Thank you for trying Sticky AMP!!

জি ২০ ওসাকা শীর্ষ সম্মেলন: সবার নজর বাণিজ্য সংঘাতে

চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে পশ্চিম জাপানের ওসাকা শহরে শুরু হচ্ছে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় ২০টি অর্থনীতির নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন। ১৯টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নিয়ে এই অনানুষ্ঠানিক জোট গঠিত হলেও প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করে এবারের সম্মেলনেও এর বাইরে আরও কিছু প্রভাবশালী দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এর ফলে আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া দুদিনের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বিশ্বের ২৭টি দেশ ও সেই সঙ্গে জাতিসংঘসহ ১০টি আন্তর্জাতিক সংগঠনের নেতারা ওসাকায় সমবেত হবেন।

শীর্ষ সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে শুরু করে পরিবেশ সমস্যা ও স্বাস্থ্যসেবা পর্যন্ত বিস্তৃত বিষয়াবলি অন্তর্ভুক্ত আছে। তবে এবারের সম্মেলনে সবকিছু ছাপিয়ে বাণিজ্য নিয়ে দেখা দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র-চীন বিতর্ক এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব অংশগ্রহণকারী নেতাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করছে সবচেয়ে বেশি। এর কারণ, মূল সম্মেলনের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নেতাদের একান্ত বৈঠকে মিলিত হতে সম্মত হওয়া। ওসাকায় নির্ধারিত সেই বৈঠকে তাঁরা বাণিজ্য সংঘাতের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার মধ্যে দিয়ে উত্তেজনা প্রশমনে পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হন কি না, সেদিকে এখন নজর দিচ্ছেন সংবাদমাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহান্তে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় ওসাকায় বৈঠকে বসতে সম্মত হন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অন্যের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া অবস্থায় একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে এগিয়ে আসে কি না, তা নিয়ে প্রত্যাশা ও শঙ্কা দুটোই বেড়ে চলেছে। প্রত্যাশা এ জন্য যে সমঝোতা হলে বিশ্ব অর্থনীতি আপাতত হয়তো তাৎক্ষণিক নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে দুই দেশ এরপরও নিজ নিজ অবস্থানে অটল থাকলে সেই অবস্থা অন্যান্য দেশকে কতটা প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন।

গত সপ্তাহে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও তাঁর চীনবিরোধী কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। অন্যদিকে চীন বলে আসছে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলিতে কোনো রকম ছাড় দিতে তারা প্রস্তুত নয়। এদিকে চীনের জনগণের মধ্যে মার্কিনবিরোধী মনোভাব আরও কিছুটা উসকে দিতে দেশের সংবাদমাধ্যম সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা বাড়িয়েছে। ইংরেজি ভাষার দৈনিক ‘গ্লোবাল টাইমস’-এ গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়েছে, দেশের জন্য অনুকূল শর্তাবলি আদায় করে নিতে কঠোর অবস্থান ধরে রাখায় চীনের ভয় পেলে চলবে না।

এ রকম বাগ্‌যুদ্ধ এবং এর পাশাপাশি একে অন্যকে দিয়ে যাওয়া শুল্ক আরোপের হুমকি চলতে থাকা অবস্থায় ওসাকায় জি ২০ শীর্ষ বৈঠকের বাইরে ট্রাম্প ও সি আলোচনায় বসতে সম্মত হওয়ায় তা আশার ইঙ্গিত দেখাচ্ছে এবং সেদিকে এখন সবাই নজর দিতে শুরু করেছেন।

জাপানের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা মিজুহো রিসার্চ ইনস্টিটিউটের করা হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিটি পণ্যের বেলায় ২৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এর ফলে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। জাপানের বেলায় সংকোচনের হার শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলেও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সতর্ক করে দিয়েছে। এর ফলে ওসাকা সম্মেলন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে একটি সমঝোতা চাইছে সবাই।

এদিকে বিশ্বের ২৭টি দেশ ও সরকারপ্রধানের আসন্ন সফরের প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে আছে। জি ২০ উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা পশ্চিম জাপানের কানসাই অঞ্চলে নেওয়া হচ্ছে। ওসাকার মূল সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল চলতি সপ্তাহের শেষ দিক থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং নাগরিকদের পাতাল রেল কিংবা ট্রেনে চলাচলের উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। ওসাকার বিভিন্ন স্কুলও আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দু দিনের জন্য বন্ধ রাখা হবে। নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশের ৩২ হাজার সদস্যকে সার্বক্ষণিকভাবে মোতায়েন রাখা হবে। সেই দায়িত্ব পালনের জন্য দরকার হওয়া পুলিশের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করে নিতে সমগ্র জাপান থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ইতিমধ্যে ওসাকায় পাঠানো হয়েছে।