বসলেন, ‘কিছু মনে করবেন না, স্টাম্পগুলো ফেরত দিয়ে দিন!’
বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবে কি না তা হয়তো নিশ্চিত নয়, তবে কোনো খেলোয়াড় স্মারক হিসেবে কোনো স্টাম্প নিয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় এমন অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতেই পারেন! স্মরণীয় জয়ের স্মারক হিসেবে স্টাম্প সংগ্রহে রাখা ক্রিকেটের অলিখিত কেতার মধ্যেই পড়ে। কিন্তু এবার সব দলকেই বারণ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ আর কিছু নয়, স্টাম্পগুলো যে মহামূল্যবান। দাম ৪০ হাজার ডলার! বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩১ লাখ টাকা!
নতুন ধরনের এই স্টামটির নাম ‘জিং’। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ বিগ ব্যাশে এই স্টাম্প ব্যবহার করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি লিগেও। কিন্তু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রথমবার।
জিংয়ের আবিষ্কারক ব্রন্টে একারমান বলেছে, ‘প্রতিটা বেলের দামই একটা আইফোনের সমান। আমরা তাই খেলা শেষে এটা কোনো খেলোয়াড়কে দিয়ে দিতে পারি না। কোনো খেলোয়াড় যদি এটা নিয়ে যেতে চায়, আমি অবশ্যই তার পিছু তাড়া করে সেটা নিয়ে নেব।’
এই স্টাম্পে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। স্টাম্প ও বেলের ভেতরে আছে বিশেষ সেন্সর। বল লাগলেই সেই সেন্সর জ্বালিয়ে দিচ্ছে এলইডি (লাইট এমিটিং ডায়োড) বাতিগুলো । এমন যদি হয়, বল শুধু বেলে আঘাত করল, স্টাম্পে নয়, তাতেও সেকেন্ডের এক হাজার ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে বেল থেকে স্টাম্পে বেতারসংকেত যাবে। জ্বলে উঠবে স্টাম্প। স্টাম্প ও বেলের ভেতরে রাখা আছে ছোট্ট ব্যাটারিও।
অবশ্য একারমান নয়, ক্রিকেটের এই অভিনব সংযোজনের আসল ধন্যবাদ প্রাপ্য তাঁর মেয়ের। ‘একদিন আমার মেয়ে এমন একটা বল নিয়ে খেলছিল, যেটা নিয়ে লোফালুফি করতেই সেটা জ্বলে ওঠে। তখনই আমার মাথায় আইডিয়াটি এল’—বলেছেন একারমান। শুধু দর্শকদের মনোরঞ্জন নয়, মাঠের আম্পায়ারদেরও রান আউট বা স্টাম্পিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করছে এটা৷
কথা হলো, এত দামের বেল আর স্টাম্প, পেসারদের আঘাতে যদি ভেঙে যায়? একারমান আত্মবিশ্বাসী, ভাঙবে না। অবশ্য শ্রীলঙ্কার ম্যাচে লাসিথ মালিঙ্গার দুর্ধর্ষ সব ইয়র্কারের সময় তাঁর বুক দুরুদুরু করছিল৷ মালিঙ্গার পেসের আঘাত সহ্য যখন করতে পেরেছে, তখন আর ভয় নেই। কিন্তু শখের স্যুভেনির রাখার কী হবে? একারমান আশাবাদী, একসময় এর উৎপাদন খরচ কমে এলে তখন আর খেলোয়াড়দের স্টাম্পগুলো নিতে বাধা দেওয়া হবে না।