Thank you for trying Sticky AMP!!

ইয়াহু আর ইয়াহু থাকল না

ইয়াহু

দুই দশকের বেশি সময় ধরে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় রাজত্ব করা ইয়াহু আর কোনো স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকছে না। ইয়াহুকে কিনে নেওয়ার সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ভেরাইজন। চুক্তি বিষয়ে দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার পর গত মঙ্গলবার ইয়াহুর মূল ইন্টারনেট সম্পদকে কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভেরাইজন। এ জন্য তারা ৪৪৮ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করেছে।

ইয়াহু ভেরাইজনের অধীনে যাওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মারিসা মেয়ার অধ্যায়েরও শেষ হচ্ছে। ইয়াহু থেকে পদত্যাগ করছেন তিনি। এ জন্য তিনি ইয়াহু থেকে ২ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার পাবেন।

ইয়াহুর কর্মীদের কাছে লেখা এক বার্তায় মারিসা লিখেছেন, ‘আমার পদের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনায় আমি পদত্যাগ করছি। যা-ই হোক, সবাইকে বলতে চাই, আমি অনুভূতি, কৃতজ্ঞতা ও আশাবাদে উদ্বেলিত।’

ভেরাইজন

ইয়াহুর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভেরাইজন কর্তৃপক্ষ মেয়ারকে তাঁর ভবিষ্যৎ পথচলার জন্য শুভকামনা জানিয়েছে।

ইয়াহু ও এওএলকে নিয়ে একটি নতুন ডিজিটাল মিডিয়া কোম্পানি তৈরি করছে ভেরাইজন। নতুন ওই কোম্পানির নাম ‘ওথ’। ভেরাইজনের লক্ষ্য হচ্ছে ইয়াহুর নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে ফেসবুক, গুগলের মতো অনলাইন বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।

ইয়াহুর অধিগ্রহণ শেষ হওয়ার পর এখান থেকে ১৫ শতাংশ বা প্রায় ২ হাজার ১০০ কর্মী ছাঁটাই করবে ভেরাইজন। ইয়াহুর অবশিষ্ট অংশের নামও বদলে যাবে। ইয়াহুর নাম হবে আলতাবা ইনকরপোরেশন। এটি চীনের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলীবাবাতে ইয়াহুর বিনিয়োগের বড় অংশ ধরে রাখবে।

ইয়াহুকে কেনার ঘোষণা দেওয়ার এক বছর পরে চুক্তির কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে দুবার ইয়াহু হ্যাক হওয়ায় অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সংশয়ের মুখে পড়েছিল। এতে প্রাথমিক দামের চেয়ে ইয়াহুর দাম কমিয়ে দেয় ভেরাইজন। পাশাপাশি মামলার খরচ পৃথক করে রেখে ইয়াহুর জন্য দাম দিতে রাজি হয়।

ইয়াহুকে অধিগ্রহণের ফলে ইন্টারনেটের জনপ্রিয় একটি প্রতিষ্ঠানের একটি যুগের সমাপ্তি ঘটে গেল।

ইন্টারনেটের শুরুর প্রথম দিকে ওয়েবসাইট ডিরেক্টরি হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল ইয়াহুর। গত শতকের পর থেকে ইন্টারনেটের সমার্থক ছিল ইয়াহু। ডটকম যুগের সূচনার দিকে এর বাজারমূল্য ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছিল। কিন্তু ইয়াহুকে অধিকাংশ সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বদল, মিডিয়া, নাকি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, এ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে হয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারনেট জগতের এখনকার বড় প্রতিষ্ঠান ফেসবুককে কেনার সুযোগ হেলায় হারিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

গুগল থেকে এসে ২০১২ সালে মারিসা মেয়ার ইয়াহুর হাল ধরেন। ধসে পড়া ইয়াহুকে নানা প্রচেষ্টায় তুলে ধরার চেষ্টা চালান তিনি। মোবাইল অ্যাপসের দুনিয়ায় টিকে থাকতে বেশ কয়েকটি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণ করে ইয়াহু। তবে কোনো পদক্ষেপই ইয়াহুকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারেনি।

ইয়াহুর প্রধান নির্বাহী মারিসা মেয়ার

ইয়াহুর সাবেক জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট তপন ভাট বলেন, ‘স্বাধীন কোম্পানি ইয়াহুর শেষ পরিণতি দেখে আমি কষ্ট পেয়েছি।’

তবে ইয়াহুর দুঃখের দিনগাথা শেষ হলেও এখানকার সাবেক সব কর্মী মিলে এখন ইন্টারনেটের দুনিয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। কেউ এখন স্ল্যাকে, কেউ হোয়াটসঅ্যাপে কেউবা লিংকডইনে।

ইয়াহুর সাবেক প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ড্যান রোজেনউইগ বলেছেন, ‘তাঁরা আমাদের চারপাশেই আছেন। সিলিকনভ্যালিসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন। ইয়াহুর সমার্থক যে ডিজিটাল জীবনযাপন মানুষের মধ্যে ছিল, সেটাই তৈরি করতে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন।’
সিএনএন অবলম্বনে মো. মিন্টু হোসেন