Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্রেক্সিটে 'গরিব' হবে যুক্তরাজ্য!

ব্রেক্সিট যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে ধস নামাবে—এমন আশঙ্কার কথা নানা মহল থেকেই বলা হয়েছে। এবার যুক্তরাজ্য সরকারের নিজস্ব গবেষণা প্রতিবেদনে সেই আশঙ্কার চিত্র উঠে এল। আজ বুধবার যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয় (ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে চুক্তির ভিত্তিতেই ব্রেক্সিট কার্যকর হোক না কেন, বিচ্ছেদের ফলে যুক্তরাজ্য তুলনামূলক গরিব হয়ে পড়বে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ’ ব্রেক্সিট’ নামে পরিচিত। যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের পরিকল্পনামতো বিচ্ছেদ হলে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি আগামী ১৫ বছরে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে। আর যদি কোনো চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদ ঘটে, তবে অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ ৯ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

ক্ষতির এই হার অর্থের অঙ্কে কত—সে বিষয়ে কোনো ধারণা দেয়নি অর্থ বিভাগ। তবে স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতির ৩ দশমিক ৯ শতাংশ সংকোচন মানে ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে প্রায় ১০০ বিলিয়ন পাউন্ডের ক্ষতি হবে।

প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে গত জুলাই মাসে যে ব্রেক্সিট পরিকল্পনা করেছিলেন, সেটি বাস্তবায়িত হলে আগামী ১৫ বছরে অর্থনীতির কী হবে আর আগামী ১৫ বছর ইইউর সঙ্গে থাকলে অর্থনীতির অবস্থা কেমন হবে—এই দুই পরিস্থিতির তুলনা করে চালানো হয় গবেষণা। এতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ব্রেক্সিটের প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পিত ব্রেক্সিট পরিকল্পনার পাশাপাশি অন্যান্য বিকল্প, যেমন: ‘ইউরোপিয়ান ইকোনমিক এরিয়া’র সদস্যপদ রেখে বিচ্ছেদ, কানাডার মতো মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করে বিচ্ছেদ অথবা চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদ ঘটলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটিও নিরূপণ করা হয়েছে। সব বিকল্পতেই যুক্তরাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) সংকুচিত হবে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

বিবিসির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সায়মন জ্যাক বলেন, বিচ্ছেদের ফলে যুক্তরাজ্য কতটা গরিব হবে, তা নির্ভর করবে কোন পথে বিচ্ছেদ ঘটছে তার ওপর। চুক্তির ভিত্তিতে বিচ্ছেদ হলে বছরে ৬০ থেকে ১০০ বিলিয়ন পাউন্ডের ক্ষতি হবে। আর যদি চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট হয়, তবে ক্ষতির পরিমাণ বছরে ২০০ বিলিয়ন পাউন্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।

অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেন, ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদ কেবল অর্থনৈতিক ব্যাপার নয়, এর রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে যে চুক্তি করা হয়েছে, তাতে ইইউর বেশ কিছু সুবিধা এবং বিচ্ছেদের রাজনৈতিক কিছু উপকারিতার সমন্বয় রয়েছে। তবে ইইউর সঙ্গে থাকার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে টেকসই নয়।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ইইউ-বিরোধী প্রভাবশালী রাজনীতিক স্যার বিল ক্যাশ বলেন, ‘অসাধারণ’ এই বিবৃতি প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বস্তুত ইইউর সঙ্গে থেকে যাওয়ার কথাই বলছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে প্রকাশিত পরিকল্পনা বিবেচনায় নিয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে। কিন্তু সম্পাদিত চুক্তি তার চেয়ে বেশ ভিন্ন। এ ছাড়া বিচ্ছেদের পর বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য কী অর্জন করবে, সেটি এই গবেষণার হিসাবে ধরা হয়নি।

২০১৯ সালের ২৯ মার্চ ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার কথা। থেরেসা মের সম্পাদিত বিচ্ছেদ চুক্তি অনুযায়ী ২৯ মার্চের পর থেকেই যুক্তরাজ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ইচ্ছামাফিক বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সময় শেষ হওয়ার পর এসব চুক্তির বাস্তবায়ন করতে হবে।

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার মেয়াদ শেষ হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সময় বাড়তেও পারে।

থেরেসা মে যে বিচ্ছেদ চুক্তি সম্পাদন করেছেন সেটি নিয়ে যুক্তরাজ্যে গৃহবিবাদ তুঙ্গে। পার্লামেন্টে এমপিরা সমর্থন না দিলে এ চুক্তি কার্যকর হবে না। চুক্তির পক্ষে সমর্থন আদায়ে পুরো দেশ সফরে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। আগামী ১১ ডিসেম্বর চুক্তির ওপর পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে।