Thank you for trying Sticky AMP!!

আগ্রাসী পদক্ষেপেই সফলতা

>
চীন ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকংও এখন পর্যন্ত বেশ সফলতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করে যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইউরোপের দেশগুলোতে সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

চীনের উহান থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখের বেশি মানুষ। মৃত্যু আট 

হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি চীনেই। সেই চীনই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নাটকীয়ভাবে কমিয়ে এনেছে। চীন ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকংও এখন পর্যন্ত বেশ সফলতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করে যাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, জরুরি ভিত্তিতে এবং আগ্রাসী পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে ওই দেশগুলো করোনা মোকাবিলায় সফলতা পেয়েছে। এই দেশগুলোর মতো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইউরোপের দেশগুলোতে সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানতে পারে, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে মানুষ অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। সপ্তাহখানেক পর প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরপর ক্রমেই সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেমস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তথ্যমতে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত চীনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮১ হাজার ১০২। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৬৯ হাজার ৭৫৫ জন। মারা গেছে ৩ হাজার ২৪১ জন। গত মঙ্গলবার দেশটিতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৩ জন। মারা গেছে ১১ জন। 

চীনের কর্তৃপক্ষ করোনা মোকাবিলায় পুরো হুবেই প্রদেশ অবরুদ্ধ করে। ছয় দিনে নির্মাণ করা হয় এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল। দ্রুততর সময়ে নির্মাণ করা হয় আরও ১৫টি হাসপাতাল। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুসারে, ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এই অবরুদ্ধকালীন উহানে কোনো ট্রেন থামেনি। যে ব্যক্তিরই সন্দেহ হয়েছে, তিনিই চীনের যেকোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে বিনা মূল্যে করোনার পরীক্ষা করাতে পেরেছেন। ২০০২ সালে সার্স–করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকেই চীন জনস্বাস্থ্য কৌশলে রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করার প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে। এবার সেই প্রযুক্তি ভালোভাবেই কাজে দিয়েছে। এতে খুব দ্রুত রোগী ও তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে কোয়ারেন্টিন করা গেছে।

রোগীর চাপ বাড়ার পর চীনা কর্তৃপক্ষ জরুরি নয় এমন চিকিৎসাসেবা স্থগিত রেখে শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসা জোরদার করেছে। জরুরি নয় এমন চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে অনলাইনে। কোয়ারেন্টিনের সময়ে অনলাইনে অর্ডারের ভিত্তিতে বাড়ি বাড়ি যথাসময়ে খাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। চীনের জনগণও সরকারকে করোনা মোকাবিলায় সার্বিক সহযোগিতা করেছে।

তবে চীনের পথে হাঁটেনি দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা হংকং। সিঙ্গাপুরভিত্তিক চ্যানেল নিউজ এশিয়ার এক খবরে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়া রোগী ও রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করার কৌশল নিয়েছে। তারা ব্যাপক হারে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। এই কাজ করতে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য ফোন বুথের মতো পরীক্ষা বুথ তৈরি করা হয়েছে। এভাবে ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করে রোগী ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের আলাদা করার মাধ্যমে দেশটি সফল হয়েছে। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৪১৩ জন। মারা গেছে ৮৪ জন। সুস্থ হয়েছে ১ হাজার ৫৪০ জন।

সিঙ্গাপুরের চিকিৎসাকর্মীরা রোগী পাওয়ামাত্র প্রথমেই কিছু তথ্য নিচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, তারা বিদেশ সফর করেছে কি না, শেষ কয়েক দিন তাদের অবস্থান কোথায় ছিল, সড়কে থুতু ফেলেছে কি না, তাদের বন্ধু ও আত্মীয়–পরিজন কারা, কোনো প্রার্থনা কিংবা উৎসবে যোগ দিয়েছিল কি না। এসব তথ্যের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন রোগীদের শনাক্ত করছে নগররাষ্ট্রটি। এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের পরিচালক ভারনন লি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ‘আমরা ভাইরাসের সংক্রমণের চেয়ে এক–দুই ধাপ এগিয়ে থাকতে চাই। আপনি যদি ভাইরাসের পেছনে ছোটেন, তাহলে সব সময় পিছিয়েই থাকবেন।’ সিঙ্গাপুরে এ পর্যন্ত সংক্রমিত ৩১৩ জনের মধ্যে ১১৪ জনই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। কেউ মারা যায়নি সেখানে।

হংকংয়েও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যক্তিগত সচেতনতা। চীনের মূল ভূখণ্ডের পার্শ্ববর্তী এলাকা হওয়া সত্ত্বেও হংকংয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এ পর্যন্ত ১৮১ জন। মারা গেছে ৪ জন। সুস্থ হয়েছে ৯২ জন।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবার আগে সতর্ক হয়েছে তাইওয়ান। গত ডিসেম্বরে বেইজিং করোনার সংক্রমণের কথা স্বীকার করার আগেই চীন থেকে সেখানে যাওয়া ব্যক্তিদের পরীক্ষা শুরু করে কর্তৃপক্ষ। জানুয়ারিতে চীনের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ভূখণ্ডটি। গতকাল পর্যন্ত তাইওয়ানে রোগীর সংখ্যা ছিল ১০০। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছে ২০ জন, মারা গেছে ১ জন।