Thank you for trying Sticky AMP!!

আরও বিলম্বিত হতে পারে টোকিও অলিম্পিক

২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিক এক বছর পিছিয়ে দিয়ে ২০২১ সালে অনুষ্ঠানের বিষয়ে সম্মত হয়েছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ও জাপানের আয়োজক কমিটি। একই সাথে জাপান সরকার এবং টোকিও মেট্রোপলিটন প্রশাসনও অলিম্পিক পেছানোর এই সিদ্ধান্তে সম্মতি জানিয়েছে। তবে জাপানের চিকিৎসক সমিতির সভাপতি বলছেন তিনি মনে করেন না ২০২১ সালে অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন সম্ভব হবে।
সমিতির সভাপতি ইয়োশিতাকে ইয়োকোকুরা গতকাল জাপানের প্রভাবশালী দৈনিক আসাহি শিম্বুনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার করা না গেলে ক্রীড়াবিদ এবং আয়োজক কারও পক্ষেই দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে অলিম্পিকের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়া সম্ভব হবে না। পাশাপাশি রোগের চিকিৎসার ওষুধ আবিষ্কারের বেলাতেও পদক্ষেপ তরান্বিত করা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে জাপানের চিকিৎসক সমিতির প্রধান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দেয়ায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছেন, ভাইরাস সনাক্তের পরীক্ষা আরও সম্প্রসারিত করে নেয়া উচিৎ। সংক্রমণের পথ খুঁজে বের করে এর বিস্তারের সবগুলো পথ বন্ধ করে দিতে হলে যত বেশি সম্ভব লোকজনের উপর পরীক্ষা চালিয়ে ইতিবাচক প্রমাণিত হওয়াদের রোগীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার সুপারিশ তিনি করেন।

অন্যদিকে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনাভাইরাস সামাল দেয়ার বিশেষজ্ঞ দলের একজন সদস্য, হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিরোশি নিশিউরা গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন তিনি মনে করেন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চললেও জাপানের রাজধানীতে করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার গতি ধীর হয়ে এসেছে। বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে না যাওয়ায় জাপান সরকার, বিশেষ করে টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকের উপর্যুপরি জানানো আহ্বানের কারণে এটা হয়েছে বলে তিনি করেন। তবে অধ্যাপক নিশিউরা বলেছেন আজ শনিবার থেকে শুরু হওয়া গোল্ডেন উইকের ছুটির সময়ে লোকজন বাইরে না যাওয়ার আহ্বানে কতটা সারা দেয় তার উপর নির্ভর করবে করোনাভাইরাস সনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যায় লক্ষণীয় হওয়া ধীর গতি দীর্ঘ সময় ধরে বজায় থাকবে কিনা।

ভুতুড়ে জাহাজ ও গোল্ডেন উইক

জাপানের নাগাসাকি বন্দরে হঠাৎ চোখে পড়া একটি প্রমোদ তরীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সনাক্ত সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ এখন ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ইতালির প্রমোদ তরী কোস্টা আটলান্টিকার জাপান আগমন অবশ্য হঠাৎ নয়। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিক থেকে নাগাসাকির একটি শিপইয়ার্ডে নোঙর করা থাকলেও এতদিন সেদিকে কারও নজর পড়েনি। জাহাজে কোন যাত্রী না থাকলেও ৬২৩জন ক্রু এতে রয়েছেন। মেরামত কাজের জন্য চীনের একটি বন্দরে জাহাজের যাওয়ার কথা ছিল। তবে চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মুখে গতিপথ ঘুরিয়ে জাপানের দিকে যাত্রা করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাইলে জাপানের কর্তৃপক্ষ মেরামত কাজের জন্য নাগাসিকেতে অবস্থিত মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের শিপইয়ার্ডে আসার অনুমতি জাহাজটিকে দেয়। সেই থেকে সেখানেই এটি নোঙর করা থাকলেও জাহাজের ক্রদের জাহাজ ছেড়ে অবতরণের অনুমতি দেয়া হয় নি।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে জাহাজের ক্রুদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর প্রচারিত হওয়ার পর নাগাসাকির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নাবিকদের সকলের উপর ভাইরাস সনাক্তের পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরীক্ষার শেষে প্রায় ১৫০ জনের বেলায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। তবে একজন ছাড়া অন্য সকলের মধ্যে দেখা উপসর্গ হালকা ধরণের হওয়ায় জাহাজে অবস্থান করে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ এদের দেয়া হয়েছে। জাহাজটি নোঙর করা অবস্থায় থাকলেও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় নাগাসাকিবাসীরা ভুতুড়ে সেই জাহাজ থেকে যতটা সম্ভব দূরে সরে থাকছেন।

এদিকে গোল্ডেন উইকের ছুটির শুরুতে জাপানের সব কয়টি গন্তব্যে যাওয়া শিনকানসেন বুলেট ট্রেন আজ প্রায় ফাঁকা যাতায়াত করেছে। টোকিওর হানেদা বিমান বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করা বিমানের অবস্থাও ছিল একই রকম। এক্সপ্রেসওয়ে মহাসড়কেও যানবাহনের ভিড় তেমন দেখা যায় নি। গোল্ডেন উইকের ছুটি সাধারণত জাপানে হচ্ছে রাজধানী ও বড় শহর খালি করে দিয়ে দেশের অন্যত্র লোকজনের চলে যাওয়ার সময়। ফলে এই সময়ে রেলে, বিমান ও সড়কপথে প্রচণ্ড ভিড় হচ্ছে স্বাভাবিক ঘটনা। তবে করোনাভাইরাস অন্য অনেক কিছুর মতই জাপানের এই হিসাবও পাল্টে দিয়েছে।

এবারের গোল্ডেন উইকের ছুটি আগামী বুধবার থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সরকারের জানানো আহ্বানে সারা দিয়ে অধিকাংশ বেসরকারি কোম্পানি আজ শনিবার থেকে অফিস ছুটি দিয়েছে। ফলে জাপানের কর্মজীবীরা আজ থেকে শুরু করে টানা ১২ দিনের ছুটি পাচ্ছেন। তবে জরুরী অবস্থা এবং নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখায় সরকারের জানানো আহ্বানের মুখে এবারের ছুটির পুরোটাই অনেকে বাড়িতে বসে কাটাবেন।