Thank you for trying Sticky AMP!!

'সাত বছর ধরে কাঁদতে কাঁদতে পাথর হয়ে গিয়েছি'

দীর্ঘ সাত বছর ধরে মেয়ের ধর্ষণকারী ও হত্যাকারীদের বিচারের জন্য অপেক্ষা করেছেন নির্ভয়ার মা। ছবি: এএফপি

২০১২ সালে নির্ভয়া ধর্ষণের ঘটনা পুরো ভারতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। দীর্ঘ সাত বছর ধরে মেয়ের হত্যাকারীদের বিচারের জন্য লড়াই করেছে নির্ভয়ার পরিবার। গণধর্ষণ ও নির্মম শারীরিক নির্যাতনের পর নির্ভয়াকে হত্যা করার এতগুলো বছর পর অবশেষে চার আসামিকে ফাঁসিতে ঝোলানোর তারিখ ঘোষণা করেছেন আদালত। অপেক্ষার সময়টুকু কতটা যন্ত্রণাদায়ক ছিল, সেটি বোঝাতে গিয়ে নির্ভয়ার মা বলেছেন, এই সাত বছর তিনি এত কেঁদেছেন, এখন আর নিজেকে পাথর ছাড়া কিছু মনে হয় না তাঁর।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁসির তারিখ ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন নির্ভয়ার মা। বিচারক ফাঁসির তারিখ ঘোষণার ঠিক আগে আসামি মুকেশ সিংয়ের মা নির্ভয়ার মায়ের কাছে গিয়ে নিজের ছেলের প্রাণভিক্ষা চান। কিন্তু এতে এতটুকুও নরম হননি তিনি। সাফ জানিয়ে দেন, তাঁর মেয়ের সঙ্গে যে নৃশংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে, সেটা তিনি কিছুতেই ভুলতে পারবেন না।

আসামি মুকেশ সিংয়ের মায়ের আরজির প্রেক্ষিতে নির্ভয়ার মা বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে, আমি সেটা কীভাবে ভুলব? সাত বছর হয়ে গেছে আমরা আমাদের মেয়েকে হারিয়েছি। আমি আমার মেয়েকে যে অবস্থায় দেখেছি, তা কিছুতেই ভুলতে পারব না। আমার মেয়ের পুরো শরীরটা রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। সারা শরীরে এত আঘাতের চিহ্ন ছিল, মনে হচ্ছিল কোনো জন্তু ওর ওপর আক্রমণ করেছে। সাত বছর ধরে কান্না করেছি আমি। এখন ক্ষমা চেয়ে কেউ কান্না করলে সেই কান্না আমাকে একটুও স্পর্শ করে না। কারণ সাত বছর ধরে কাঁদতে কাঁদতে আমি পাথর হয়ে গিয়েছি। আমি এখন আর কিছুই অনুভব করি না।’

এই রায় শুধু নির্ভয়ার জন্য নয়, বরং ভারতের সব মেয়ের নিরাপত্তার জন্য অনুকরণীয় বলেও মন্তব্য করেন নির্ভয়ার মা, ‘আমি আমার মেয়েকে চোখের সামনে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় দেখেছি। সাত বছর ধরে ভেতরে-ভেতরে গুমরে মরছি আমি। এই রায় শুধু আমার মেয়ের জন্য নয়, পুরো দেশের প্রত্যেকটি মেয়ের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের জন্য অনুকরণীয়।’

সাত বছর পার হয়ে গেলেও এখনো মেয়ের শোক বুকে নিয়ে ঘুরছেন নির্ভয়ার বাবা। মেয়েকে তো আর ফিরে পাবেন না, তবে এই রায় অপরাধীদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি, ‘আমাদের জীবন কখনোই আর আগের মতো হবে না। সারা জীবন এই ব্যথা আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে। কিন্তু এই আসামিদের ফাঁসি হলে সেটা সব অপরাধীদের জন্য একটি কড়া বার্তা হয়ে থাকবে। তারাও জানবে, আইনকে ফাঁকি দেওয়া যায় না।’

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখে ফেরার পথে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন ২৩ বছর বয়সী নির্ভয়া। ধর্ষণ ও অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের পর তাঁকে বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়। ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর ২৯ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান নির্ভয়া। এই ঘটনার পর প্রতিবাদে গর্জে ওঠে পুরো ভারত। গত মঙ্গলবার চার আসামি মুকেশ সিং, পবন গুপ্ত, বিনয় শর্মা ও অক্ষয় কুমারকে ২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন আদালত। এই মামলার এক আসামি রাম সিংকে কারাগারে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধর্ষণের সময় আরেক আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল বিধায় তিন বছর সংশোধনকেন্দ্রে রাখার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:
নির্ভয়ার ধর্ষণকারীদের ফাঁসি ২২ জানুয়ারি