Thank you for trying Sticky AMP!!

আফগানিস্তানে ভূমিকম্প: পাকতিকা প্রদেশেই প্রায় হাজার মানুষের মৃত্যু

আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক বাড়িঘর ও স্থাপনা। বুধবার পাকতিকা প্রদেশের গায়ান জেলার একটি গ্রামে।

নানা সংকটে জর্জরিত আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে এ ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত দেড় হাজারের বেশি মানুষ। দেশটির পাকতিকা প্রদেশেই নিহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আল-জাজিরা, এএফপি ও রয়টার্স।

ভূমিকম্প প্রত্যন্ত এলাকায় আঘাত হানার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই হতাহতের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে নতুন ক্ষমতায় আসা তালেবান সরকার।

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত প্রদেশজুড়ে বুধবার ভোরে ওই ভূমিকম্প হয়। এএফপি জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৯। তবে রয়টার্স এ মাত্রা ৬ দশমিক ১ বলে উল্লেখ করে।
খোস্ত প্রদেশের রাজধানী শহর খোস্ত থেকে আনুমানিক ৪৪ কিলোমিটার দূরে ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। জায়গাটি পাকিস্তানের সীমান্তসংলগ্ন। ভূমিকম্পে কাবুল-ইসলামাবাদসহ আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতের ৫০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা কেঁপে ওঠে।

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের বরাতে আল-জাজিরা জানায়, ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। আহতের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। পাকতিকা প্রদেশের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আমিন হুজাইফা বলেন, এ প্রদেশেই নিহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের সময় ব্যাপকভাবে ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছে। এতে বিস্তৃত এলাকার বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে লোকজন আটকে আছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। দূরবর্তী পাহাড়ি এলাকাগুলো থেকে বিস্তারিত তথ্য পেলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আফগান সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি-ভিডিওতে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হওয়া বাড়িঘর এবং স্ট্রেচারে আহত ব্যক্তিদের নিয়ে স্থানীয় মানুষকে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। উদ্ধারকাজে হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে তালেবান সরকার। ছবি ও ভিডিওতে আহত অনেককে সামরিক হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।

এদিকে ভূমিকম্পের পরপরই পরিস্থিতি সামাল দিতে কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। তালেবান সরকারের উপমুখপাত্র বিলাল কারিমি টুইটে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ চালিয়ে যেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সরকার।
আফগানিস্তানের পশ্চিমা সহায়তাপুষ্ট আশরাফ গনি সরকারকে হটিয়ে গত আগস্টে ক্ষমতায় আসে তালেবান। পরে সরকার গঠন করে তারা। রাজনৈতিক সংঘাত, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, খরাসহ বিভিন্ন কারণে এর আগে-পরে থেকেই আফগানবাসী চরম মানবিক সংকট মোকাবিলা করছেন। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বাড়তি যোগ হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা। সংকট মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে আফগানদের শত কোটি ডলার সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এরই মধ্যে প্রাণঘাতী এই ভূমিকম্প আঘাত হানল। এতে মানবিক সংকট আরও প্রকট হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশঙ্কা।

বুধবারের ভূমিকম্পের পর জ্যেষ্ঠ তালেবান কর্মকর্তা আনাস হাক্কানি টুইটে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার তার সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আশা করছি, এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দাতা সংস্থাগুলো সহায়তা নিয়ে আফগানদের পাশে থাকবে।’

তালেবানের আহ্বানে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গতকাল বেইজিংয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানান, বন্ধু দেশ আফগানিস্তানের এমন বিপদের সময়ে প্রয়োজনীয় জরুরি মানবিক সহায়তা নিয়ে পাশে থাকবে চীন।

জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। আফগানিস্তানে জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানেটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ইউএনওসিএইচএ) টুইটে জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত সহায়তা দল পাঠানো হচ্ছে। অন্যদিকে আফগানিস্তানে ইইউর বিশেষ দূত থমাস নিকলাসসন টুইটে বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ইইউ। জোটের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত আফগানদের সহায়তা পৌঁছে দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

২০০২ সালের পর আফগানিস্তানে এটাই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প। ওই বছর ২৫ মার্চ দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় বাঘলান প্রদেশে ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৪০০ জনের প্রাণ যায়।

সাহায্য করবে যুক্তরাষ্ট্র

এদিকে আন্তর্জাতিক মহলকে সাড়া দিতে বললেও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সরাসরি সাহায্য চায়নি তালেবান সরকার। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, বুধবারের ভূমিকম্পের পর তালেবান সরকার কোনো সাহায্য চেয়েছে কি না, এ সম্পর্কে এই দপ্তর কিছু জানে না।

তবে তালেবানের কাছ থেকে কোনো সাহায্য না পেলেও ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানিয়েছেন, সাহায্যের বিষয়টি নিয়ে তালেবান ও মার্কিন সরকারের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
এদিকে মার্কিন সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, আফগানিস্তানকে কীভাবে সহযোগিতা করা যেতে পারে সেই ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করতে ইউএসএআইডিসহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।