Thank you for trying Sticky AMP!!

হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা

ইঁদুর

হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার ঘটনাটি হয়তো সবার জানা।

অনেকে এটিকে গল্প হিসেবে ধরে নিয়েছেন। কিন্তু অনেক ইতিহাসবিদ বলছেন, ঘটনাটি সত্যিই ঘটেছিল। হ্যামিলিন ছিল জার্মানির হ্যানোভারের ৩৩ মাইল দক্ষিণের ছোট এক শহর। ইঁদুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শহরবাসীর আহ্বানে এক রহস্যময় বাঁশিওয়ালা বাঁশির মধুর সুরে শহরের সব ইঁদুরকে আকৃষ্ট করে ওয়েজার নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন। হ্যামিলিনের জাদুঘরে আজও একটি প্রাচীন টিনের বাঁশি আছে। ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে ইঁদুর-শিকারিরা ওই ধরনের বাঁশি ব্যবহার করত। বর্তমানে হ্যামিলিনের পৌরসভা ভবনের নামের বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘ইদুর ধরা লোকের বাড়ি’। অবশ্য পরবর্তী সময়ে ইঁদুরধরা ঘটনাটির বিয়োগান্ত পরিণতি ঘটেছিল রহস্যময় বাঁশিওয়ালার সঙ্গে শহরবাসীর চুক্তি ভঙ্গ করায়। ঘটনাটি ঘটেছিল ১২৮৪ সালের ২২ জুলাই। কিন্তু রাজস্থানের কারনি মাতা মন্দিরে প্রবেশ করে মনে হলো, হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার ইঁদুরগুলো নদীতে ডুবে যায়নি, নদী সাঁতরে সবগুলোই আশ্রয় নিয়েছে মন্দিরে। বিকানির শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে ‘কারনি মাতা মন্দির’। মন্দিরটি ইঁদুরের জন্য বিখ্যাত।

ভারত ভ্রমণের শেষ পর্যায়ে এসে জার্মানির সেই শহর সফরের অভিজ্ঞতা মনে পড়ে গেল। বিকানির ছেড়ে মান্দাওয়া যাওয়ার পথে কুমার ইয়াদব বিশেষ আগ্রহে মন্দিরটি দেখাতে নিয়ে গেলেন। মন্দির চত্বরে প্রবেশ করে মনে হলো, জায়গাটি পর্যটকদের কাছে বিশেষ পরিচিত। চত্বর ঘিরে ছোট ছোট অনেক দোকান। দোকান বিশেষ করে মন্দির পূজার সামগ্রীতে পূর্ণ। হরেক রকমের মিষ্টি, খোসা ছাড়ানো নারকেল, মহিষের দুধ, আগরবাতি ইত্যাদি। লাল শামিয়ানা টাঙানো এক জায়গায় জুতা খুলে রাখার ব্যবস্থা। টিকিট কেটে খালি পায়ে প্রবেশ করতে হবে মন্দিরে। বেশ কয়েকজন বিদেশি-বিদেশিনীকে দেখলাম খালি পায়ে প্রস্তুতি নিতে। মন্দিরের ভেতরটা দেখার উদ্দেশ্যে খালি পায়ে ক্যামেরা হাতে ঢুকলাম। আলো-আঁধারি মন্দিরে পা রেখেই চমকে উঠতে হলো। সাদা টাইলসের মেঝেয় হাজার হাজার কালো ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে। মন্দিরের ভেতরে দুই কোনায় বড় বড় দুটি গামলায় দুধ। দুধের ভেতর হাবুডুবু খাচ্ছে অনেকগুলো ইঁদুর, আরও অনেকেই প্রতিক্ষারত। দুধ ও ইঁদুরের গা থেকে বের হওয়া তরল পদার্থে সাদা মেঝে পিচ্ছিল ও হালকা গন্ধে আচ্ছন্ন। নাকে রুমাল বেঁধে অবাক হয়ে পর্যটকেরা সেই দৃশ্য দেখছেন।

ঘরের ভেতর একটি লম্বা বেঞ্চ। বসার উপায় নেই। গায়ে দুধ মেখে ইঁদুরেরা খেলছে। ঘরটি পেরিয়েই ছোট আরেকটি ঘর। প্রমাণ আকারের দেবী মূর্তি দেয়ালে দাাঁড়িয়ে। দেবীর পায়ে একটি মালসায় জ্বলন্ত অঙ্গার। পূজারিরা পূজা করছেন। দেবীর পায়ের আশপাশে বেশ কয়েকটি বেতের ঝাঁকায় মিষ্টান্ন। ইঁদুরেরা নির্ভাবনায় মিষ্টান্নের ওপর খেলা করছে। ইঁদুরের স্পর্শ করা মিষ্টান্ন পূণ্যে পূর্ণ। মন্দিরে ২০ হাজার কালো ইঁদুর বাস করে। কয়েকটি আবার শ্বেতবর্ণ। শ্বেতবর্ণ ইঁদুর-দর্শন ভাগ্যের প্রতীক। অবশ্য আমার মন্দিরে শ্বেতবর্ণ ইঁদুর দেখার সৌভাগ্য হয়নি।

স্টকহোম, সুইডেন

liakat.stockholm@yahoo.com