Thank you for trying Sticky AMP!!

কিলার হোয়েলে প্রজাতির তিমি

তিমি কেন বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে

বড় আকারের তিমির প্রজাতির মধ্যে অন্যতম অরকা বা কিলার হোয়েল। এত দিন উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের কিলার হোয়েল প্রজাতির তিমির শরীরে ক্ষতিকারক পদার্থ শনাক্ত হলেও নতুন একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, আর্কটিক সাগরসহ পশ্চিম–উত্তর আটলান্টিকের তিমিগুলোও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে কানাডার মন্ট্রিয়েলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আনাইস রেমিলি জানিয়েছেন, তিমিগুলো খাবারের কারণেই বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। উত্তর আটলান্টিকে থাকা তিমিদের চর্বিতে জৈব দূষণকারী বা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়া বিষাক্ত পদার্থগুলো শোষণ করায় এগুলো তিমির চর্বিতে জমা হয়। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি জার্নালে তিমির বিষক্রিয়ার বিষয়টি নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ তিমির রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। তাদের শারীরিক বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। কখনো কখনো প্রজননেও বাধা দিতে পারে এসব রাসায়নিক পদার্থ। খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে দূষিত পদার্থের মিশ্রণের কারণে এমনটা হচ্ছে। তিমি প্রাথমিকভাবে যেসব মাছ খায়, সেগুলোও দূষণের শিকার হচ্ছে। বেশি পরিমাণে বিষক্রিয়া আক্রান্ত হওয়ার কারণে কিলার হোয়েল প্রজাতির তিমিকে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত প্রাণীদের মধ্যে একটি বলেও অভিহিত করছেন গবেষকেরা।

Also Read: নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমি কি বিলুপ্ত হয়ে যাবে

পূর্ব–উত্তর আটলান্টিকের তিমিদের প্রধান খাবার হেরিং মাছ। মধ্য-উত্তর আটলান্টিকের তিমিদের প্রধান খাবার সিল ও ম্যাকেরেল। পশ্চিম–উত্তর আটলান্টিকের তিমিগুলোর পছন্দের খাবার হচ্ছে বেলিন তিমি, পোরপোইস, বেলুগাস, নারওহাল ও সিল। পশ্চিম–উত্তর আটলান্টিকের আশপাশের দেশগুলো শিল্পোন্নত বলে সমুদ্রে বেশি দূষিত পদার্থ বা রাসায়নিক পণ্য ফেলা হচ্ছে। এসব পদার্থ বিভিন্ন মাছের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব কারণে তিমিরা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। দূষণের কারণে তিমির মতো সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীরা নিয়মিত প্রজননে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার রেইনকোস্ট কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞানী পিটার রস বলেন, ‘এ ধরনের তিমি সাধারণত দীর্ঘজীবী হয়। কিন্তু সমুদ্রের দূষণ বাড়ার কারণে তিমিগুলো বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। কানাডীয় আর্কটিক, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জসহ উত্তর আটলান্টিকে থাকা বিভিন্ন বয়স ও লিঙ্গের ১৬২টি তিমির চর্বির নমুনা পরীক্ষা করে দূষণের মাত্রা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।’

বিজ্ঞানী পিটার রস ২০০০ সালে প্রথম তিমির শরীরে বিষক্রিয়ায় বিষয়টি প্রমাণ করেছিলেন। পশ্চিম–উত্তর আটলান্টিকের পানিতে উচ্চমাত্রার দূষিত পদার্থের মাত্রা গত ২২ বছরে অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাগরের পরিবেশ আসলে ভালো নেই। এখন তো ৯০ বছরের বয়স্ক তিমিদের শরীরেও বিষক্রিয়ায় সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। মহাসাগর সীমাহীন নয়, আমাদের গ্রহটিও সীমাবদ্ধ। তারপরও থামছে না দূষণ। প্রমাণের অভাবে দূষণকারী পদার্থ তিমি প্রজননে কতটা প্রভাব রাখছে, তা এখনো নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। সাধারণভাবে বলা যায়, তিমির প্রজননের এসব দূষিত পদার্থ অবশ্যই নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে।’ কানাডার বিজ্ঞানী তানিয়া ব্রাউন বলেন, ‘দূষণের পাশাপাশি সমুদ্রে শব্দের মাত্রাতিরিক্ত উৎস ও মানসম্পন্ন শিকারের অভাবে কিলার হোয়েলে প্রজাতির তিমি ঝুঁকিতে আছে। প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিমে মাত্র ৭৩টি কিলার হোয়েলের খোঁজ পাওয়া গেছে। আগের চেয়ে এ সংখ্যা অনেক কম।’

ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির তথ্যমতে, সাগর-মহাসাগরগুলোয় কীটনাশকসহ বিভিন্ন শিল্পের দূষিত পদার্থ ও রাসায়নিক পণ্য ফেলা হচ্ছে। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার আইন করে বন্ধ করে। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে অনেক দূষিত পদার্থ এখনো সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে। আর তাই জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পের দূষিত পদার্থ ও রাসায়নিক পণ্যের কারণেও তিমিদের বেঁচে থাকা কঠিন হচ্ছে।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক