Thank you for trying Sticky AMP!!

অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে দ্বিধায় জাপান

জাপান সরকার চায় না অলিম্পিক পিছিয়ে যাক বা ভন্ডুল হোক। ছবি: রয়টার্স

২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকের সময় গণনা চলতে থাকার মুখে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস–আতঙ্ক। এই আতঙ্ক এখন অলিম্পিকের সব আয়োজন ভন্ডুল করে দেওয়ার উপক্রম করেছে। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য তেমন অগ্রগতি না হলে ২৪ জুলাই নির্ধারিত অলিম্পিকের আয়োজন নিয়ে কী হবে, তা নিয়ে চূড়ান্তে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে জাপান সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি আইওসিকে।

জাপান সরকার অবশ্য চায় না অলিম্পিক পিছিয়ে যাক কিংবা ভন্ডুল হোক। ২০১৩ সালে অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার স্বাগতিক শহর টোকিও মনোনীত হওয়ার পর থেকে এর পেছনে বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ও টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার। সবকিছুই এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। কিন্তু করোনাভাইরাসকে ঘিরে হঠাৎ করে দেখা দেওয়া পরিস্থিতি যে এত মারাত্মক হয়ে উঠবে তা কেউ ভাবতেই পারেনি। ফলে জাপানের, বিশেষ করে টোকিওর জনমতও ছিল অলিম্পিক আয়োজনের অনুকূলে।

অলিম্পিকের সময়সূচি কিংবা আয়োজনে কোনো রকম রদবদল হোক, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সরকার তা চাইছে না। সে রকম কিছু হলে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সরকার উদ্বিগ্ন। করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ইতিমধ্যে জাপানের অর্থনীতির বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। এটাকে আর বাড়তে না দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। ফলে অলিম্পিক নিয়ে গুঞ্জন চলতে থাকার মুখে অনেকটা যেন জাপানের জনগণকে আশ্বস্ত করার লক্ষ্যে চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী আবে সাতটি শিল্পোন্নত দেশের নেতাদের সঙ্গে এক ভিডিও সম্মেলনে মিলিত হন। সেখানে তিনি কোভিড-১৯ সামাল দেওয়ার উপায় নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি অলিম্পিকের আয়োজন নিয়েও মতবিনিময় করেন। আবে পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে ‘পূর্ণাঙ্গ’ অলিম্পিকের আয়োজনকে সমর্থন করতে জি-৭–এর নেতারা সম্মত হয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ অলিম্পিক বলতে তিনি কী বোঝাতে চাইছেন, তার কোনো ব্যাখ্যা প্রধানমন্ত্রী দেননি। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘মানবসমাজ যে নতুন করোনাভাইরাসকে পরাভূত করতে সক্ষম, তা প্রমাণ করার জন্য অলিম্পিকের পূর্ণাঙ্গ আয়োজনের লক্ষ্য আমরা ধরে নিতে চাই এবং সে জন্য নিজেদের সাধ্যমতো সব রকম প্রস্তুতি আমরা নিয়ে চলেছি।’

জাপান সরকার অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে আশাবাদী। ছবি: রয়টার্স

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা পর অলিম্পিকমন্ত্রী সেইকো হাশিমোতো সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হন। তিনি বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ’ বলতে প্রধানমন্ত্রী যা বোঝাতে চাইছেন, তা হলো নির্ধারিত সময়ে এবং দর্শকদের উপস্থিতিতে অলিম্পিকের আয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জাপানের মন্ত্রিসভার সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য, চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সুগাও বলেছেন, জাপান সরকার আইওসি এবং টোকিও অলিম্পিকের আয়োজক কমিটির সঙ্গে মিলে সব রকম প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছে।

জাপান সরকার অলিম্পিকের আয়োজন নিয়ে এতটা আশাবাদী থাকা সত্ত্বেও দেশের মানুষ কিন্তু অলিম্পিকের আয়োজন নিয়ে সংশয়মুক্ত হতে পারছে না। চলতি সপ্তাহে চালানো দুটি জরিপের ফলাফল সে রকম সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রভাবশালী দৈনিক আশাহি শিম্বুনের জাপানজুড়ে চালানো জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ৬৩ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করছেন, অলিম্পিক স্থগিত ঘোষণা করা উচিত। অন্যদিকে ২৩ শতাংশ বলেছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী অলিম্পিকের আয়োজন তাঁরা দেখতে চান। পাশাপাশি বার্তা সংস্থা কিওদো নিউজের জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, প্রায় ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন না পরিকল্পনা অনুযায়ী অলিম্পিকের আয়োজন করা টোকিওর পক্ষে সম্ভব হবে।

জাপান সরকার ও দেশের ব্যবসায়ী মহল অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অলিম্পিকের আয়োজনকে দেখে থাকলেও নাগরিক সমাজ বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছে। ফলে দুই পক্ষের মতামতে বিশাল পার্থক্য ফুটে উঠছে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিও মনে হয় বিভ্রান্তির চক্র থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। জাপান সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তারাও নির্ধারিত সময়ে অলিম্পিক অনুষ্ঠানের কথা এখন পর্যন্ত বলে আসছে। তবে আগামী এক-দু মাসের মধ্যে করোনা-পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তার ওপর নির্ভর করছে টোকিও অলিম্পিকের ভাগ্য।

জাপানের মানুষ অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে সংশয়মুক্ত হতে পারছে না। ছবি: রয়টার্স

এদিকে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব জাপানের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। জাপানের বেসরকারি রেসোনা গবেষণা ইনস্টিটিউট পূর্বাভাস দিয়েছে যে দেশে পর্যটক আগমনে ধস নামায় সংশ্লিষ্ট খাতগুলো ইতিমধ্যে গভীর সংকটে পড়েছে। এই অবস্থা জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে, বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের ব্যয়ের দিকে থেকে হোটেল ব্যবসা, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট এবং ভ্রমণ কোম্পানির আয় সামগ্রিকভাবে প্রায় ৯০০ কোটি ডলার কমবে। সে রকম অবস্থায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের অনেক কোম্পানির দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। ঝুঁকির মুখে পড়া সে রকম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করার জন্য জাপান সরকার সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার মতো থোক কিছু পরিকল্পনা ইতিমধ্যে হাতে নিয়েছে। কিন্তু সেসব পরিকল্পনা কতটা সহায়ক হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। কেননা, কেবল বিদেশি পর্যটকই নয়, জাপানের নাগরিকেরাও বাইরে বের হওয়া কমিয়ে দেওয়ায় অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাত ও রেস্তোরাঁ ব্যবসা আরও সংকটে পড়েছে।

পাশাপাশি জাপানে এখন চেরি ফুল ফোটার মৌসুম শুরু হওয়ার মুখে চেরি ফুলের শোভা দেখার নানা রকম আয়োজন বন্ধ থাকায় এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসাকেও ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। ফলে জনজীবন একেবারে পঙ্গু না হয়ে পড়লেও করোনাভাইরাসের বিস্তার যে উন্নত এই দেশটির ওপর নানাদিক থেকে আঘাত হেনে চলেছে, তা দৃশ্যত স্পষ্ট।