Thank you for trying Sticky AMP!!

নতুন ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত, এবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদনের পালা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকরে নতুন একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ। বৃহস্পতিবার ইইউ সম্মেলন শুরুর আগে এই সমঝোতার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে চুক্তিটি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের অনুমোদন পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে। সরকারের অংশীদার নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) চুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই জানিয়ে দেয়, তারা এই চুক্তিতে সমর্থন দেবে না। এ ছাড়া ব্রেক্সিট নিয়ে বিবাদের জের ধরে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ২০ জন আইনপ্রণেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের কারণে পার্লামেন্টে সরকারের কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধারেকাছেও নেই ক্ষমতাসীনেরা।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘আমরা একটি চমৎকার চুক্তি পেয়েছি, যা আমাদের দেশের নিয়ন্ত্রণ আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনবে।’

আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার এটিকে ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি বলে মন্তব্য করেন। চুক্তিটি অনুমোদনে ইইউর সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটাই বিচ্ছেদপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চূড়ান্ত সময়। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের উচিত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইইউর ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্পর্ক নির্ধারণের কাজ শুরু করা।’

সমঝোতার পর উভয় পক্ষের আইনজীবীরা এখন চুক্তিটি স্বাক্ষরের জন্য এর লিখিত রূপ চূড়ান্ত করছেন।

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এর আগে একটি চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। কিন্তু দেশটির পার্লামেন্ট তা তিন দফা প্রত্যাখ্যান করে। যে কারণে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ গত ২৯ মার্চ থেকে দুই দফা পিছিয়ে ৩১ অক্টোবর করা হয়। আর ব্রেক্সিট কার্যকর করতে না পারায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন থেরেসা মে।

বৃহস্পতিবার ও আগামীকাল শুক্রবার ইইউ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সমঝোতার মাধ্যমে ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর করতে এটিই ছিল শেষ সুযোগ। আবার ১৯ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করতে না পারলে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পেছাতে সরকারকে বাধ্য করতে আইন পাস করে রেখেছে পার্লামেন্ট। কিন্তু বরিস জনসনের সরকার বিচ্ছেদের দিনক্ষণ আর পেছাতে মোটেই রাজি নয়। যে কারণে বেশ তড়িঘড়ি করেই ইইউর সঙ্গে এই সমঝোতা করা হয়।

পার্লামেন্টের অনুমোদনের জন্য আগামী শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

থেরেসা মে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে আপত্তির কেন্দ্রে ছিল আয়ারল্যান্ড সীমান্তের ব্যবস্থাপনা। স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত উন্মুক্ত রাখতে চুক্তিবদ্ধ যুক্তরাজ্য। স্বাধীন আয়ারল্যান্ড ইইউর সদস্য রাষ্ট্র। তাই বিচ্ছেদের পর স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে নর্দান আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার বিষয়টি জটিল হয়ে দাঁড়ায়। থেরেসা মে সম্পাদিত চুক্তিতে নর্দান আয়ারল্যান্ডকে ইইউ আইনের অধীনে রাখার কথা বলা হয়েছিল। সে কারণেই বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি সরকারি দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থীরা ওই চুক্তি মেনে নেয়নি।

বরিস জনসন বিতর্কিত ওই ধারা বাদ দিয়ে নতুন চুক্তির প্রস্তাব করেন। তবে শেষ পর্যন্ত কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে নর্দান আয়ারল্যান্ডে ইইউর আইন বলবৎ থাকবে বলে মেনে নিয়েছেন। আর ইইউর এসব নিয়ম মানার বিষয়ে প্রতি চার বছর পরপর সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য নর্দান আয়ারল্যান্ড অ্যাসেম্বলিকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, নতুন চুক্তি থেরেসা মে সম্পাদিত চুক্তির চাইতেও বাজে। চুক্তিটি সমর্থন না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তবে চুক্তিটি গণভোটে দেওয়ার শর্তে লেবার পার্টি এটি সমর্থন করতে পারে বলেও আলোচনা আছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, পার্লামেন্টে অনুমোদন লাভের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে তবেই চুক্তিটি ভোটে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। চুক্তি অনুমোদনে পার্লামেন্টকে বাধ্য করার কৌশল হিসেবে বিচ্ছেদ পেছানোর দাবি নাকচ করার অনুরোধ জানিয়ে ইইউ নেতাদের কাছে চিঠিও দেবেন তিনি।