Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্রেক্সিট চুক্তি: আবার ইইউর দরবারে মে

থেরেসা মে

কথা ছিল পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবারই ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন বিষয়ে এসপার-ওসপার হয়ে যাবে। কিন্তু এমপিদের সমর্থন মিলবে না—এমন আশঙ্কায় একেবারে শেষ মুহূর্তে ভোটাভুটি পিছিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। এর ফলে ব্রেক্সিট নাটকীয়তার দৃশ্যপটে আবারও ফিরে এল পুরোনো সেই দৌড়ঝাঁপ।

আজ মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মে পুনরায় হাজির হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দরবারে। তিনি চুক্তিতে উল্লেখিত আয়ারল্যান্ড সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বিষয়ে (ব্যাকস্টপ অ্যারেঞ্জমেন্ট) ব্রিটিশ এমপিদের উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরছেন। এ বিষয়ে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানের অনুরোধ করছেন তিনি।

আকস্মিক ভোট পিছিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ব্রেক্সিট নিয়ে যুক্তরাজ্যের গৃহবিবাদ আরও মাথাচাড়া দিয়েছে। বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভের অনেক এমপি প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রী মের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মে সংসদের আস্থা হারিয়েছেন এবং ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন বলে সমালোচনা করছেন বিরোধীরা। লিবারেল ডেমোক্র্যাট, এসএনপিসহ সংসদের ছোট দলগুলো অনাস্থা ভোটের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিকে চাপ দিতে শুরু করেছে। তবে লেবার নেতা জেরেমি করবিন ব্রেক্সিট চুক্তির বিষয়ে থেরেসা মের দৌড়ঝাঁপের শেষ দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে।

আগামী বৃহস্পতিবার ইইউ নেতাদের সম্মেলন আছে। এই সম্মেলন সামনে রেখে মঙ্গলবার দিনের শুরুতেই যুক্তরাজ্যের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মে। এরপর দেখা করেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে। একই দিন ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার এবং ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাস্কের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন মে।

তবে এসব বৈঠকের আগেই ডোনাল্ড ট্রাস্ক একই টুইট বার্তায় জানিয়ে দেন যে ব্রেক্সিট বিষয়ে পুনরায় সমঝোতা সম্ভব নয়। নর্দান আয়ারল্যান্ড বিষয়েও নতুন কোনো সমঝোতা হবে না। তবে ব্রিটিশ এমপিদের অনুমোদন আদায়ে সহায়তা করতে এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা হয়তো তাঁরা দিতে পারেন। বৃহস্পতিবারের সম্মেলনে ইইউ নেতারা চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের প্রস্তুতির বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন বলে তিনি জানান।

ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কারও একই সুরে কথা বলেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে সেটিই সর্বোত্তম বিকল্প এবং একমাত্র চুক্তি। নতুন করে সমঝোতা নয়; তবে সম্পাদিত চুক্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দেওয়া যেতে পারে।

দীর্ঘ ১৮ মাসের চেষ্টার পর বিচ্ছেদ বিষয়ে একটি চুক্তিতে সম্মত হয় যুক্তরাজ্য ও ইইউ। এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যৎ বাণিজ্য ও অন্যান্য আদান-প্রদানের কাঙ্ক্ষিত সম্পর্ক নির্ধারণে ব্যর্থ হলে যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ড ইইউ আইনের অধীনে থাকবে। যুক্তরাজ্য ও স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার ‘গুড ফ্রাইডে অ্যাগ্রিমেন্ট’ অনুযায়ী আয়ারল্যান্ড সীমান্ত উন্মুক্ত রাখতে এই ব্যবস্থা। যেটিকে বলা হচ্ছে ‘ব্যাকস্টপ অ্যারেঞ্জমেন্ট’।

বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি সরকারি দলের অনেক এমপি এই ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার ঘোর বিরোধিতা করছেন। তাঁরা বলছেন, এর ফলে যুক্তরাজ্যের বাকি অংশ থেকে আইনিভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে নর্দান আয়ারল্যান্ড।

এ কারণে প্রধানমন্ত্রী মে পুনরায় ইইউতে গিয়ে এ বিষয়ে নতুন করে প্রতিশ্রুতি চাইছেন, যাতে ব্যাকস্টপ ব্যবস্থা নিয়ে এমপিদের উদ্বেগ নিরসন হয়। চুক্তিতে কোনো পরিবর্তন না করলেও অন্তত আলাদা প্রতিশ্রুতি বা ঘোষণা তিনি আদায় করতে চাইছেন।

চুক্তিটি আবার কবে পার্লামেন্টে তুলবেন, সে বিষয়ে কিছুই জানাননি মে। তবে ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট কার্যকর করতে হলে ২১ জানুয়ারির মধ্যে এটির অনুমোদন করতে হবে বলে ইঙ্গিত করেন তিনি।