Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনাভাইরাস আরও অনেক দিন থাকবে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বজুড়েই নাজেহাল অবস্থা। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে দেশে দেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কিছু দেশ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়ে এরই মধ্যে বিধিনিষেধ শিথিল করতে শুরু করেছে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, করোনার এই প্রাদুর্ভাব আরও অনেক দিন থাকবে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত বুধবার সংবাদ ব্রিফিংয়ে এভাবেই বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস। তিনি বলেন, ‘কোনো ভুল করবেন না। আমাদের আরও অনেকটা পথ যেতে হবে। এই ভাইরাস আমাদের সঙ্গে আরও অনেক দিন থাকবে।’

আধানোম আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন অঞ্চলে সংক্রমণের বিভিন্ন ধারা লক্ষ করছি। আবার একই অঞ্চলের একেক এলাকায় একেক ধরনও দেখা যাচ্ছে। ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলে মহামারি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে বা কমে আসছে। আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে এখনো সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা কম। এরপরও আমরা ভয়ের সঙ্গে লক্ষ করছি যে ওই সব এলাকায় সংক্রমণ বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, বেশির ভাগ দেশই মহামারির প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। কিছু দেশে বৈশ্বিক এই মহামারির শুরুর দিকে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। ওই সব দেশে সংক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, ঘরে থাকা, সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুন মেনে চলাসহ করোনা ঠেকাতে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ অনেক দেশেই সংক্রমণ ছড়ানোর হার কমিয়েছে। কিন্তু এই ভাইরাস এখনো অত্যন্ত বিপজ্জনক রয়ে গেছে। প্রাথমিক যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দেখা গেছে যে বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষই করোনার সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর অর্থ হলো এই মহামারি আবার মাথাচাড়া দিতে পারে।

তেদরোস আধানোম সতর্ক করে বলেন, করোনা মহামারির আগে বিশ্বটা যেমন ছিল, এরপর আর তেমন থাকবে না। তিনি বলেন, অনেকেই ঘরের বাইরে পা রাখতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন। মানুষের জীবন ও জীবিকা আটকে গেছে। কিন্তু এই বিশ্ব আর আগের মতো থাকবে না। ‘নতুন বাস্তবতা’ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।

এদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান আবারও করোনা মোকাবিলায় সব দেশের প্রতি রোগী শনাক্তকরণ, আলাদাকরণ, সন্দেহভাজন প্রতিটা রোগীকে পরীক্ষা করা, সব রোগীর যথাযথ সেবা দেওয়া এবং রোগী ও সন্দেহভাজন রোগীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিন করার আহ্বান জানান।

তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, ইউনিসেফ, ইউএনএইচসিআর, আইএফআরসি, ইউনেসকোসহ অন্যান্য অংশীদারদের সহযোগিতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শিশুদের জন্য কোভিড-১৯ রোগ সম্পর্কিত একটি বই প্রস্তুত করেছে, যা বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে এই বই বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিশু এবং সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক, গ্রিস ও নাইজেরিয়ায় শরণার্থী শিশুদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান আরও জানান, তাঁর সংস্থার কাছে বিভিন্ন দেশের সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরা জানতে পেরেছেন, ৭৮ শতাংশ দেশের মহামারি মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও করণীয়–সংক্রান্ত পরিকল্পনা রয়েছে। ৭৬ শতাংশ দেশ রোগী শনাক্তে জোরদার ব্যবস্থা নিয়েছে। ৯১ শতাংশ দেশের করোনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু ৬৬ শতাংশ দেশ করোনা সংক্রমিত রোগীর জন্য যথোপযুক্ত চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে, ৪৮ শতাংশ দেশে করোনা ঠেকাতে সামাজিক অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা রয়েছে এবং ৪৮ শতাংশ দেশে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পানি, পয়োনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও মানদণ্ড রয়েছে। এর অর্থ করোনা মোকাবিলার সর্বাত্মক চেষ্টায় এখনো অনেক ফাঁক রয়ে গেছে।

মুসলমান সম্প্রদায়কে পবিত্র রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলনে, উদারতা ও সংহতি প্রদর্শনের একটি সুযোগ এটি।