Thank you for trying Sticky AMP!!

বেড়িয়ে আসতে পারেন ম্যান্ডেলার স্মৃতিবিজড়িত এলাকাগুলো

রোবেন দ্বীপে কারাগারে ম্যান্ডেলা। ছবি: এএফপি

নেলসন ম্যান্ডেলাকে না জানলে অনেক কিছুই অজানা থেকে যায়। জীবনে চলার পথে যে পথ তিনি মাড়িয়েছেন, সে পথ ধরেই তাঁকে জানতে পারেন। ১৮ জুলাই বিশেষ একটি তারিখ। এদিনই দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন। এ বছর তাঁর শততম জন্মবার্ষিকী। ভ্রমণপিপাসু মানুষদের কাছে নেলসন ম্যান্ডেলাকে জানার ও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করার দারুণ সুযোগ রয়েছে।

ম্যান্ডেলার জন্ম, বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে তাঁর নেতা হয়ে ওঠার কিংবা বন্দী জীবন কাটানোর স্থানগুলো মনের ক্ষুধা বাড়িয়ে দেবে। জানার সুযোগ করে দেবে অনেক অজানাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার পাহাড়ি ও গ্রামীণ অঞ্চল ট্রান্সকেইতে জন্ম নেলসন ম্যান্ডেলার। শৈশবে সেখানকার এমভেজো গ্রামে গরু চরিয়ে বেড়াতেন। সেখানকার মেথডিস্ট মিশনারি স্কুলেই তাঁর লেখাপড়ার শুরু। বড় হয়ে জোহানেসবার্গে আইন ব্যবসা করেছেন। দেড় যুগ কারাবন্দী ছিলেন রোবেন দ্বীপে। এই স্থানগুলো ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন জায়গায় ম্যান্ডেলার স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণে যাওয়া অনেক পর্যটকের কাছে অবশ্য দ্রষ্টব্য। সিয়াটল টাইমসের প্রতিবেদনে ম্যান্ডেলার স্মৃতিবিজড়িত এলাকা ভ্রমণের তথ্য উঠে এসেছে।

যাঁরা ম্যান্ডেলাকে জানতে চান, শুরুটা করতে পারেন ‘দ্য ইস্টার্ন কেপ’ দিয়ে। ইস্টার্ন কেপ অঞ্চলে এক গোষ্ঠী প্রধানের পরিবারে নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম। তরুণ বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি জোহানেসবার্গে যান। সেখানে আইন পেশা শুরু করার পর তিনি বর্ণবাদবিরোধী দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বা এএনসিতে যোগদান করেন।

বিশ্বনেতা আর সর্বজনশ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রনায়ক হলেও জন্ম তাঁর আফ্রিকার মাটিতে। আফ্রিকার এক নিভৃত গ্রামে কেটেছিল মহান এ নেতার শৈশব। আদিম আফ্রিকার আলো, পানি, বাতাসে বেড়ে উঠেছেন গোত্রের জীবনাচরণ মেনে।

১৯১৮ সালে কুনুতে খোসা সম্প্রদায়ে জন্ম নিয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। ট্যুর গাইডদের সঙ্গে কথা বললেই জানতে পারবেন, ম্যানডেলা কীভাবে প্রকৃতির সন্তান থেকে মহান নেতা হয়ে উঠেছিল। তিনি যখন শিশু ছিলেন, ওই পথ ধরে মাইলের পর মাইল হাঁটতেন। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতেন। ছবির মতো দৃশ্য চারপাশে চোখে পড়বে। সেখানকার ছোট গ্রামটি দেখে নিতে পারেন। সেখানে দুই বছর পর্যন্ত ছিলেন তিনি। তবে গ্রামের ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে তাঁর বাবা গ্রাম প্রধানের পদ হারালে সেখান থেকে চলে আসেন তাঁরা। তখন তাঁদের পরিবার চলে যায় কুনো গ্রামে। সেখানেই ছেলেবেলা কাটে মাদিবার। সেখানে নয় বছর পর্যন্ত কাটে তাঁর। এ সময় তাঁর বাবা মারা যান। এরপর ১৯ কিলোমিটার দূরে মেখেজওয়েনিতে চলে যান তিনি। সেখানে তাঁকে দত্তক নেন জোগিন্টাবা ডালিন্ডেবো এবং নেতৃত্বের যোগ্য করে তোলেন। ম্যান্ডেলা তাঁর অটোবায়োগ্রাফিতে ‘লং ওয়াক টু ফ্রিডম’-এ লিখেছেন, মেখেজওয়েনিতে তিনি নেতৃত্বের দীক্ষা পান।

২৭ বছর জেলে থেকে কুইনোতে আবার ফিরেছিলেন ম্যান্ডেলা। সেখানে পরে একটি বাড়ি তৈরি করেন। সেখানে তাঁর পরিবারের এখনো অনেকে বাস করেন। তবে অবসর নিয়ে নিয়ে কুইনোতে চলে গিয়েছিলেন। ২০০০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কুইনোতে নেলসন ম্যান্ডেলা জাদুঘর উন্মুক্ত করা হয়। জেল থেকে মুক্তির দশক পূর্তি উপলক্ষে এটি উন্মুক্ত করা হয়। দর্শনার্থীদের ম্যান্ডেলার ছেলেবেলা থেকে রাজনৈতিক জীবনের সবকিছু দেখার সুযোগ রয়েছে এখানে। পাশেই পোর্ট এলিজাবেথের ম্যান্ডেলা বেতে ‘রুট ৬৭’ দেখতে গেলে ৬৭টি চিত্রকর্ম দেখা যাবে, যা ম্যান্ডেলা ৬৭ বছরের সেবার প্রতীক।

জোহানেসবার্গের সোয়েটো অঞ্চলের ভিলাকাজি স্ট্রিটে ম্যান্ডেলার পুরোনো বাড়ি। বর্তমানে এটি একটি ছোট জাদুঘর। আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করা ম্যান্ডেলা পরিবার নিয়ে চার কক্ষের এ ছোট বাড়িটিতে থাকতেন। কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার কিছুদিন পর তিনি এখানে বাস করেন। এ বাড়িটি দেখলে বর্ণবাদের সময়ের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। আইনজীবী ম্যান্ডেলার মতো অপেক্ষাকৃত অবস্থাপন্ন কৃষ্ণাঙ্গরাও ‘ম্যাচের বাক্স’ ধরনের ওই সব ছোট বাড়িতে থাকতেন। ভিলাকাজি স্ট্রিটেই তখন বাস করতেন ম্যান্ডেলার দীর্ঘ সময়ের সহযোগী আরেক নোবেল বিজয়ী ধর্মযাজক আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু।

ম্যান্ডেলার এ বাড়ি থেকে কাছেই পাহাড়ের ওপর অবস্থিত হেক্টর পিটারসেন স্মৃতিসৌধ এবং জাদুঘর। ১৯৭৬ সালের ১৬ জুন বর্ণবাদী সরকারের নির্দেশে চালানো গুলিতে নিহত হয় ১৩ বছরের কিশোর হেক্টর।

দক্ষিণ আফ্রিকার পার্ল শহরের কাছে অবস্থিত এ কারাগারে ম্যান্ডেলা তাঁর কারাজীবনের শেষ ১৪ মাস কাটিয়েছেন। ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এখান থেকেই তিনি মুক্তি পান। কারাগারের ফটক দিয়ে বেরিয়ে স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলার হাত ধরে এগিয়ে যান তাঁকে স্বাগত জানাতে সমবেত ব্যক্তিদের দিকে। এ স্মৃতি ধরে রাখতে কারাগারের ফটকের সামনে স্থাপিত হয়েছে বজ্রমুষ্টি উঁচিয়ে থাকা ম্যান্ডেলার ব্রোঞ্জমূর্তি।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাংবিধানিক আদালত এখন যেখানে অবস্থিত, সে প্রাঙ্গণটিই কনস্টিটিউশন হিল নামে পরিচিত। সাংবিধানিক আদালতটি একটি উত্তর-আধুনিক স্থাপনা। তবে এখানকার পুরোনো স্থাপনাগুলোর রয়েছে বিশেষ কুখ্যাতি। এই আদালতের পাশেই ১৮৯২ সালে নির্মিত ‘ওল্ড ফোর্ড প্রিজন কমপ্লেক্স’ কারাগার। নেলসন ম্যান্ডেলা ও ভারতের অহিংস আন্দোলনের পথিকৃৎ মহাত্মা গান্ধী কিছুদিন এ কারাগারে ছিলেন।

জোহানেসবার্গের উত্তরাঞ্চলের এক উপশহরে বিখ্যাত লিলিজলিফ খামারটি অবস্থিত। ১৯৬০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কমিউনিস্ট পার্টি খামারটি কিনেছিল। এর মালিক হিসেবে দেখানো হতো আর্থার গোল্ডরিখ নামের এক শ্বেতাঙ্গকে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ম্যান্ডেলাসহ এএনসির অনেক নেতা এখানে লুকিয়ে ছিলেন। ম্যান্ডেলাকে রোবেন দ্বীপে পাঠিয়ে দেওয়ার পর ১৯৬৩ সালে খামারটিতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এএনসির অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করে।

কেপটাউনের সমুদ্র উপকূলের অদূরে অবস্থিত মাত্র পাঁচ বর্গকিলোমিটারের রোবেন দ্বীপ। পাহাড় ও সাগরের মেলবন্ধনে অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য এর। তবে এই দ্বীপটি ম্যান্ডেলার কারণেই বেশি পরিচিত। এখানকার সুরক্ষিত কারাগারেই ম্যান্ডেলা কাটিয়েছেন তাঁর ২৭ বছর কারাজীবনের মধ্যে ১৮ বছর। রোবেন দ্বীপের কারাগার স্মরণ করিয়ে দেয় বর্ণবাদের সময়কার দুঃসহ স্মৃতি। দ্বীপের পাথরের খনিতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করানো হতো ম্যান্ডেলাসহ বন্দীদের। এর প্রতিটি বালুকণা আর পাথর যেন সেই কালো স্মৃতি বহন করছে। কেপটাউন থেকে ফেরিতে ৪৫ মিনিটের যাত্রায় রোবেন দ্বীপে যাওয়া যায়। ৭ ফুট বাই ৯ ফুটের একটি কক্ষে বন্দীজীবন কেটেছে ম্যান্ডেলার। এখান থেকেই তিনি দক্ষ নেতা হয়ে উঠেছিলেন।

নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন ও দক্ষিণ আফ্রিকান টুরিজমের তৈরি ‘মাদিবা’স জার্নি’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ রয়েছে, যা স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করা মাদিবার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে সাহায্য করবে।