Thank you for trying Sticky AMP!!

পানিতে থাকা রাসায়নিক পদার্থ, কীটনাশকসহ বিভিন্ন দূষিত কণা সহজেই পরিশোধন করতে পারে পানিপোকা।

পানির পোকা দূষিত পানি পরিষ্কার করবে

রাসায়নিক উপাদান অপসারণ না করে শিল্পকারখানার বর্জ্যপানি নদী বা কৃষিজমিতে ফেলার কারণে বাস্তুতন্ত্রের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়। এর কারণে নদী বা খালের পানিসহ ফসলও দূষিত হয়ে যায়। বিষয়টি জানার পরও রাসায়নিক উপাদানযুক্ত দূষিত পানি পরিশোধন করা বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় এ ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। এ সমস্যা সমাধানে পানিতে থাকা পোকার মাধ্যমে দূষিত পানি বিশুদ্ধ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। তাঁদের দাবি, পানিতে থাকা রাসায়নিক পদার্থ, কীটনাশকসহ বিভিন্ন দূষিত কণা সহজেই পরিশোধন করতে পারে পানিপোকা। এ বিষয়ে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক কার্ল ডিয়ার বলেন, ‘ময়লা পানির জন্য ডাইসন ব্র্যান্ডের মতো ভ্যাকুয়াম ক্লিনার তৈরি করেছি আমরা। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার যেমন বর্জ্য পরিষ্কার করে, তেমনি পানিপোকা পানিকে পরিষ্কার করতে পারে।’

সায়েন্স অব টোটাল এনভায়রনমেন্ট সাময়িকীতে পানিপোকা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের অধ্যাপক লুইসা ওরসিনি বলেন, ‘ড্যাফনিয়া গণের প্রাণীদের পানির মাছি বলা হলেও তারা আসলে মাছি নয়। ৪৫০টিরও বেশি প্রজাতির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্রাস্টেসিয়ানের একটি দল নিয়ে ড্যাফনিয়া গণ গঠিত। এরা শেওলা বা ব্যাকটেরিয়ার ছোট কণা খেয়ে ফেলতে পারে। এই কৌশলকেই ফিল্টার হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। শুধু তা–ই নয়, এসব পোকা রাসায়নিক উপাদানও শোষণ করতে পারে।’

গবেষণায় প্রাথমিকভাবে চার ধরনের পানিপোকা বেছে নেওয়া হয়। এই পোকারা ফার্মাসিউটিক্যাল যৌগ ডাইক্লোফেনাক, কীটনাশক অ্যাট্রাজিন, ভারী ধাতু আর্সেনিক ও শিল্পে ব্যবহৃত রাসায়নিক পিএফওএস খেয়ে ফেলতে পারে। এ গবেষণা চালানোর জন্য গবেষকেরা নদীর তলদেশের পলিতে আটকে থাকা পানিপোকার সুপ্ত ভ্রূণ সংগ্রহ করে ব্যবহার করেছেন। এসব পোকার ভ্রূণ আবদ্ধ অবস্থায় নদী বা হ্রদের তলদেশে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে। গবেষণা চালানোর জন্য ক্লোনিং করে পোকাগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরপর পোকাগুলোর জেনেটিক অবস্থা ও বেঁচে থাকার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। প্রথমে একটি অ্যাকুয়ারিয়ামে এ পরীক্ষা চালানো হয়। এরপর পোকাগুলোর সক্ষমতা ২ হাজার লিটারেরও বেশি পানিতে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষাগারে এসব পোকা ৯০ ভাগ ডাইক্লোফেনাক, ৬০ ভাগ আর্সেনিক, ৫৯ ভাগ অ্যাট্রাজিন এবং ৫০ পিএফওএস খেয়ে ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোসেফ আর শ বলেন, ‘সস্তা ও কার্বন-নিরপেক্ষ হওয়ার কারণে এ ধরনের পোকাগুলোর মাধ্যমে অত্যাধুনিক পানি পরিশোধনাগার তৈরির সুযোগ রয়েছে। যেসব দেশে অবকাঠামো নিয়ে সমস্যা রয়েছে, তারা এসব পোকার মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করতে পারে। জিন এডিটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক দ্রব্য ধ্বংসের জন্য এসব পোকা ব্যবহার করা যেতে পারে।’
সূত্র: গার্ডিয়ান