Thank you for trying Sticky AMP!!

যুক্তরাজ্যে বাড়ছে মৃত্যু, বাড়ছে উদ্বেগ, পরীক্ষা নিয়ে বিপত্তি

যুক্তরাজ্যে করোনায় এক দিনে ৫৬৩ জনের মৃত্যুর খবর সবাইকে প্রচণ্ডভাবে হতাশ করেছে। ছবি: রয়টার্স

করোনায় আক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তাঁর স্বেচ্ছা অন্তরীণ অবস্থান থেকে বুধবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় দেশের নাগরিকদের জানান, শনাক্তকরণ পরীক্ষার মাধ্যমেই এই রোগকে হারানো যাবে, সংকট পেরোনো যাবে। তিনি শনাক্তকরণ পরীক্ষা ব্যাপকভাবে বাড়ানোর আশ্বাসও দেন। কিন্তু এই আশ্বাস সপ্তাহখানেকের বেশি সময় ধরে শুনতে শুনতে ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে সংবাদমাধ্যমের। দেশটিতে এক দিনে ৫৬৩ জনের মৃত্যুর খবর সবাইকে প্রচণ্ডভাবে হতাশ করেছে। সবার প্রশ্ন, ‘ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভয়াবহতার দিকেই কি আমরা ধাবিত হচ্ছি?’

গতকাল বৃহস্পতিবারের পত্রিকাগুলোর শিরোনাম তাই সরকারের ওপর চাবুকের আঘাতের মতো। প্রধানমন্ত্রী হতে বরিস জনসনকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন দিয়েছিল যে পত্রিকাটি, সেই টেলিগ্রাফ-এর শিরোনাম ছিল সবচেয়ে ধারালো। বড় বড় অক্ষরে ‘যেসব প্রশ্নের উত্তর নেই’। উপশিরোনাম: শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ব্রিটেন অন্য দেশগুলোর থেকে পিছিয়ে কেন সরকার বলতে পারে না, এত কম সংখ্যায় স্বাস্থ্যকর্মীর পরীক্ষা হয়েছে কেন এবং অ্যান্টিবডি (শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধক) পরীক্ষা কবে হবে?

জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা এনএইচএসের কর্মীদের করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করানোর যে পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে, তা বর্ণনা করতে পত্রিকাগুলো ‘অন্যায়’, ‘বিশৃঙ্খলা’, ‘চরম ব্যর্থতা’ এবং ‘কলঙ্কজনক’ শব্দগুলো ব্যবহার করেছে। দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে লন্ডনে ৪ হাজার শয্যার অস্থায়ী হাসপাতাল নাইটিঙ্গেল প্রতিষ্ঠার মতো প্রশংসনীয় কাজও চাপা পড়ে গেছে রোগ শনাক্তকরণের ব্যর্থতায়। রক্ষণশীল-প্রগতিশীল সব সংবাদপত্রই একই ধরনের ভাষায় সরকারের কাজের সমন্বয়হীনতা এবং শ্লথগতির সমালোচনা করেছে। যে সংখ্যাগুলো নিয়ে এই ক্ষোভ তার মধ্যে একটি হচ্ছে সাড়ে ৫ লাখ স্বাস্থ্যসেবীর মধ্যে শনাক্তকরণ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ২ হাজার জনের। অন্য পরিসংখ্যানটি হচ্ছে, গত সপ্তাহে ৩০ হাজার ভেন্টিলেটর সংগ্রহ করার ঘোষণা দেওয়ার পর গতকাল জানা যায়, চলতি সপ্তাহান্তে পাওয়া যাবে মাত্র ৩০টি। 

বিবিসির সংবাদ পাঠক এ খবর পড়তে গিয়ে প্রথমে যে তা বিশ্বাস করতে পারেননি, তার অভিব্যক্তির ভিডিও মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিটেনে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ১ এপ্রিল পর্যন্ত মোট পরীক্ষা হয়েছে ১৩৫ হাজার। গত মাসে প্রধানমন্ত্রী জনসন দৈনিক ২৫ হাজার লোককে পরীক্ষার লক্ষ্য ঘোষণা করলেও এখনো দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে।

স্বাস্থ্যসেবীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে সামনে চলে এসেছে ইউরোপের অন্যান্য দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের হতাশাজনক অভিজ্ঞতার আলোকে। ইতালিতে গতকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জন চিকিৎসকের। স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকেও চিকিৎসাসেবীদের মৃত্যুর খবর আসছে। ব্রিটেনেও মারা গেছেন চারজন চিকিৎসক ও একজন নার্স। 

গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানেরা করোনা পরীক্ষার সরঞ্জাম (টেস্টিং কিট) সংগ্রহের জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। যুক্তরাষ্ট্র (আমেরিকা ফার্স্ট নীতির আলোকে) তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই কিট রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বলেও পত্রিকাটি জানিয়েছে। তবে, অ্যান্টিবডি টেস্টিং কিট ব্রিটেনে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও সংগ্রহের চুক্তি হয়েছে এবং তা সীমিত আকারে শুরু হয়েছে।

গার্ডিয়ান অবশ্য আরও একটি দুঃসংবাদ দিয়েছে। তা হচ্ছে ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চিকিৎসকদের জন্য জারি করা এক নতুন নীতিমালায় বলেছে, মহামারি আরও বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বিচার করে ভেন্টিলেটর কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর মানে হচ্ছে বয়স্ক এবং নানা ধরনের জটিল অসুখের রোগীদের বদলে অপেক্ষাকৃত তরুণদের বাঁচাতে ভেন্টিলেটর সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকেরা।

ব্রিটেনেও অঘোষিত লকডাউন চলছে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে। গত সপ্তাহে এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। জরুরি গুরুত্বপূর্ণ সেবা খাতে নিয়োজিত লোকজনের জন্য গণপরিবহনের মধ্যে লন্ডনে ভূতল ট্রেন এবং বাস চলাচল চালু আছে। তবে এর সংখ্যা অনেক কমেছে। খাবার এবং ওষুধ কেনার মতো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোলে বা পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কেউ দুজনে একত্র হলে জরিমানার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে।

চিকিৎসক-নার্সদের মতো পুলিশেও অবসরে যাওয়া ব্যক্তিদের আবার কাজে ফেরার আহ্বান জানানোয় বিপুল সাড়া মিলেছে। তবে কোথাও জবরদস্তি নেই। সবই হচ্ছে মানুষের সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ঘরে থাকার নির্দেশনা বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতার এই কৌশলের কিছুটা সুফল মিলছে বলে জানিয়েছে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন। প্রতি করোনাবাহী গড়ে ২.৬ জনকে সংক্রমিত করার যে হার, তা এখন কমে ০.৬২-এ নেমে এসেছে। 

ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তাবিষয়ক আইনের কারণে পারিবারিকভাবে তথ্য প্রকাশ না করলে যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের সম্পর্কে এখানে সরকারি-বেসরকারি কোনো সূত্র থেকেই তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে করোনার কারণে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি তা খুব একটা স্পষ্ট নয়। তবে ব্রিটেনে প্রথম যিনি করোনায় মারা যান, তিনি ম্যানচেস্টারের এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম এবং লন্ডন মিলিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ২০ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ব্রিটেনে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ যার মৃত্যু হয়েছে, তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। আর যে চারজন চিকিৎসক মারা গেছেন, তাঁরা সবাই মুসলমান এবং অভিবাসী। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ২৪৪ বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ৭১৮। মৃত্যুর সংখ্যা ৫৬৯ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৯৩১।

এদিকে করোনার কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে ১০ লাখের মতো মানুষ বেকার ভাতার আবেদন করেছেন।