Thank you for trying Sticky AMP!!

গরমের দিনলিপি

.

সকাল ছয়টা ৩০ মিনিট

সকালে ঘামের সমুদ্র থেকে সাঁতার কেটে ঘুম থেকে উঠল তুহিন।

সকাল সাতটা
দীর্ঘ সময় ধরে একটা গোসল দিলে কতখানি আরাম লাগবে—সে-বিষয়ক দীর্ঘ ও মনোরম এক স্ট্যাটাস লিখে শার্ট-প্যান্ট পরে ভার্সিটির উদ্দেশে গৃহত্যাগ করল।

সকাল আটটা
ফেসবুকে চেক ইন দিল, ‘বাচ্চু মামার দোকানে জম্পেশ আড্ডা দিচ্ছি আর সঙ্গে চা, পুরি! ফিলিং জোশ!’
তিন মিনিট পর স্ট্যাটাস, ‘এত সকালে এত লম্বা আর এত বোরিং একটা ক্লাস, তাও প্রতিদিন! এসবের কোনো মানে হয়?’
স্ট্যাটাসে এক দূর সম্পর্কের বান্ধবীর সহানুভূতি, ‘এত লম্বা আর বোরিং ক্লাসে কী পড়ায় তোমাদের?’ তুহিনের জবাব, ‘ক্লাসে কোনো দিন গেলে তো জানব কী পড়ায়!’

সকাল নয়টা
আবার স্ট্যাটাস, ‘চ্যাটে এক মেয়েকে বললাম, ওহ, যা গরম পড়েছে।’ মেয়েটা বলল, ‘ভাইয়া, আপনার না এত্তগুলো করে ফ্যান, আপনার আবার গরম লাগে কী করে! ফিলিং ঠান্ডা ঠান্ডা!’

বেলা ১১টা
আবার স্ট্যাটাস, ‘আমি লাইক পাওয়ার জন্য গরম গরম স্ট্যাটাসও দিই না; অপ্রয়োজনীয় স্ট্যাটাস লিখে শত শত লোককে ট্যাগও মারি না। উইথ রিন্টু, পিন্টু, গালিব অ্যান্ড ১০০ আদারস।’
স্ট্যাটাসটা লিখে তপ্ত হূদয়খানি শান্ত করে তুহিন এবার পরবর্তী ঠিক কোন দিবস থেকে নিয়মিত ক্লাস শুরু করবে, সেটার পরিকল্পনা করতে শুরু করল।

দুপুর ১২টা
তুহিনের এখন দেহও গরম, মাথাও গরম। বন্ধু রিয়াজকে এইমাত্র ফেসবুক থেকে ব্লক করতে হলো। কত কষ্ট করে একটা চেক ইন দিয়েছিল, ‘ঠান্ডায় লাচ্ছি, মজা করে খাচ্ছি! অ্যাট বিউটি লাচ্ছি, পুরান ঢাকা।’
সেটাতে কেন রিয়াজকে কমেন্ট করতে হবে! আহাম্মকটার কত বড় সাহস, কমেন্ট করেছে, ‘দোস্ত, তুই আবার কখন বিউটিতে গেলি, তোকে না এইমাত্র ক্যানটিনে পানি খেতে দেখলাম!’

বেলা দুইটা
চ্যাট করতে শুরু করল তুহিন। বাসায় যাওয়ার সময় প্রচণ্ড জ্যাম। লোকাল বাসের ভিড় আর গরমে এটাই একমাত্র বিনোদন।
: হাই রিমা!
: হাই!
: কী করেন?
: হুমমম...
: ভাব নিচ্ছেন কেন, রিমা!
এই রিমা, এই এই...জবাব দিচ্ছেন না যে?
: বলুন।
: খুব গরম পড়েছে, তাই না?
: এসি রুম তো, বুঝতে পারছি না!
: ও ও ও, আমিও মার্সিডিজে আছি, এসি চলছে...
: ও ও ও ও! জ্যামে বসে আপনি কী করেন, ভাইয়া?
: জ্যামে আটকে পড়লে পড়াশোনা করি। এই যেমন এখন পড়ছি হানড্রেড ইয়ার্স অব সলিটিউড।
: বাহ্! আপনি তো জোশ, সিমপ্লি কুল গাই!
তুহিন শেষ লাইনটার স্ক্রিন শট নিয়ে ফেসবুকে শেয়ার দিল, সঙ্গে লিখল, ‘আজকালকার মেয়েরা যে

কী পাজি হয়েছে? আমি তো মেয়েদের যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলি, এটা তোমরা জানোই। তার পরও যদি কোনো মেয়ে সেধে এসে বলে, “বাহ্! আপনি তো জোশ, সিমপ্লি কুল গাই!” বলো তো কেমন লাগে!’

সন্ধ্যা ছয়টা
এই গরমে অনেকে সারা দিন কী করে গোসল না করে থাকতে পারে—সে-বিষয়ক একটা বিস্ময়সূচক স্ট্যাটাস দিয়ে খেয়েদেয়ে খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে নিল তুহিন।

রাত আটটা
প্রচণ্ড গরমেও সারা দিন কাজের মধ্য দিয়ে পার করার আনন্দ ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে রাতের খাওয়া শেষ করল তুহিন। তারপর বাবার গরম মেজাজের ফসল হিসেবে তাঁর সঙ্গে কিছু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়।

রাত নয়টা
রুমে গিয়ে ফ্যান অন করে ফেসবুকের হোমপেজ ঘুরে এসে লিখল, ‘সারাটা দিন গরম আর কাজের চাপে এতটাই অস্থির ছিলাম যে ফেসবুকে ঢোকারই সময় পাইনি। যাক, এখন একটু ফ্রি হলাম, সামনে পরীক্ষা; আসুন ফেসবুকিং করি!’