Thank you for trying Sticky AMP!!

'মানববোমার' বিস্তার ঘটছে, বাড়ছে নারী ও শিশুর ব্যবহার

২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনায় এক জঙ্গি আস্তানা থেকে চার বছর বয়সী সন্তান সাবিনাকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন জঙ্গি সাকিনা বেগম। পরে তিনি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হন। আহত হয় শিশু সাবিনা। ছবি: জাহিদুল করিম


ফুটফুটে দুই শিশুর হাত ধরে যখন এক মা এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন কারও কোনো সন্দেহ হয়নি যে তাঁরা বোমা বহন করছেন। একই কাজ করেছেন বাবাও। ইন্দোনেশিয়ার এই পরিবারটি গত সপ্তাহে দেশটিতে তিনটি গির্জায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ১৩ জনকে হত্যা করেছে। এই অঞ্চলে পরিবার নিয়ে এমন হামলার ঘটনা চমকে দিয়েছে জঙ্গিবাদ বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।

বিভিন্ন বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, দেশে দেশে এমন ‘মানববোমার’ বিস্তার ঘটছে ভয়াবহভাবে। এর সঙ্গে বাড়ছে মানববোমা হিসেবে নারী ও শিশুদের ব্যবহার। কেউ কেউ অন্ধবিশ্বাস‌‌ ও নানাভাবে প্রলুব্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় জড়িয়ে যাচ্ছে। আবার কাউকে কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে মানববোমা হিসেবে ব্যবহৃত হতে। বাধ্য করা ব্যক্তিদের তালিকায় নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। তাদের অনেকে জঙ্গি সংগঠনগুলোর অপহরণের শিকার হচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়ার পরিবারটি সিরিয়ায় দীর্ঘ সময় কাটিয়েছিল। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। এর মানে কি ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস‌‌ নিয়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমানো পরিবারগুলো এমন আরও হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে? বাংলাদেশসহ মুসলিম-অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি দেশ থেকে কেউ কেউ পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়ে সিরিয়ায় চলে গেছেন এমন তথ্য রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। তারা কি ফিরে আসবে মানববোমা হিসেবে? কম সন্দেহভাজন হিসেবে ব্যবহার করা হবে পরিবারটির নারী ও শিশুদের?

বোমা বহনে নারী ও শিশুদের কম সন্দেহ করা হয়
বিশ্লেষকদের মতে, বোমা বহনের ক্ষেত্রে সাধারণত পুরুষদেরই সন্দেহ করা হয়। নারীদের কম সন্দেহ করা হয়। আর শিশুদের কেউই সন্দেহ করে না। এ কারণে আত্মঘাতী হামলার ক্ষেত্রে নারী ও শিশুদের বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। তালেবান ও ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো ইসলামি জঙ্গি দলগুলোর পুরুষদের দিয়ে আত্মঘাতী হামলার ঘটনা সাধারণ হয়ে পড়লে তারা নারীদের ব্যবহার শুরু করে। কারণ নারীদের কমই সন্দেহ করা হয়। কয়েক বছর বাদে নারীদের সন্দেহ শুরু হলে তারা নতুন পন্থা হিসেবে সন্দেহের বাইরে থাকা শিশুদের ব্যবহার শুরু করে। এর বাইরে ধরে নেওয়া হয়, পুরুষদের আত্মঘাতী হামলার জন্য ‘খরচ’ না করে দলের শক্তি-সামর্থ্যের জন্য বড় কাজে রেখে দেওয়া প্রয়োজন। আর এসব কারণে ‘খরচযোগ্য’ নারী ও শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এর সঙ্গে নতুন প্রবণতা হিসেবে যুক্ত হয়েছে সন্তানদের ব্যবহার। আত্মঘাতী হামলায় শিশুদের ব্যবহার ইন্দোনেশিয়ায় নতুন হলেও এটা একেবারে আনকোরা প্রবণতা বা কৌশল নয়। সিরিয়া ও ইরাকে আইএস, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে তালেবান এবং নাইজেরিয়ায় বোকো হারাম বেশ কয়েক বছর এ ধরনের হামলায় শিশুদের ব্যবহার করছে।

বাংলাদেশে এক নারী জঙ্গি সন্তান নিয়ে অভিযানে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিলেন। ওই আত্মঘাতী বোমা হামলায় ওই নারী নিহত হলেও তাঁর শিশুকন্যা বেঁচে যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি জঙ্গি অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ না করে সন্তান নিয়ে বোমা ফাটিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আইএস সাধারণত দরিদ্র পরিবার ও শরণার্থী শিবির থেকে শিশুদের সংগ্রহ করে। অথবা তারা বাধ্য করে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে। প্রশিক্ষণের সময় তাদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করা হয়। মাদক দেওয়া হয়। প্রচারমূলক ভিডিও দেখিয়ে ‘ব্রেইন ওয়াশ’ করা হয়।

দেশে জঙ্গিবাদ বিষয়ে গবেষক নূর খান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বাসের অন্ধত্ব মানুষকে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রলুব্ধ করে। এ অন্ধত্বকে প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো যুক্তিতর্ক তারা মানতে রাজি হয় না। একসময় শ্রীলঙ্কার গেরিলা সংগঠন লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলাম (এলটিটিই) হামলায় নারীদের ব্যবহার ছিল ব্যাপক। এখন ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো নারীদের ব্যবহার করছে। সেই সঙ্গে শিশুদেরও ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, এ ধরনের হামলার ক্ষেত্রে নারী ও শিশুরা সন্দেহের বাইরে থাকে। নারীদের শারীরিক গঠন ও পরিধেয় বস্ত্রের কারণে তাঁরা বোমা বহন করলেও সন্দেহের বাইরে থাকেন।

নূর খান বলেন, এখন ধর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে অপব্যাখ্যা হয়, বিতর্ক হয়। এসব বিতর্ক অন্ধত্ববাদকে উসকে দেয়। তাদের বুদ্ধি-বিবেচনা একদম সংক্ষিপ্ত করে দেয়।

তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ায় সন্তানদের নিয়ে আত্মঘাতী হামলার ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। এতে অন্যান্য দেশও প্রভাবিত হতে পারে। ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর আদর্শে প্রভাবিত হয়ে বাংলাদেশ থেকে অনেকে পরিবার নিয়ে ওই সব দেশে পাড়ি জমিয়েছে। ওই পরিবারগুলো এ ঘটনায় প্রভাবিত হয়ে সন্তানদের নিয়ে আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে যায়।

১৩ মে ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়ায় শিশুসন্তানদের নিয়ে এই পরিবার তিনটি গির্জায় আত্মঘাতী হামলা চালায়। এতে নিহত হন ১৩ জন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে


বিশ্বের সবচেয়ে মুসলিম-অধ্যুষিত জনবহুল দেশ ইন্দোনেশিয়ায় ১৩ ও ১৪ মে দুটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিজের সন্তানদের নিয়ে হামলা চালায় দুটি পরিবার। ১৩ মে সুরাবায়ায় ওই নারী তাঁর ৯ ও ১২ বছর বয়সী দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে গির্জায় আত্মঘাতী হামলা চালান। একই সময়ে ওই নারীর স্বামী ১৬ ও ১৮ বছর বয়সী দুই পুত্রসন্তান নিয়ে আরও দুটি গির্জায় হামলা চালাতে যান। এই হামলায় ১৩ জন নিহত হন।

পরদিন ১৪ মে একই শহরের একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালান অন্য এক দম্পতি তাঁদের তিন সন্তানকে নিয়ে। এর মধ্যে এক সন্তান প্রাণে বেঁচে গেছে। ওই হামলায় ছয় সাধারণ নাগরিক ও চার পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।

আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহারের জন্য সন্তানদের পরিবার থেকে অপহরণ করে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। তাদের ব্রেইনওয়াশ করে বা মাদকের মাধ্যমে হামলায় বাধ্য করা হয়। তবে ইন্দোনেশিয়ায় এই ধরনের হামলার ঘটনা একেবারেই নতুন। নিজ সন্তানদের নিয়ে হামলার ঘটনা আগে কখনো সেখানে ঘটেনি। পরপর দুদিন হামলার এই ঘটনা স্তম্ভিত করে দেয় ইন্দোনেশিয়াকে।

শিশুদের হামলায় ব্যবহার প্রসঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইয়োহানেস সুলায়মান বিবিসিকে বলেন, হামলার ক্ষেত্রে শিশুরা সন্দেহের বাইরে থাকে। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো এ কারণে শিশুদের ব্যবহার করার সুযোগ নেয়। তিনি আরও বলেন, আগে কখনো ইন্দোনেশিয়ায় নারী বা শিশুদের দিয়ে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেনি। যেসব মা-বাবার সঙ্গে শিশু থাকে, তাদের সাধারণত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ততটা গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা পরীক্ষা করে না। এই দুর্বলতাই কাজে লাগিয়েছে হামলাকারীরা।

নারী ও শিশু ব্যবহারে সবচেয়ে ভয়াবহ বোকো হারাম
মার্কিন সামরিক একাডেমি ওয়েস্ট পয়েন্টের কমব্যাটিং টেররিজম সেন্টার এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জঙ্গি সংগঠন বোকো হারামের হয়ে ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪৩৪ জন আত্মঘাতী বোমা হামলা ঘটিয়েছে। হামলার ঘটনা ঘটেছে ৩৩৮টি। এর মধ্যে ২৪৪টি হামলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে মেয়েদের। শুধু ২০১৭ সালেই ৮০ জন কম বয়সী মেয়েকে আত্মঘাতী বোমা হামলার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এই মেয়েদের অধিকাংশই শিশু-কিশোরী।
এসব মেয়ের বেশির ভাগকেই বিভিন্ন স্কুলে হামলা চালিয়ে অপহরণ করেছে আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নাইজেরিয়াভিত্তিক ভয়াবহ জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম। ২০১৪ সালের এপ্রিলে নাইজেরিয়ার উত্তরে বর্নো রাজ্যে চিবকের একটি স্কুল থেকে ২৭৬ জন মেয়েকে অপহরণ করে তারা। যাদের বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছর। ওই মেয়েদের ফিরিয়ে আনা নিয়ে বিশ্বব্যাপী ‘ব্রিং ব্যাক আওয়ার গার্লস’ নামের একটি প্রচারাভিযান এখন পর্যন্ত পরিচালনা করা হচ্ছে। ওই মেয়েদের অপহরণ করার পর আত্মঘাতী বোমা হামলায় বোকো হারাম মেয়েদের ব্যবহার অনেক বাড়িয়ে দেয়। এমনকি আত্মঘাতী হামলায় সাত বছরের এক শিশুকেও ব্যবহার করা হয়েছে।

কমব্যাটিং টেররিজম সেন্টারের সহকারী অধ্যাপক জেসন ওয়ার্নার সিএনএনকে বলেন, চিবক অপহরণের ঘটনার পর বোকো হারামের আত্মঘাতী হামলাগুলোতে নারীদের ব্যবহার ভয়াবহভাবে বেড়ে যায়। বোকো হারাম হচ্ছে প্রথম জঙ্গিগোষ্ঠী, যারা আত্মঘাতী হামলায় পুরুষের চেয়ে নারী বেশি ব্যবহার শুরু করে। আর এসব হামলার ক্ষেত্রে সম্মুখভাগে রাখা হয় শিশুদের।

ওয়ার্নার বলেন, ছয় বছরে বোকো হারাম আনুমানিক ৩৫ হাজার মানুষ হত্যা করেছে। তাদের অধিকাংশই আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, নাইজার ও চাদের নাগরিক। নিহত ব্যক্তিদের তালিকায় সরকারি বা সামরিক কোনো সদস্য নেই। বোকো হারামের হামলায় নাইজেরিয়ার ২০ লাখ লোক বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

গবেষণায় বলা হয়, বোকো হারামের হামলার ১৩৪ জন আত্মঘাতী হামলাকারীর বয়স নির্ণয় করে জানা যায়, তাদের ৬০ শতাংশই কিশোরী ও শিশু। এই জঙ্গিগোষ্ঠী ছেলেদের তুলনায় চার গুণ বেশি মেয়েদের বোমা হামলায় ব্যবহার করেছে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এলান চাপিন বলেন, হামলার জন্য বোকো হারাম ১১ জন কিশোর ও ৫ জন ছেলে শিশুর বিপরীতে ৪২ জন কিশোরী ও ২৩ জন মেয়ে শিশুকে ব্যবহার করেছে। এই মেয়ে শিশুদের মধ্যে ১২ বছর বয়সী ও এর নিচের বয়সের শিশুও রয়েছে।

২০১৭ সালের ১৫ মার্চ নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বে মাইদুগুরি বাসস্টেশনে চারজন নারীর আত্মঘাতী হামলায় দুজন নিহত হন। ঘটনাস্থলে শোকে আহাজারি করছেন কয়েক নারী। ছবি: এএফপি


গবেষকদের মতে, পুরুষ নেতৃত্বের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো নারীদের ‘খরচযোগ্য’ মনে করে। ছেলেদের বাঁচিয়ে রেখে তাই মেয়েদের আত্মঘাতী হামলার জন্য ব্যবহার করা হয়। সমাজে নানা শোষণ ও বৈষম্যের কারণে অনেক নারী স্বেচ্ছায় এসব জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত হন। অনেক নারীকে ‘ব্রেইনওয়াশ’ করে মিথ্যা আশ্বাসে, প্রলোভনে দলে টানা হয়। তবে অনেকে শুধু শিকারই হন। তাঁদের বাধ্য করা হয় হামলায় ব্যবহৃত হতে।

মেটফেস নামে এক নারী ঝুঁকি নিয়ে মাঠে গিয়ে বোকো হারামের সাবেক জঙ্গি, ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকার নেন। তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি সিএনএনকে জানান, অনেকে আছেন সত্যিকারভাবেই হামলাকারী। তাঁরা স্বেচ্ছায় অংশ নেন। তবে অনেককে ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্যাতন করে বোমা বহন করতে বাধ্য করা হয়। যেই শিশু ও মেয়েদের এভাবে বাধ্য করা হয়, তাদের ক্ষেত্রে ‘আত্মঘাতী হামলাকারী’ শব্দটা যুক্ত করতে মেটফেস রাজি নন।

এভাবে শিশুদের ব্যবহারকে নৃশংসতা বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে নাইজেরিয়ায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় চার গুণ বেশি শিশুকে ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। সংস্থাটি জানায়, গত বছর আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহৃত ৮৩ জন শিশুর মধ্যে ৫৫ জন ছিল মেয়ে। এই মেয়েদের বেশির ভাগের বয়স ১৫ বছরের নিচে ছিল। ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান মিলান কিদানে আল জাজিরাকে বলেন, এভাবে বোকো হারাম নারী ও শিশুকে ভয়ের মধ্যে রেখে শাসন করছে।

বাংলাদেশেও মানববোমায় ব্যবহৃত হয়েছে নারী-শিশু
২০০৬ সালের ১৩ মার্চ কুমিল্লায় এক জঙ্গি আস্তানায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) অভিযানের সময় জেএমবির মোল্লা ওমরের স্ত্রী সাইদা নাঈম সুমাইয়া তাঁর দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন।

২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনায় পুলিশের আহ্বানে আত্মসমর্পণে রাজি হন এক নারী জঙ্গি। জঙ্গি সুমনের স্ত্রী সাকিনা বেগম তাঁর আরেক পক্ষের সন্তান সাবিনাকে (৪) নিয়ে বাসার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে। পুলিশের কাছাকাছি এসে তিনি সুইসাইড ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটান। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। আহত অবস্থায় বেঁচে যায় সাবিনা। ওই অভিযানে জঙ্গি আস্তানায় নব্য জেএমবির নেতা নিহত তানভীর কাদেরীর যমজ সন্তানের একজন আফিফ কাদেরী আদর নিহত হয়।

২০১৭ সালের ১৫ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, মৌলভীবাজারের বড়হাট ও নাসিরপুর এবং কুমিল্লার কোটবাড়ীতে জঙ্গিদের ভাড়া করা পাঁচটি বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালায়। এতে পাঁচ শিশু, পাঁচ নারীসহ ১৯ জন নিহত হন। তাঁদের ১৬ জনই আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

২০১৭ সালের ৩০ মার্চ প্রায় ৩৪ ঘণ্টা ঘিরে রাখার পর মৌলভীবাজারের নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে ‘ছিন্নভিন্ন সাত থেকে আটজনের লাশের অংশ’ পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ। পুলিশের ধারণা, আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাঁরা নিহত হন। তাঁরা একই পরিবারের সদস্য। ওই বাড়িটি মাহফুজ পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ভাড়া নেন। বাড়িতে মাহফুজের স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি, চার শ্যালিকাসহ আটজন ছিলেন। শ্যালিকাদের দুজন ছিল শিশু।

এদিকে ইন্দোনেশিয়ার ঘটনা এ অবস্থার ভয়াবহ বিস্তারের তথ্যই জানান দিচ্ছে। যেসব অঞ্চলে এ ধরনের হামলার ঘটনা আগে ঘটেনি, সেসব দেশও এখন টার্গেটে রয়েছে। এসব দেশে এমন হামলার ঘটনা আরও ঘটার আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।