Thank you for trying Sticky AMP!!

প্যান্ডোরা পেপারসের আদ্যোপান্ত

প্যান্ডোরা পেপারস ফাঁসের ঘটনায় প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ নথি উন্মোচিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের অনেক ধনী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তির অর্থ পাচার, কর ফাঁকি ও গুপ্ত সম্পদের তথ্য সামনে এসেছে। ১১৭টি দেশের ৬০০–এর বেশি সাংবাদিক কয়েক মাস ধরে ১৪টি উৎস থেকে নথিগুলো সংগ্রহ করেছেন। আর গোপন সে নথিগুলোই এখন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হচ্ছে। এতে দেখা গেছে, ৯০টি দেশের ৩৩০ জনেরও বেশি রাজনীতিবিদ তাঁদের সম্পদের তথ্য গোপন রাখতে অফশোর কোম্পানি ব্যবহার করেছেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) উদ্যোগে মূলত নথিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৪০টির বেশি মিডিয়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করা এ সংগঠনের জন্য এটি এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক অনুসন্ধান।

প্যান্ডোরা পেপারস কী উন্মোচন করেছে

প্যান্ডোরা পেপারসের মধ্য দিয়ে ৬৪ লাখ নথি, ৩০ লাখ ছবি, ১০ লাখের বেশি ই–মেইল এবং প্রায় ৫ লাখ হিসাবের নথি (স্প্রেডশিট) উন্মোচিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এর আওতায় যেসব গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মালিকানা গোপন করে কোম্পানি স্থাপন করেছেন জর্ডানের বাদশাহ। সেখানে সাত কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করেছেন তিনি।

আজারবাইজানের শীর্ষস্থানীয় পরিবারের যুক্তরাজ্য লুকানো সম্পদের পরিমাণ ৪০ কোটি পাউন্ডের বেশি।

১ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড ব্যয়ে ফ্রান্সে দুটি বাড়ি কিনতে চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রীর অফশোর বিনিয়োগ কোম্পানি খোলার কথা গোপন রাখা।

কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তার পরিবার কীভাবে দশকের পর দশক ধরে গোপনে অফশোর কোম্পানিগুলোর মালিকানা ধরে রেখেছে।

অফশোর কোম্পানি কী

অফশোর কোম্পানি হলো কাগজে-কলমে নামমাত্র কোম্পানি। এর কোনো কার্যালয় কিংবা কর্মী থাকে না। তবে এর পেছনে অর্থ খরচ হয়। যিনি কোম্পানির মালিক, তাঁর পক্ষ থেকে কোম্পানি গঠন ও পরিচালনার জন্য বিশেষজ্ঞ ফার্মগুলোকে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এসব ফার্ম প্রতিষ্ঠানটির একটি ঠিকানা ঠিক করে দিতে পারে এবং বেতনভুক্ত পরিচালকদের নাম জানাতে পারে। তবে সত্যিকার অর্থে ওই ব্যবসার নেপথ্যে কে আছে, তা জানার সুযোগ থাকে না। এসব কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কাজ সহজ। বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে এসব কোম্পানির মালিকদের শনাক্ত করা কঠিন। এখানে করপোরেট কর নেই কিংবা থাকলেও খুবই কম।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যান্ডোরা পেপারসের মাধ্যমে বের হয়ে এসেছে যে দেশের সীমানার বাইরে অবস্থিত কোম্পানি ব্যবহার করে নিজেদের অর্থ ও সম্পদের মালিকানার তথ্য গোপন রাখেন ক্ষমতাবানেরা।

যেমন কোনো একজনের হয়তো যুক্তরাজ্যে সম্পদ রয়েছে, কিন্তু অন্য দেশে অবস্থিত কোম্পানি বা অফশোরের মাধ্যমে তারা এর মালিকানা অর্জন করেছে।

কর ফাঁকি দিতে অর্থ ও সম্পদ গোপনে বিনিয়োগের এসব জায়গাকে করস্বর্গ বলে অভিহিত করা হয়। বিশ্বের কোন কোন এলাকা করস্বর্গ হিসেবে কাজ করে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তালিকা নেই। তবে অফশোরের খুব পরিচিত এলাকার মধ্যে রয়েছে কেইমান আইল্যান্ডস ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের মতো ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরিজ এবং সুইজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো।

করস্বর্গের ব্যবহার কি অবৈধ

বিভিন্ন দেশে আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে বৈধভাবে কিছু কর ফাঁকি দিতে পারে মানুষ। করস্বর্গ বলে পরিচিত দেশগুলোয় টাকা সরিয়ে নিয়ে কিংবা সেখানে কোম্পানি স্থাপনের মধ্য দিয়ে এ সুযোগ কাজে লাগায় তারা। তবে প্রায়ই একে অনৈতিক বলে বিবেচনা করা হয়।

ভিনদেশে অর্থ ও সম্পদ রাখতে চাওয়ার পেছনে কিছু বৈধ কারণও রয়েছে। এসব কারণের মধ্যে আছে অপরাধীদের আক্রমণ কিংবা অস্থিতিশীল সরকার থেকে সুরক্ষা। গোপনে অফশোর কোম্পানির মালিকানা থাকা অবৈধ কিছু না হলেও অর্থ ও সম্পদ সরিয়ে নেওয়ার কাজে এ ধরনের গোপন কোম্পানির ব্যবহার ভালো কিছু নয়; বরং তা অপরাধের প্রক্রিয়া গোপন রাখার একটি যথাযথ উপায়।

অফশোরে কী পরিমাণ অর্থ লুকানো থাকে

অফশোর কোম্পানিগুলোয় ঠিক কী পরিমাণ অর্থ লুকানো আছে, তার হিসাব নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে আইসিআইজের তথ্য অনুযায়ী, এর পরিমাণ ৫ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন (১০০ বিলিয়নে ১ ট্রিলিয়ন) থেকে ৩২ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলছে, করস্বর্গের দেশ বা কোম্পানিতে ক্ষমতাবানদের বিনিয়োগের কারণে বিশ্বের দেশগুলো বছরে ৬০০ বিলিয়ন (১০০ কোটিতে ১ বিলিয়ন) ডলার ক্ষতি গুনছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির গবেষক লক্ষ্মী কুমার মনে করেন, এ ধরনের প্রবণতার কারণে সমাজের বাকি অংশের ওপরও প্রভাব পড়ে। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘অর্থ গোপন রাখার সক্ষমতা থাকার মানে হলো আপনার জীবনযাত্রার ওপর সরাসরি প্রভাব পড়া। আপনার সন্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও থাকার জায়গার অধিকারের ওপর এর প্রভাব পড়ে।’

গত সাত বছরে প্যারাডাইস পেপারস, পানামা পেপারস ইত্যাদি নামে যেসব গোপন দলিলপত্র ফাঁস হয়েছে, এই প্যান্ডোরা পেপারস হচ্ছে তার সবশেষ ঘটনা। পানামা পেপারসসহ বিভিন্ন আর্থিক নথি ফাঁস হওয়ার পর কর ফাঁকি কিংবা সম্পদ গোপনের মতো কাজগুলো কঠিন করে তোলার দাবি ওঠে। এর জন্য ব্যবস্থা নিতে বারবারই রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আইসিআইজের পরিচালক জেরার্ড রাইল বলেন, প্যান্ডোরা পেপারস দেখিয়ে দিয়েছে, ‘যেসব মানুষ গোপন অফশোর ব্যবস্থার সমাপ্তি টানার ক্ষমতা রাখে, তারা নিজেরাই এর থেকে লাভবান হচ্ছে। সে কারণে এ ধরনের প্রবণতা বন্ধ করার জন্য তাদের উদ্যোগী হতে দেখা যায় না।’