Thank you for trying Sticky AMP!!

দাবানলে শুধু ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে এখন পর্যন্ত ২২ জন মারা গেছে

যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলে ৩০ জনের মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলে অন্তত ৩০ জন মারা গেছে। আর কয়েক ডজন নিখোঁজ হয়ে রয়েছে। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যগুলোয় গত কয়েক দিনে ছড়িয়ে পড়া দাবানল এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। প্রতি মুহূর্তেই বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।

মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলে এখন পর্যন্ত ৩০ জনের বেশি মারা গেছে। শুধু ওরেগন অঙ্গরাজ্যেই কয়েক ডজন লোক নিখোঁজ। বড় ধরনের বিপর্যয়ের জন্য এখনই প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন অঙ্গরাজ্যটির জরুরি সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা।

গত তিন সপ্তাহ ধরে ওরেগন, ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্য দাবানলে পুড়ছে। কয়েক মিলিয়ন একর এলাকা পুড়ে গেছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে কয়েক হাজার বাড়ি। লাখের ওপর মানুষকে নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে।

ওরেগন অঙ্গরাজ্যের হাজারো ঘরবাড়ি আক্ষরিক অর্থেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে

এই পরিস্থিতিতে আগামীকাল সোমবার ক্যালিফোর্নিয়া সফর করার কথা রয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁকে জানানো হয়েছে। তিনি এ জন্য ‘দুর্বল বন ব্যবস্থাপনাকে’ দায়ী করেছেন।

এদিকে এই পরিস্থিতির জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই দায়ী করেছেন ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। গতকাল শনিবার তিনি এ সম্পর্কিত এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আমাদের জীবনের জন্য এক বিরাট বাস্তব হুমকির নাম জলবায়ু পরিবর্তন। অথচ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়টিকেই সন্দেহ করেছিলেন, এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করেছিলেন।’

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, দাবানলে পশ্চিমাঞ্চলের যে এলাকা পুড়েছে, তা আয়তনে নিউজার্সির সমান। ওরেগনে ১৬টি বড় এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়া দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন দমকল কর্মীরা। এরই মধ্যে ওই অঞ্চলগুলো থেকে ৪০ হাজার মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ওরেগন অঙ্গরাজ্যের জরুরি ব্যবস্থাপনা কার্যালয় (ওইএম) থেকে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে অঙ্গরাজ্যটিতে ১০ জন মারা গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

অঙ্গরাজ্যটির গভর্নর কেট ব্রাউন সম্প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে সরার নির্দেশ দেন। যদিও অঙ্গরাজ্যটিতে লুটের ঘটনাও ঘটছে। ফলে এই দুর্যোগের মধ্যেও অনেকে নিজেদের ঘর ছেড়ে যেতে চাইছেন না। বিষয়টি আমলে নিয়ে কেট ব্রাউন বলেন, ‘আমাদের ওরেগন ন্যাশনাল গার্ড ও পুলিশ বাহিনী রয়েছে। আমি আপনাদের নিশ্চিত করছি, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে এবং লুট প্রতিহত করবে।’

চলমান দাবানলে সর্বস্ব হারিয়েছেন বিতরিজ গোমেজ বোলানোস। ৪১ বছর বয়সী এই নারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, গাড়ির মধ্যেও আগুন লেগে গিয়েছিল। পুরো পরিবার নিয়ে গাড়িতে করে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। ভেতরে ছিল তাঁর চার সন্তান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। আবার সব শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। তবু ভালো যে জীবিত আছি।’

‘জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আর তর্কের কোনো অবকাশ নেই। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট জরুরি অবস্থা। এটাই বাস্তব ও ঘটমান।’
গেভিন নিউসাম, ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর

ওয়াশিংটনে ১৫টি এলাকায় বড় আকারে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে দমকল কর্মীরা কাজ করছেন। কিন্তু এখনো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। সেখানে এক বছরের এক শিশু আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তাকেসহ তার মা–বাবা নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সফল হননি। তার মা–বাবার অবস্থাও গুরুতর।

ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলের ওরোভিল এলাকার নর্থ কমপ্লেক্সে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল। গত শুক্রবার অঞ্চলটি পরিদর্শনে যান অঙ্গরাজ্যটির গভর্নর গেভিন নিউসাম। সে সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আর তর্কের কোনো অবকাশ নেই। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট জরুরি অবস্থা। এটাই বাস্তব ও ঘটমান।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা ‘বন ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার’ অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ‘গত এক দশকে এ ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি ছিল। কিন্তু এটি একটি মাত্র বিষয়। এটি মূল কারণ নয়। বহু আগেই বিজ্ঞানীরা যে অতি উচ্চ তাপীয় তরঙ্গের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন, তা এখন বাস্তব।’

বন ব্যবস্থাপনা নিয়ে করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ সম্পর্কে গেভিন নিউসাম বলেন, ‘বন পরিষ্কার রাখতে হবে। বহু বছর ধরে পড়া পাতা ও গাছের ভগ্নাংশ সরানো প্রয়োজন। এগুলো খুবই দাহ্য। এই বিষয়টি আমি গত তিন বছরে বহুবার বললেও, তারা তা কানে তোলেনি।’

ভারী ধোঁয়ার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না

ক্যালিফোর্নিয়ার নর্থ কমপ্লেক্স পুড়ছে গত ১৮ আগস্ট থেকে। শুধু এই অঞ্চল থেকেই ১২টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। গত ১৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত শুধু ক্যালিফোর্নিয়াতেই মারা গেছে ২২ জন। এরই মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে লাখখানেক মানুষকে। ২৮টি এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে সেখানে কাজ করছে ১৪ হাজার ৮০০ দমকলকর্মী।

সব মিলিয়ে ভয়াবহ এই দাবানলের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের অঙ্গরাজ্যগুলো এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিম উপকূলের অঙ্গরাজ্যগুলোয় গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৯৭টি এলাকায় দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বাজে অবস্থা ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন ও ওয়াশিংটনের। এর বাইরে আইডাহোতে ১২টি ও মন্টানার নয়টি এলাকায় দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

হাজারো দমকলকর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও ভারী ধোঁয়ার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। বাতাসের মান পর্যবেক্ষণ–সংক্রান্ত ফেডারেল সংস্থা জানিয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন, ওয়াশিংটন ও আইডাহোর বাতাস অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকেরা এই পরিস্থিতি কোভিড–১৯ মহামারিতে মানুষকে আরও ঝুঁকিতে ফেলবে বলে সতর্ক করেছেন।