Thank you for trying Sticky AMP!!

কানাডার ওপর সৌদি এত খাপ্পা কেন?

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা নতুন কিছু নয়। বিষয়টি নিয়ে রিয়াদের সমালোচনা আগেও বহু হয়েছে। তবে আগে রিয়াদের প্রতিক্রিয়া অতটা কড়া ছিল না, যতটা কানাডার ক্ষেত্রে দেখা গেল। সৌদি আরব এত খাপ্পা কেন? 

সৌদি আরবে কারাবন্দী অধিকারকর্মীদের মুক্তি দিতে রিয়াদের প্রতি অনেকটা সাদামাটাভাবেই আহ্বান জানিয়েছিল অটোয়া। এই আহ্বানেই রেগে-মেঘে আগুন সৌদি আরব।

সৌদি আরবের ক্ষোভের মাত্রা এতটাই তীব্র হয় যে, তারা কানাডার বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে।

বহিষ্কার তো বহিষ্কার, সৌদি সরকার কানাডার রাষ্ট্রদূত ডেনিস হরাককে দেশ ত্যাগে সময় দেয় মাত্র ২৪ ঘণ্টা। একই সঙ্গে কানাডায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতকেও প্রত্যাহার করতে ‘ভুল’ করেনি রিয়াদ।

কানাডার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার ও নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করার মধ্যে থেমে নেই সৌদি আরবের ‘গরম’ প্রতিক্রিয়া। তারা কানাডার সঙ্গে সব ধরনের নতুন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ স্থগিত করেছে। একই ঘটনার জেরে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা স্থগিত করেছে টরন্টোর সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট।

কানাডার ওপর সৌদি আরব যে ভয়াবহ রকমের চটেছে, তার প্রমাণে রিয়াদ বলেছে, দেশটিতে (কানাডা) সৌদি আরবের যে হাজারো শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন, তারা তাঁদের অন্যান্য দেশে স্থানান্তর করবে।

কানাডার আচরণকে (অধিকারকর্মীদের মুক্তির আহ্বান) কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত বলে অভিহিত করেছে সৌদি আরব। আর সৌদি আরবের আগ্রাসী পদক্ষেপের জবাবে কানাডা বলেছে, তারা মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলেই যাবে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানবাধিকার সুরক্ষায় তারা সোচ্চার থাকবে।

কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা জানিয়ে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, নারীর অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ সারা বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষায় তাঁর দেশ সব সময় সক্রিয় ভূমিকা রেখে যাবে।

মানবাধিকার প্রশ্নে সৌদি আরব ও কানাডার মধ্যে যে কূটনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা প্রশমিত হওয়ার কোনো লক্ষণ আপাতত নেই। কারণ, দুই দেশের কেউ-ই ছাড় দেওয়ার অবস্থানে নেই। তবে এই উত্তেজনার সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক হলো রিয়াদের চরম আগ্রাসী মনোভাব।

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, কানাডা ও সৌদি আরবের মধ্যকার উত্তেজনাকর সম্পর্কে প্রতীয়মান হয়, রিয়াদ আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে। দেশটির এমন নীতি গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সৌদি আরবের তরুণ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

সৌদি আরবের ভাবমূর্তি উন্নয়নে যুবরাজ বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়ে সাড়া ফেলেছেন। এই মাস দু-এক আগেও নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে সৌদি আরব বিশ্বের প্রশংসা কুড়ায়। কিন্তু একাধারে দেশটিতে নারী অধিকারকর্মীসহ ভিন্নমতাবলম্বীদের ধরপাকড়ের কার্যক্রম জোরকদমে চলে।

যুবরাজ সালমান নতুন সৌদি আরব গড়তে চান। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই দেশটির ভাবমূর্তির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। এই প্রেক্ষাপটে তিনি বাইরের দেশ থেকে সমালোচনা শুনতে নারাজ। আবার বহির্বিশ্বকে তিনি দেখিয়ে দিতে চান, সৌদি আরব দুর্বল প্রকৃতির দেশ নয়। কাতারের ওপর উপর্যুপরি অবরোধ দিয়ে সৌদি আরব তাঁর মেজাজ দেখিয়েছে। ইয়েমেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে রিয়াদ তার শক্তিমত্তা জানান দিচ্ছে। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের বিরুদ্ধেও তার অবস্থান বেশ কড়া।

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, কানাডার সঙ্গে সৌদি আরবের খুব একটা শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক নেই। এ কারণে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিতে সৌদি আরবকে বেশি ভাবতে হয়নি।

কানাডার ব্যাপারে সৌদি আরব এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাকে এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশলের সঙ্গে তুলনা করা যায়। কানাডাকে একটা সমুচিত জবাব দেওয়া তো হলোই, পাশাপাশি সমালোচনামুখর অন্য পশ্চিমা সরকারগুলোকেও যুবরাজ সালমানের নতুন সৌদি আরবের মেজাজমর্জি চোখের সামনে উদাহরণসহ বুঝিয়ে দেওয়া হলো।