Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়

দক্ষিণ এশিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। এই অঞ্চলে শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা ৬ লাখ ৭০ হাজার ছুঁই–ছুঁই। মৃত্যু ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে।

চীনের উহান থেকে গত জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। প্রাথমিক পর্যায়ে ইউরোপের দেশগুলোয় সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক হারে বাড়তে শুরু করে। এরপর সংক্রমণ ছড়ায় আমেরিকায়। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, কানাডা, মেক্সিকোসহ বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। এখন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়।

গত বুধবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, বিশ্বে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা ৮০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মহামারি ছড়িয়ে পড়ার প্রথম দুই মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৮৫ হাজার। অথচ গত দুই মাসে শনাক্ত হয়েছে ৬০ লাখের বেশি রোগী। তিনি এ সময় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দক্ষিণ এশিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকায় করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় এখন সবচেয়ে বেশি রোগী ভারতে। করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যমতে, গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ভারতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি। তাঁদের মধ্যে মারা গেছেন সাড়ে ১২ হাজারের বেশি। রোগীর সংখ্যা পাকিস্তানে দেড় লাখ এবং বাংলাদেশে লাখ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ বাড়ছে আফগানিস্তান ও নেপালেও। তবে ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ এখন পর্যন্ত অনেকাংশেই মহামারি সামলে চলেছে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক আবদুর রব বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। রোগীদের হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে। সড়কে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যাচ্ছেন কোনো কোনো রোগী।’

ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্যবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক আর্চি ক্লিমেন্টসের আশঙ্কা, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।

করোনা মোকাবিলায় ভারত গত মার্চের শেষের দিকে সবচেয়ে কঠিনতম লকডাউনের পথে হেঁটেছিল। কিন্তু এতে বেকার হয়ে পড়েছিল দেশটির কোটি কোটি ভাসমান শ্রমিক। এমনকি তারা বাড়িও ফিরতে পারছিল না। লকডাউন চলাকালে কয়েক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ভাসমান শ্রমিকদের সংঘর্ষও হয়। সব মিলিয়ে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছিল এই শ্রমিকেরা আটকা পড়ায়। অর্থনীতিসহ সার্বিক বিবেচনায় একপর্যায়ে সরকার লকডাউন শিথিল করে। কিন্তু তারপরই সংক্রমণের যেন বিস্ফোরণ ঘটে ভারতে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারতের মতো দেশগুলোর বড় সমস্যা হলো দারিদ্র্য ও বিপুলসংখ্যক ভাসমান শ্রমিক।

পাকিস্তানের চিত্র আরও ভয়াবহ। মৃত্যু তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, জুলাই নাগাদ পাকিস্তানে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও দেশটির কর্তৃপক্ষের প্রতি লকডাউন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু লকডাউনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

এএফপি জানায়, পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় থেকেই পাকিস্তানে প্রাদেশিক সরকারগুলোর জারি করা লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এখন দেশটিতে সামাজিক দূরত্বও মানছেন না অনেকে। পেশোয়ারের চিকিৎসক সামরা ফাখর বলেন, বাজারে জনসমাগম হচ্ছে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় দলে দলে যোগ দিচ্ছে, সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই।

পাকিস্তান ইসলামিক মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের চিকিৎসক সাইদুল্লাহ শাহ এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতির সুযোগ ছিল। দুর্ভাগ্যবশত সেটা হয়নি। পরিস্থিতি এখন খারাপের দিকে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কি এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম? মোটেই না। যখন হাসপাতালে রোগীর জন্য শয্যা পাওয়া যাবে না, তখন মানুষ সহিংস হয়ে উঠবে।’

একই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সংঘাতকবলিত আফগানিস্তানে। কাবুলের গভর্নর মোহাম্মদ ইয়াকুব হায়দারি গত সপ্তাহেই বলেছেন, সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। মানুষ রাতের আঁধারে মৃত প্রিয়জনকে দাফন করছে। দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে।