Thank you for trying Sticky AMP!!

এমআইটির পথে...

বৃষ্টি শিকদার ও সৌরভ দাশ শেষ পর্যন্ত বেছে নিচ্ছেন এমআইটি। ছবি: খালেদ সরকার

বৃষ্টি শিকদার ও সৌরভ দাশ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক), স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ডিউক ইউনিভার্সিটিসহ বিশ্বের নামীদামি ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। কিন্তু বেছে নিতে পারবেন মাত্র একটি। কোনটি বেছে নেবেন এই দুই মেধাবী?

মধুর সমস্যায় পড়েছেন বৃষ্টি শিকদার ও সৌরভ দাশ। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবেন তাঁরা? ইতিমধ্যে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক), স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ডিউক ইউনিভার্সিটিসহ বিশ্বের নামীদামি ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু বেছে নিতে হবে যেকোনো একটি।
ব্যাপারটা যদি ছোটবেলার সেই ‘চোখ বন্ধ করো, বেছে নাও’ টাইপের হতো, তাহলেই বোধ করি বেঁচে যেতেন এই দুই মেধাবী। ‘কিন্তু ব্যাপারটা যেহেতু সে রকম নয়...’ বলতে শুরু করেন বৃষ্টি, ‘সেহেতু চোখ-কান খোলা রেখেই সিদ্ধান্তটা নিতে হবে আমাকে। তাই বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে এখন পর্যন্ত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পছন্দের তালিকায় রেখেছি। এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড বা হার্ভার্ড—কোনো একটাকে বেছে নেব শেষ পর্যন্ত। তবে শেষ পর্যন্ত এমআইটিতে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি’
এ ক্ষেত্রে সৌরভের সিদ্ধান্ত অবশ্য পাকা, ‘আমি এমআইটিতেই যেতে চাই। কারণ এমআইটিতে গবেষণার সুবিধা সবচেয়ে বেশি।’
খুব শিগগিরই এই দুই মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমাবেন বিশ্বের সেরা কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর নিশ্চয় করে ফেলবেন আরও সেরা কোনো কাজ; রাখবেন আরও সেরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর।
ভাবছেন, এখান থেকেই বুঝি শুরু হলো তাঁদের কৃতিত্বপূর্ণ জীবনের পথচলা। না, তাঁরা সাফল্যের পথে হাঁটতে শুরু করেছেন সেই শৈশবেই।
বৃষ্টির ব্যাপারটা আগে জানা যাক। তিনি এ লেভেল পরীক্ষায় চারটি বিষয়ে পেয়েছেন দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর আর ও লেভেল পরীক্ষায় কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে পেয়েছেন বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর।
ওদিকে সৌরভও কম যান না। অষ্টম শ্রেণীতে পেয়েছেন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। এসএসসিতে সবগুলো বিষয়ে জিপিএ-৫সহ চট্টগ্রাম বোর্ডে ৩১তম মেধাস্থান দখল করেছেন। এইচএসসিতেও সবগুলো বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
এসব একাডেমিক অর্জনের বাইরে সহশিক্ষা কার্যক্রমে তাঁদের অর্জনের তালিকা আরও দীর্ঘ। বৃষ্টি ২০১০ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন শিরোপা অর্জন করেন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে জাতীয় পর্যায়ে হয়েছেন রানারআপ। ২০১২ সালে ২৪তম আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডে জিতেছেন ব্রোঞ্জপদক, পেয়েছেন ‘বিশ্বসেরা নারী প্রোগ্রামার’ অ্যাওয়ার্ড।
সৌরভ ২০১২ ও ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছেন। ২০১৩ সালে এশিয়া প্যাসিফিক ম্যাথম্যাটিক্যাল অলিম্পিয়াডে রৌপ্য পদক পেয়েছেন। আর ২০১২ সালে পেয়েছিলেন ব্রোঞ্জ পদক। এ ছাড়া ২০১১ সালে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন।
এসবের বাইরে আঁকাআঁকি, উপস্থিত বক্তৃতা, আবৃত্তি ও খেলাধুলায়ও রয়েছে বৃষ্টির অসামান্য দখল। তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল ইয়াং লার্নার্স আর্ট কম্পিটিশনে জয় করেছেন দ্বিতীয় রানারআপ শিরোপা। ২০০৮ সালে ২০০ মিটার ও ১০০ মিটার স্প্রিন্টে হয়েছেন রানারআপ। ২০১১ সালে মার্কস অলরাউন্ডার প্রতিযোগিতায় বাগিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন শিরোপা। আর চট্টগ্রামে যেকোনো চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় তাঁর পুরস্কার পাওয়াটা যেন নিয়মেই পরিণত হয়েছে।
সৌরভ ২০১২ সালে বিরল বিজ্ঞান একাডেমির বিশেষ প্রশিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি রামানুজন গণিত ক্লাবের প্রশিক্ষক ও ভিডিও লেকচারার হিসেবে কাজ করেন।
বাপরে বাপ! পড়ালেখা, আঁকাআঁকি, বক্তৃতা, আবৃত্তি, খেলাধুলা—এত্ত কিছু করেন তাঁরা! নিশ্চয় অবসর মেলে না একটুও।
‘কী যে বলেন! আমি খুবই অলস প্রকৃতির একজন মানুষ। বেশির ভাগ সময় বসে বসে টিভিতে কার্টুন দেখি। নয়তো গান শুনি। অবশ্য মাঝেমধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাও দিই।’ মুখে বিনয়ের হাসি ধরে রেখে বলেন বৃষ্টি।
আর সৌরভ বলেন, ‘আমি অবসরে অনেক কিছুই করি। ক্রিকেট খেলি, হা-ডু-ডু খেলি। আর গান শুনি।’
এই দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর শৈশব-কৈশোরের সবটা কেটেছে চট্টগ্রামে। বৃষ্টি চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুল থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল সম্পন্ন করেছেন।
সৌরভ চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেছেন।
এবার তাঁদের স্বপ্নের কথা শোনা যাক। ‘কম্পিউটার বিজ্ঞানী। কারণ আমার সবচেয়ে পছন্দের কাজ প্রোগ্রামিং করা। আমি আমার জীবনটা প্রোগ্রামিং করেই কাটাতে চাই।’ ছোট্ট করে স্বপ্নের কথা জানান বৃষ্টি।
সৌরভের স্বপ্ন অবশ্য গণিত নিয়েই। ‘আমি গণিত নিয়েই থাকতে চাই। সে ক্ষেত্রে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাকে।