Thank you for trying Sticky AMP!!

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের বিচার দাবি

জেইদ রাদ আল-হুসেইন

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। গত বৃহস্পতিবার মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন ও গণহত্যার অভিযোগের সপক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ চায় মিয়ানমার। এর এক দিন পর গতকাল শুক্রবার রোহিঙ্গা নিধনে জড়িতদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর এ আহ্বান জানালেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের প্রধান জেইদ রাদ আল-হুসেইন। মুসলমান সংখ্যালঘুদের ওপর ‘গণহত্যা কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগ তদন্তের জন্য রাখাইনে অনুসন্ধান কর্মকর্তাদের প্রবেশের অনুমতি দিতে মিয়ানমারের সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
গত বছরের ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস অভিযান শুরু করে।
এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং তুন বলেন, ‘রাখাইনে মুসলিম সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ এখনো সেখানেই বসবাস করছে। যদি সেখানে গণহত্যাই চালানো হতো তবে তারা সবাই পালিয়ে যেত।’
মিয়ানমারের উপদেষ্টার এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের প্রধান রাদ আল-হুসেইন। তিনি বলেন, ‘আমরা যা দেখেছি সেখানে দৃঢ় সন্দেহ রয়েছে যে, গণহত্যার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। একমাত্র আদালতই এটি নিশ্চিত করতে পারেন।’
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান হিসেবে অভিহিত করেছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসমূহ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বনেতারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন।
গত বুধবার রাদ আল-হুসাইন অভিযোগ করেন, মিয়ানমারে সেনা অভিযান নিয়ে বিশ্বজুড়ে অভিযোগ ওঠার পরও দেশটির সেনাবাহিনী তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে গড়িমসি করেছে।
এর আগে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানে জনশূন্য হয়ে পড়া রোহিঙ্গা গ্রামগুলো বুলডোজার দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে। গণহত্যার বিষয়টি ঢাকতেই এটা করছে মিয়ানমার সরকার। এ বিষয়ে রাদ আল-হুসেইন বলেন, গণকবর নিশ্চিহ্ন করতে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোয় বুলডোজার চালানোর খবরে মনে হচ্ছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ মানবতার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অপরাধের প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করতে ইচ্ছা করেই বুলডোজার চালিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মিয়ানমারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা তুন বলেন, এ অভিযোগ খুবই গুরুতর। তিনি বলেন, ‘সেখানে জাতিগত নিধন ও গণহত্যা হয়েছে কি না, সে সম্পর্কে রায় দেওয়ার আগে আসলেই কী হয়েছে, সেটা আমাদের দেখে নেওয়া উচিত।’
মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি প্রমাণ আকারে হাজির করতে বাংলাদেশ বা অন্যান্য দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন। আগামী সোমবার দলটি তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেবে।
মিয়ানমারের ওই উপদেষ্টা বলেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার সরকার ও তাদের যথাযথ নিরাপত্তা
ও সম্মান দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘এআরএসএ সেনাবাহিনীর ওপর হামলা করতে গ্রামবাসীকে বাধ্য করত।’
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দূত ইয়াংঘি লি গতকাল বলেন, ‘রাখাইনের ঘটনাগুলোয় গণহত্যার ছাপ রয়েছে বলে ক্রমাগত জনমত বাড়ছে।’ তিনি বলেন, সেখানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর ওপর যে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর বিচারের জন্য তিনি চাপ সৃষ্টি করবেন।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে ইয়াংঘি লি বলেছেন, ‘ (মিয়ানমার) সরকারের যে নেতৃত্ব হস্তক্ষেপ, নিপীড়ন থামাতে অথবা নিন্দা জানাতে কিছুই করেনি, তাদেরও জবাবদিহির মুখোমুখি করা উচিত।’
রাখাইনে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাপারে জাতিসংঘের পক্ষে তদন্ত করতে ইয়াংঘি লি মিয়ানমার যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাঁকে সফরের অনুমতি দেয়নি।