Thank you for trying Sticky AMP!!

জঙ্গি হামলায় সপ্তাহ ধরে অন্ধকারে মাইদুগুরি

নাইজেরিয়ার মাইদুগুরির মানুষ গত ২৬ জানুয়ারি থেকে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। রাতে এভাবেই মাথায় লাইট বেঁধে খাবার বিক্রি করছেন এক নারী। মাইদুগুরি, নাইজেরিয়া, ১ ফেব্রুয়ারি

নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাইদুগুরির ৩০ লাখ মানুষ এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎহীন রয়েছে। এর ফলে সেখানে পানিস্বল্পতা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে দৈনন্দিন জীবন ও ব্যবসা-বাণিজ্য। চলতি মাসে সেখানে তৃতীয়বারের মতো হামলা করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) সংশ্লিষ্ট ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রোভিন্স (আইএসডব্লিউএপি)। আইএসডব্লিউএপি মাইদুগুরির বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন ধ্বংস করে দেয়।

মাইদুগুরি নাইজেরিয়ার বোর্নো রাজ্যের রাজধানী। সেখানকার অধিবাসী ও বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি থেকে তারা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। ওই দিন শহরের অদূরে অবস্থিত একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন উড়িয়ে দেয় জঙ্গিরা।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে মাইদুগুরির বাসিন্দা বুকার মুসা (২৭) বলেন, ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতেন তিনি। এ থেকে যা আয় হতো, তা দিয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে সংসার চলত।

কিন্তু সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় তাঁর কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ। তাই তিনি এখন শ্রমিকের কাজ করছেন। কারণ, পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে হবে।

কিন্তু এখানে যে মজুরি পাওয়া যায়, তা ওয়েল্ডিংয়ের আয়ের তুলনায় খুবই কম। মুসা তাঁর ওয়ার্কশপে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে গড়ে প্রতিদিন ৬ দশমিক ৬ ডলার তথা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫‍৬০ টাকা আয় করতেন। অথচ এখন সারা দিন খাটুনি শেষে তাঁর আয় হয় ৩৪০ টাকার মতো।

গ্রিমা ওমর নামের এক ব্যক্তি বলেন, তিনি বরফের ব্লক বিক্রি করতেন। এখন তিনি ভিক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ সচল হওয়ার পর তিনি কীভাবে আবার ব্যবসায় ফিরতে পারবেন, তার উপায় দেখছেন না। কারণ, মূলধন কোথা থেকে আসবে, সেই প্রশ্ন সারাক্ষণ মাথায় ঘুরছে তাঁর।

মাইদুগুরিতে বিদ্যুতের পাশপাশি এখন পানির ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে পানির দাম তিন গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে সেখানে ২৫ লিটার পানির দাম ছিল সাত নাইরা। বর্তমানে এই দাম ২৫ নাইরাতে। এদিকে ডিজেলের উচ্চমূল্যের কারণে অনেক বাড়ির মালিক তাঁদের মোটরচালিত নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ আগে এসব মোটর দিয়ে পানি উত্তোলন করে একাধিক বাড়ির পানির প্রয়োজনীয়তা মেটানো হতো।

মাইদুগুরিতে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত অনেক মানুষের বসবাস। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দেশটির সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানের সময় এসব মানুষ ঘরবাড়ি হারায়। তবে এসব মানুষ যেসব শিবিরে বসবাস করে, সেগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকার প্রভাব পড়েনি।

কারণ, দাতব্য সংস্থাগুলো এসব শিবিরে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করে রেখেছে।

জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসডব্লিউএপি ও বোকো হারাম প্রায়ই নাইজেরিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করে থাকে। এর মধ্যে টেলিফোন ও বিদ্যুৎ লাইন উড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া তারা সেনা টহলকে তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নেয়। নাইজেরিয়ায় ২০০৯ সাল থেকে জঙ্গিদের উত্থান ঘটে। এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ নিহত ও ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।