Thank you for trying Sticky AMP!!

মিথ্যে বলার দিন শেষ!

পরীক্ষার সময় মানুষের চোখের মণির নড়াচড়া খেয়াল করে ‘আই ডিটেক্টর’। ছবি: সিএনএন

পশ্চিম আফ্রিকায় একসময় মিথ্যাবাদী ধরা হতো পাখির ডিম দিয়ে। সন্দেহভাজনদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হতো। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হতো পাখির ডিম। এই পাখির ডিম একে একে হাতবদল হতো। হাতবদল হওয়ার পথে যার হাতে ডিমটি ভাঙত, সে-ই মিথ্যাবাদী। প্রাচীন চীনে অবশ্য পাখির ডিমের বদলে ব্যবহার করা হতো এক মুঠো চাল। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিবোতে দেওয়ার পর যার মুখে চাল শুকনো থাকবে, সে-ই নাকি মিথ্যাবাদী! চাল পড়ার চল অবশ্য আছে বাংলাদেশেও।

মানুষের এসব প্রাচীন বিশ্বাসকে অনেকে বলেন কুসংস্কার। এর পেছনে আছে মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যাও। আর বিজ্ঞান সত্য-মিথ্যা যাচাই করার জন্য অনেক আগেই আবিষ্কার করেছে ‘পলিগ্রাফ টেস্ট’। ১৯২১ সালে আবিষ্কৃত এ যন্ত্রটি মানুষের কাছে ‘লাই ডিটেক্টর’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। যদিও সেটি শতভাগ নির্ভুল ফল দিতে পারে না। আর ব্যয়বহুলও। এবার এসে গেছে মিথ্যাবাদীদের ধরার নতুন প্রযুক্তি। যার নাম ‘আই ডিটেক্টর’।
‘লাই ডিটেক্টর’ যন্ত্রটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যবহৃত। রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের তালে হেরফের, কিংবা মানসিক প্রতিক্রিয়া মাপজোখ করে মিথ্যাবাদী নির্ণয় করে যন্ত্রটি। তবে যুগে যুগে ‘পলিগ্রাফ’-এর নানা রকম পরিমার্জনা ও উন্নতিসাধন করা হলেও বিশেষজ্ঞরা কিন্তু পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারেননি। একবার অলরিল্ড নামের এক রাশিয়ান গোয়েন্দাকে ধরেছিল এফবিআই। একবার নয়, দু-দুবার ‘পলিগ্রাফ টেস্ট’-এ উতরে গিয়েছিলেন অলরিল্ড। অবশ্য শুধু বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গোয়েন্দা নয়, কিছুটা দুঁদে গোছের মানুষ কিন্তু একটু কৌশলী হলেই উতরে যেতে পারেন ‘পলিগ্রাফ টেস্ট’।
তাহলে সঠিকভাবে মিথ্যাবাদী ধরার কী উপায়? দীর্ঘদিন গবেষণার পর বিজ্ঞানীরাও সায় দিয়েছেন, মিথ্যা ধরার উপায় লুকিয়ে চোখের তারায়!
মানুষের অনুভূতির প্রতিফলন ঘটে চোখের মণি বা তারায়। ভয়, ঘৃণা, আনন্দ কিংবা মিথ্যা বলায় প্রসারিত হয় চোখের মণি। মিথ্যা বললে আমাদের চোখের মণি যতটুকু প্রসারিত হয়, সেটা এক মিলিমিটারের ভগ্নাংশ সমান। বেশির ভাগ মানুষই সাদা চোখে তা ধরতে পারে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ রাজ্যের ‘কনভার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছে, যা দিয়ে মিথ্যা বলার সময় মানুষের চোখের মণির প্রসারণ ধরা যায়। যন্ত্রটির নাম ‘আই ডিটেক্ট’। একটি ক্যামেরা ব্যবহার করে চোখ এবং অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের ভাঁওতাবাজি ধরা হয়। ‘লাই ডিটেক্টর’-এর চেয়ে সস্তা হওয়ায় ‘আই ডিটেক্ট’-এর জনপ্রিয়তা ক্রমে ঊর্ধ্বমুখী।
একসময় এফবিআইয়ে ‘পলিগ্রাফ’ নিয়ে কাজ করেছেন হুয়ান বেকেরা। এখন তিনি প্যানথার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশনের কর্মকর্তা। ‘আই ডিটেক্টর’ প্রসঙ্গে বেকেরার মূল্যায়ন, ‘চোখ হলো আমাদের হৃদয়ের জানালা। এটা এমন একটি যন্ত্র, যা বৈপ্লবিক এবং মিথ্যাবাদী ধরার ক্ষেত্রে সব ধারণা পাল্টে দেবে।’
তিন বছর আগেই বাজারে এসেছে এ যন্ত্র। এখন ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্বের ৩৪টি দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে। সূত্র: সিএনএন।