Thank you for trying Sticky AMP!!

নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে আরএনএ

ফাইজার–বায়োএনটেক এবং মডার্নার করোনার টিকা তৈরিতে আরএনএ ব্যবহার করা হয়েছে

রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা আরএনএ এক সময় জৈবিক বৃত্তের বাইরে খুব কম পরিচিত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি আরএনএ সবচেয়ে আলোচিত মলিকিউল হয়ে উঠেছে। এর কারণ করোনার টিকা তৈরিতে এই আরএনএর ব্যবহার। এখন এর ভিন্ন ব্যবহার নিয়েও গবেষণা হচ্ছে। ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে আরএনএর সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

মানুষের দেহ কোষ কীভাবে কোভিড-১৯ এর স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে পারে, সেই নির্দেশনা পাঠানোর জন্য কিছু টিকায় আরএনএ মলিকিউল ব্যবহার করা হয়। টিকা নেওয়ার পরে দেহ কোষ স্পাইক প্রোটিন তৈরি করা শুরু করে। এর মধ্য দিয়ে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। পরে কেউ কোভিড–১৯ সংক্রমিত হলে এই অ্যান্টিবডি ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। স্পাইক প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা পাঠানোর পরই এই এমআরএনএ ভেঙে যায়। এটা কখনো কোষের কেন্দ্রে প্রবেশ করে না। ফাইজার–বায়োএনটেক এবং মডার্নার করোনার টিকা তৈরিতে এই এমআরএনএ ব্যবহার করা হয়েছে।  

আরএনএর কাজ শুধু প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করাতেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা অন্যান্য অনেক কিছুর প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে থাকে, যা ‘আরএনএ ইন্টারফারেন্স’ নামে পরিচিত। এটা নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরিতে সহায়তার বদলে তা তৈরিতে বাধাও দিয়ে থাকে। সংক্ষেপে ‘আরএনএআই’ নামের এই কার্যক্রমকে ‘শর্ট’ বলা হয়ে থাকে।

জীবন রক্ষাকারী ওষুধ অনেক দামী হতে পারে। তবে কীটনাশক অবশ্যই সাশ্রয়ী হতে হবে। মেডিকেল আরএনএ নিয়ে সব কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এটি তৈরির খরচ কমিয়ে আনা।

বর্তমানে এই প্রক্রিয়া নিয়ে চিকিৎসা জগতে গবেষণা চলছে। চারটি বংশগতির রোগের (জেনেটিক ডিজিজ) বিরুদ্ধে চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য এর অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এক ডজনের বেশি রোগের চিকিৎসায় এর ব্যবহার নিয়ে গবেষণা চলছে। এটি নিঃসন্দেহে সুখবর। কিছু জীববিজ্ঞানীর ধারণা, চিকিৎসার বাইরেও আরএনএআই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব কীটনাশক তৈরি করা যেতে পারে।

ইকোনমিস্ট বলছে, আরএনএআই ব্যবহার করে কীটনাশক তৈরির তত্ত্বটি বেশ সরল। এ ক্ষেত্রে কীটপতঙ্গ বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রোটিন চিহ্নিত করতে হবে।

এরপর একটি নির্দিষ্ট আরএনএ মলিকিউল দিয়ে সেই প্রোটিনের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করতে হবে। তা কীটপতঙ্গের দেহে ঢুকাতে হবে। এরপর সব কীটপতঙ্গের মৃত্যুর অপেক্ষা করতে হবে। তত্ত্বের দিক থেকে এটি সহজ হলেও বাস্তবে তা অনেক জটিল। এ ক্ষেত্রে কীটনাশক প্রবেশ করানোর পদ্ধতির নকশা করতে হবে এবং এর নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিষয়টিও সামনে চলে আসবে। তবে এখন পর্যন্ত এ পদ্ধতির সবচেয়ে বড় বাধা হল এর খরচ।

জীবন রক্ষাকারী ওষুধ অনেক দামী হতে পারে। তবে কীটনাশক অবশ্যই সাশ্রয়ী হতে হবে। মেডিকেল আরএনএ নিয়ে সব কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এটি তৈরির খরচ কমিয়ে আনা। যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসের আরএনএভিত্তিক কীটনাশক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আরএনএআইস্যান্স এজির প্রধান মাইকেল হেলমস্টেটার জানান, শুরুর দিকে একগ্রাম আরএনএর দাম ছিল এক লাখ ডলারের মতো। ২০১৪ সালে এর দাম দাঁড়ায় ১০০ ডলার। এখন তা এক ডলারে পাওয়া যায়।

করোনা ভ্যাকসিন

আরএনএভিত্তিক কীটনাশক তৈরি হলে সম্ভাব্য সবচেয়ে সুবিধাভোগী হবে মৌমাছি। পরিবেশবান্ধব এই পতঙ্গের শত্রু ভ্যারোরা নামের এক ধরনের মাইট বা পোকা।

মৌমাছির সঙ্গে লেগে থাকা এই মাইটগুলো মৌমাছিকে দুর্বল করে মেরে ফেলে। এ ছাড়া মৌচাকে ভাইরাস ছড়ায়। মৌয়ালরা নানাভাবে এ মাইট দূর করতে চেষ্টা করেছেন। অনেক সময় মৌচাকে প্রবেশের মুখে মাইট প্রতিরোধী কীটনাশক ব্যবহার করেছেন। কেউ কেউ অক্সালিক অ্যাসিডের বাষ্প ব্যবহার করেছেন। তবে ভ্যারোরার সমাধান হয়নি।

বোস্টনভিত্তিক গ্রিনলাইট বায়োসায়েন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। তারা আরএনএআইভিত্তিক কীটনাশক তৈরিতে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আন্দ্রে জারুর বলেন, তাঁরা আশা করছেন তাঁদের উদ্ভাবিত পদ্ধতি সফল হবে। কারণ তাদের কীটনাশক এমনভাবে মাইটকে আক্রমণ করে যা অন্য রাসায়নিকে সম্ভব নয়।

শুধু ভ্যারোরা মাইটস নয়, গ্রিনলাইট কলোরাডোর আলুর পোকা নিয়েও কাজ করছে। এই পোকা নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এ ক্ষেত্রে আরএনএ ক্ষতিগ্রস্ত মাঠে ছিটিয়ে দিলেই পোকা তা খেয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। এই পোকা ছাড়াও আরও ১৩ ধরনের কীট পতঙ্গে নিয়ে গবেষণা করছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু কীটপতঙ্গ নয় প্রতিষ্ঠানটি ফসলের ক্ষতিকারক ছত্রাক দমনেও আরএনএআই এর ব্যবহার নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়াতে পারে নতুন প্রযুক্তির কীটনাশক

আরএনএভিত্তিক কীটনাশক তৈরিতে গ্রিনলাইটের প্রতিদ্বন্দ্বীও এখন চলে এসেছে। অন্তত আরও দুটি মার্কিন কোম্পানি এ নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে ভার্জিনিয়ার এগ্রোস্পেয়ার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা ডায়মন্ডব্যাক মথ দমনে আরএনএআই–এর ব্যবহার করা যায় কি না তা নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া মাইকেল হেলমস্টেটারের প্রতিষ্ঠানও এ নিয়ে কাজ করছে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আরএনএ এখন স্বল্প খরচে তৈরি করতে পারবেন, যা মাঠে ব্যবহার করা যাবে। তাদের কার্যপদ্ধতি হবে আলাদা।

তবে মাঠে ফসলের ওপর আরএনএ ছিটিয়ে দেওয়া কীটপতঙ্গ দমনের একমাত্র উপায় নয়। বেয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠান জিনগত পরিবর্তন ঘটানো ভুট্টা উৎপাদনে কাজ করছে, যা আরএনএ উৎপাদন করে রুটওর্মস নামের পোকার লার্ভা নষ্ট করে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক একই ধরনের পদ্ধতি সাইলিডাস নামের একটি পতঙ্গের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছেন। এ পতঙ্গটি যে ব্যাকটেরিয়া ছড়ায় তা কমলালেবুর রোগের জন্য দায়ী।

ইতিমধ্যে জার্মান সরকার এই পদ্ধতির জন্য সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছে। ২০১৮ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নিওনিকোটিনয়েডসের তিন ধরনের কীটনাশক বাইরে ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। তবে অ্যাপহিডস নামের পোকা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ায় জার্মানি, ফ্রান্স ও পোল্যান্ড জরুরি ব্যবহারের জন্য ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। আরএনএ কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কীটপতঙ্গ ধ্বংস করার এ সুযোগ অনেক দেশ লুফে নিতে পারে।

ইকোনমিস্ট অবলম্বনে মো. মিন্টু হোসেন